Home / তথ্য প্রযুক্তি / হ্যাকের তথ্য ফাঁসকারী জোহা গুম নাকি গ্রেফতার? (ভিডিও রেকর্ডসহ)
হ্যাকের তথ্য ফাঁসকারী জোহা গুম নাকি গ্রেফতার? (ভিডিও রেকর্ডসহ)

হ্যাকের তথ্য ফাঁসকারী জোহা গুম নাকি গ্রেফতার? (ভিডিও রেকর্ডসহ)

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ একাউন্ট থেকে ৮০০ কোটি টাকা চুরির বিষয়ে তদন্তে সংশ্লিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে নিখোঁজ রয়েছেন।

তবে বৃহস্পতিবার বিকেলে ফার্মগেটের কৃষি খামার বাড়ির এক অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনায় নিখোঁজ আইটি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হতে পারেন। জানা গেছে, বুধবার দিনগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করা হয় বলে দাবি করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

এ ব্যাপারে জিডি করতে থানায় থানায় ঘুরে ব্যর্থ হয়ে বাসায় বসে আছেন তারা। জোহার পরিচিতরা জানান, বুধবার অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় রাত ১২টার দিকে স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা হয় তার। এর আগে দুইদিন তিনি বাসায় ফেরেননি। অফিস থেকে বের হওয়ার পর সিএনজিতে ওঠেন জোহা। কচুক্ষেত এলাকায় দুই-তিনটি গাড়ি তার সিএনজিকে ঘিরে ধরে। এরপরই অপহৃত হন তিনি।

এ ব্যাপারে জোহার চাচা বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক উপমহাপরিচালক মাহবুবুল আলম জানান, বুধবার রাতে বাসায় ফেরার সময় জোহার সঙ্গে তার বন্ধু ছিলেন ইয়ামির আহমেদ। তিনিই ফোন করে জোহার অপহরণের ঘটনা জানান তার পরিবারকে।

তিনি আরো জানান, খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশকে জানাতে তারা কলাবাগান থানায় যান। পুলিশ জানায়, অপহরণের এলাকা কাফরুল থানা এলাকায়। সেখানে গেলে কাফরুল থানা পুলিশ তাদের ক্যান্টনমেন্ট থানায় পাঠায়। সেখান থেকে পুলিশ আবার তাদের পাঠায় ভাসানটেক থানায়। তবে ভাসানটেক থানা পুলিশও দাবি করে এই ঘটনাস্থল তাদের এলাকায় পড়ে না। হতাশ হয়ে জোহার স্বজনরা বাসায় ফিরে আসতে বাধ্য হন।

এদিকে কাফরুল থানার ডিউডি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে মাহবুবুল আলম নামের এক ব্যক্তি এসে জানান তার আত্মীয় জোহা গতকাল রাতে নিখোঁজ হয়েছেন। কাফরুল থানার ওসি শিকদার মোহাম্মদ শামীম হোসেন বলেন, “মাহবুবুল আলমের অভিযোগ পেয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি ঘটনাস্থল ভাসানটেক থানার মধ্যে পড়েছে। পরে তাকে ভাসানটেক থানায় পাঠিয়ে দেই।” পরে ভাসানটেক থানায় যোগাযোগ করলে তারা জানায়, তাদের এলাকায় এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে জানা নেই।

বৃহস্পতিবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অর্গানাইজড ক্রাইম) মির্জা আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত ছিলাম না। মিডিয়ার মাধ্যমেই জানলাম। তবে এইটুকু বলতে পারি যে, সিআইডি এখনো এ ঘটনায় (বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি) কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেনি।’ তিনি বলেন, ‘সিআইডি এখন শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাক অফিসের দূর্বলতা এবং কর্মকর্তাদের গতিবিধি নজরদদারী করছে। কাউকে যদি সন্দেহভাজন মনে হয় সে ক্ষেত্রে তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

সিআইডির এ কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলাটি অফিসিয়াল সিস্টেমে আমরা তদন্ত করছি। তবে আনঅফিসিয়াললি র‌্যাব ঘটনাটির ছায়া তদন্ত করছে। তাছাড়াও বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অর্থ চুরির তদন্তে নেমেছে।’ পরে র‌্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক এ এসপি মিজানের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনিও জোহা নিখোঁজের বিষয়ে অবগত নন বলে জানান।

এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) গণমাধ্যম শাখার ডিসি মারুফ হোসেন সর্দার বলেন, ‘বাংলাদশে ব্যাংকের অর্থচুরির মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। তাই এখানে আমদের সম্পৃক্ততা খুবই কম। তাই জোহাকে তুলে আনার প্রশ্নই আসে না।’

