Home / শিল্প-সাহিত্য / ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস : অবহেলা নয়, পরিচর্যা চাই
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস : অবহেলা নয়, পরিচর্যা চাই
ফাইল ছবি।

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস : অবহেলা নয়, পরিচর্যা চাই

৮ মার্চ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিবসট নারীদের জন্যে এক বিশাল প্রাপ্তি। এই দিনটি নারীদের মতামত প্রকাশ করার দিন। ইচ্ছে পূরণের দিন, অধিকার আদায়ের দিন। তাই আজকের এই নারী দিবসে আমি সমস্ত অবহেলিত নারীদের হয়ে কিছু কথা বলতে চাই-

মেয়েরা জন্মগতভাবে অবহেলিত। জন্মের পর মেয়েরা যখন বাবার বাড়িতে বসত করে তখন বাবা-মা তাদের ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে সব সময় একটা পার্থক্যের দেয়াল তৈরি করে রাখে। মেয়েদের বেড়ে উঠতে হয় বাবা আর ভাইয়ের কঠিন শাসনের মধ্য দিয়ে। পরিবারে সর্বদা ছেলেদেরই প্রাধান্য দেওয়া হয়, মেয়েদের নয়। তারপর একটি পরিণত বয়সে মেয়েরা বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি চলে যায়। সেইখানে আবার শ্বশুর আর স্বামীর আধিপত্য। বলা হয়, পতি সেবা মেয়েদের পরম ধর্ম। তারা শুধু ঘর গুছাবে, রান্না করবে, সকলকে কীভাবে ভালো রাখা যায় তা নিয়ে ভাববে। কিন্তু তাদের কোনো মত- অভিমত থাকতে পারবে না। তারপর মেয়েরা যখন মা হয় তখন মায়ের সমস্ত চিন্ত সন্তানকে ঘিরে। কিন্তু সন্তান মাকে কতটা গ্রাহ্য করে মেয়েদের বিয়ের আগে বাবা আর ভাইকে এবং বিয়ের পরে শ্বশুর,স্বামী আর ছেয়েকে অনুসরণ করে চলতে হয়। তাদের সারাটা জীবন অনাদরেই কেটে যায়। এই যে এতো লম্বা একটা জীবন, এর মধ্যে মেয়েদের প্রকৃত জীবন কোনটা? মেয়েরা সাড়া জীবন প্রদীপের শিখা হয়ে নিজেকে পুড়িয়ে সকলকে আলো দিয়ে যায়। কিন্তু বিলিয়ে মেয়েরা কী পায় শুধুমাত্র অনাদর, অবহেলা, অত্যাচারই কী মেয়েদের প্রাপ্য। কেনো আজকের দিনে দাড়িয়ে ও মেয়েদের বলতে হয় আমাদের কোনো স্বাধীনতা নাই, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আমরা এখনো পুরুষদের পদদলিত।

কবি নজরুল বলেছিলেন-
বিশ্বে যা – কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছেন নারী, অর্ধেক তার নর।

আর বেগম রোকেয়া বলেছিলেন, নারী হলো পুরুষের অর্ধাঙ্গী।

তবে আপসোস, আজও এ সকল মহান মনিষীদের কথাগুলো আমাদের সমাজের সর্বস্তরের মেয়েদের জন্য প্রযোজ্য হয়ে উঠেনি। কারণ মেয়েদের ঐ রকম কোলে সুযোগই দেয়া হয় না। মেয়েরা যখনই কোলে কিছু করার কথা বলে বা ভাবে তখনই তাদের নানা রকম সামাজিক সমস্যা আর ধর্মীয় অনুশাসনের কতা বলে বাকরুদ্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু কেনো? আমরা সামাজিক জীবন। সামাজের কিছু নিয়ম-কানুন আছে আর আমাদের সেগুলো মেনে চলতে হয়, তাই? তবে আমরা এটা কেলো বলি না, আমরা যে সমাজে বসবাস করি সে সমাজের মূল উপাদানই আমরা, ‘মানুষ’। আর সামাজের নিয়ম-কানুনগুলো ও আমাদেরই সৃষ্টি। আর ধর্মের কথা যদি বলি, ধর্ম তো কখনো মেয়েদের বন্দী জীবন-যাপনের কথা বলেনি। বলেনি মেয়েদের বাহিরে যাওয়া নিষেধ। তবে বলেছে পর্দা আর শালীনতা বজায় রাখার কথা। তবুও কী মেয়েরা নিজেকে তৈরি করার।

নিজেকে প্রমান করার ছোট্ট একটা সুযোগও পেতে পারে না। বেগম রোকেয়া থেকে সুফিয়া কামাল আর সেই থেকে এখনো পর্যন্ত নারীর সমঅধিকার ও নারী মুক্তির কথা জোর গলায় বলা হচেছ, কিন্তু নারীর অবস্থার প্রত্যাশিত পরিবর্তন হচ্ছে না। আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস এখনো সভা, সেমিনারের মধ্যেই সমাবদ্ধ। বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নাই। তবুও আজ বলতে চাই- মেয়েরাও মানুষ। মেয়েরাও চায় সুন্দরভাবে বাঁচতে, সকলকে ভালোবাসতে, সকলের ভালোবাসা পেতে।

সকল বাবা, ভাই, স্বামী আর ছেলেদের কাছে অনুরোধ মেয়ে বলে অবহেলা অনাদর নয়, একটু পরিচর্যা চাই। চাই ¯েœহ, মমতা আর ভালোবাসার হাত।

লেখক পরিচিত– মরিয়ম আক্তার, সম্মান ১ম বর্ষ, অর্থনীতি বিভাগ, চাঁদপুর সরকারি কলেজ।

|| আপডেট: ০৮:২০ অপরাহ্ন, ০৭ মার্চ ২০১৬, সোমবার

এমআরআর