প্রসঙ্গত, গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের ডেইলি ইনকোয়ারারের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির খবর প্রকাশিত হলে তোলপাড় পড়ে যায়। র‌্যাব বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা তদন্ত শুরু করলে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা। এর আগে তানভীর হাসান জোহা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের ডিরেক্টর (অপারেশন) ছিলেন। তবে এই প্রকল্পটি গত দুই মাস ধরে স্থগিত আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংককের টাকা হ্যাক হওয়ার পর তানভীর হাসান জোহা বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকেই হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। এখান থেকে এটা কিভাবে হলো এবং ইনফেকশনটা কোথা থেকে কিভাবে ঢুকল, সেটা খোঁজার চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনটি আইডি থেকে ফেক ট্রানজেকশনের ঘটনা ঘটেছে। এর ব্যবহারকারীরা নজরদারিতে আছেন বলে জেনেছি। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে এবং এখন অন্যান্য বিষয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে বলেও জানতে পারছি।’ তানভীর হাসান আরো বলেন, ‘যে তিনটি আইডি থেকে ট্রানজেকশন হয়েছে তা শনাক্ত করা গেছে। এই তিনটি আইডি বাংলাদেশ ব্যাংকের। এখন সেটা কখন, কিভাবে হয়েছে সে সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে এই তিনটি আইডির প্রোফাইল পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে।’

Zoha-02

অর্থমন্ত্রীর সাথে একটি অনুষ্ঠানে জোহা

গণমাধ্যমে জোহার বক্তব্য প্রচার হওয়ার পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তানভীর জোহার সঙ্গে সরকারের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। আইসিটি বিভাগ জানায়, তানভীর জোহা বিভিন্ন সময়ে মিডিয়ায় টকশো-আলোচনায় নিজেকে আইসিটি বিভাগের স্পেশালিস্ট দাবি করে রিজার্ভ চুরির বিষয়ে বিভিন্ন বক্তব্য প্রদান করছেন। তিনি গত বছরে শেষ হওয়া সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস প্রোগামে সংযুক্ত ছিলেন। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, তানভীর হাসান জোহা নামের কোনো ব্যক্তির সঙ্গে আইসিটি বিভাগের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই এবং আইসিটি বিভাগের সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্ট বা সাইবার সিকিউরিটি ফোকাল পয়েন্ট বা সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের ডিরেক্টর (অপারেশন) হিসেবেও কর্মরত নন।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে ফার্মগেটের কৃষি খামার বাড়ির এক অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনায় নিখোঁজ আইটি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হতে পারেন।

তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। জোহাকে যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও দল নিয়ে থাকে, তাহলে তাকে আদালতেই সোপর্দ করা হবে। তবে গ্রেফতারের বিষয়টি আমি নিশ্চিত নই।

সোমবার প্রিয়.কমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘তানভীর জোহা এখনও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর!”-এ তানভীর হাসান জোহার পরিচয় হিসবে লেখা হয় ইনসাইট বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির অফিসিয়াল সাইটে জোহার একটি সংক্ষিপ্ত প্রোফাইলের লিংকও প্রকাশ করা হয়। তবে গতরাত থেকে জোহা নিখোঁজ হওয়ার পর ইনসাইট বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সাইট থেকে জোহার প্রোফাইল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, নিখোঁজ হওয়ার ৩ দিন আগে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনকে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ জোহা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, রিজার্ভ চুরির নেপথ্য-তথ্য প্রকাশ করায় আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওই সাক্ষাৎকারে জোহা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে তদন্তকারীরা কেউ কথা বলেননি। আমি বলেছি। আমি আমার দায়িত্ব থেকেই বলেছি। এটা প্রকাশ করা প্রয়োজন।’ তিনি দাবি করেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি নিয়ে প্রকৃত তথ্য সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রকাশ করায় একটি মহল আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। তারা তদন্ত সহায়তা থেকে আমাকে সরিয়ে দিতে চাইছেন। কারণ, আমি অনেক বিষয়েই প্রশ্ন তুলছি।’

তানভির হাসান জোহা আরও বলেন, ‘আমি বিদেশি নাগরিকদের তদন্তে রাখা নিয়ে আপত্তি করেছি। কারণ, আমি মনে করি, হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি হোল (গর্ত) তৈরি করেছেন, আর এখন বিদেশি বিশেষজ্ঞদের হাতে তদন্তের নামে তথ্য তুলে দিলে আরও বড় হোল তৈরি হবে। আমি পুরো বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও জানাতে চাই।’ (সূত্র- বাংলা ট্রিবিউন, প্রিয়.কম)

তানভির হাসান জোহা’র পুরো সাক্ষাৎকার শুনুন..

নিউজ ডেস্ক:  আপডেট ০২:৫০ পিএম, ১৮ মার্চ ২০১৬, শুক্রবার

ডিএইচ