Home / উপজেলা সংবাদ / হাজীগঞ্জ / হাজীগঞ্জে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা
dhan gas

হাজীগঞ্জে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় একটি পৌরসভা ও বারটি ইউনিয়নের কৃষি মাঠে এ বছর প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।

যা চলতি বছরের শুরুতে কৃষকরা জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদ করেছে। বর্তমানে ফলন ঘরে তুলতে গিয়ে দুর্যোগপূর্ণ আবাহওয়ার মধ্যেও ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা।

হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৯ হাজর ৯শ ৪৫ হেক্টর জমিতে এবার ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিগত বছরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ইরি আবাদে বাম্পার ফলন হয়।

গত বছরের তুলনায় চলতি বছর প্রায় ৫০ হেক্টর জমি কম থাকলেও বাম্পার ফলনের আশাবাদি বলে জানায় কৃষি অধিদপ্তর।

কিন্তু খরচের তুলনায় ধানের ন্যায্য মূল্য না থাকার ফলে এবার কৃষকরা ইরি-বোরো আবাদে কম ঝুঁকে পড়তে দেখা যায়। তার পরেও শেষ দিকে এসে আলু,সরিশারমত রবি শষ্যের ফলন উঠার পর কৃষকরা জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করেছে।

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর চৈত্রের শেষ দিক থেকে শুরু করে বর্তমানে বাংলা নতুন বছরে পুরো ধমে এখানকার কৃষক-কৃষাণীসহ তাদের সন্তানরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ধান কাটা থেকে শুরু করে ধান মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করে আসছে। কেউ জমিতে খলা বানিয়ে, কেউবা বাড়ির আঙ্গিনা বা উঠানে খলা বানিয়ে সেখানে ধানের ঘের তৈরি করে মেশিন ও মটকার (মাটির বড় হাঁড়ি) উপর ধান ঝরিয়ে সংগ্রহ করতে দেখা যায়। বিশেষ করে এ বছর বৃষ্টি আর ঝড়ের ত্রীবতা দেখে অনেকে আগ থেকেই ধান কাটা শুরু করে দিয়েছে। অনেক কৃষকের ঘরে চাউল না থাকায় দেখা যায় নতুন ধান পেয়ে ভাঁপার কাজও শুরু করেছে। ধান কাটা থেকে শুরু করে খড়ের স্তপ পর্যন্ত যেসকল শ্রমিক প্রয়োজন সে তুলনায় সংকট দেখা দেওয়ায় উত্তর বঙ্গ থেকে কিছু মৌসুমী শ্রমিকও কাজ করতে দেখা যায়।

কিন্তু গত কয়েক দিনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া দেখে এখানকার কৃষকের দুশ্চিন্তা ও ব্যস্ততা বেড়ে গেছে।

চলমান আবহাওয়া লেগে থাকলে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে বলে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের আশংকা রয়েছে।

উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নের বেশ কিছু মাঠের কৃষকরা জমিতে ধান কেটে ফেলে রেখেছে। বৃষ্টির কারণে গত দুই দিন ধরে জমিতে পড়ে আছে। আবার অনেকে ধানের ঝাঁক দিয়ে রেখেছে কিন্তু বৃষ্টির কারণে ধান ঘরে উত্তোলন করতে পারছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার উত্তর অঞ্চলের তুলনায় বেশি হুমকির মধ্যে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি মাঠগুলো। ধান জমিতে ফেকে রয়েছে যা একটু ঝড় আহওয়ায় ঝরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় কৃষকরা। তাদের এ দুর্ভোগ ও চিন্তায় মাথায় হাত ছাড়া আর বিকল্প কিছু বলতে পারছে না। তার পরেও তাদের কাজের গতি থেমে নেই। সুযোগ ফেলেই ধান কাটা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তে দেখা যায়।

এদিকে উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা জানুয়ারি ও ফেব্রয়ারি মাসে বর্ষার ও সেচ পানিতে ইরি-বোরো চাষাবাদের জন্য স্থানীয়ভাবে কাজ করতে দেখা যায়। বর্ষার পানি নেমে গেলে জমে থাকা কচুরি পানাসহ নানা আবর্জনা পরিস্কার করে স্তুপ করে রাখে। যা পরবর্তীতে এসব স্তুপ শুকানোর পর আগুন জ্বালিয়ে চাই তৈরি করে হাল দেওয়ার পর জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। যার ফলে ধানের ফলন ভালো হয় বলে কৃষকরা জানায়।

এদিকে গত কয়েক যুগ ধরে উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ মাঠে দু’ধরণের ফসল উৎপাদন হয়ে আসছে।

উত্তর মাঠে দেখা যায় বর্ষার সময় আউশ ধানের ফলনসহ খড়া মৌসুমে ইরি ধানের ফলনও উৎপাদন করছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। আর দক্ষিণাঞ্চলের মাঠগুলো নিচু হত্তয়ার কারণে ও একাধিক ব্রিক ফিল্ড গড়ে উঠায় শুধুমাত্র খরা মৌসুমে ইরি-বোরো চাষাবাদ ছাড়া অন্য কোন ফসল উৎপাদন করতে দেখা যায় না।

কৃষি অফিস সৃত্রে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ছোট বড় দেড় শতাধিক কৃষি মাঠ রয়েছে। যা থেকে এ বছরেও ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় দশ হাজার মেট্রিক টন। তবে এ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গত কয়েক বছর ধরে সমান ভাবে থাকলেও চলতি বছর অনেক কৃষকই সার ও কৃটনাশক বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ইরি-বোরো চাষাবাদ না করে রবি শষ্য উৎপাদনে মনোনিবেশ হয়েছে বেশি। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় কৃষকরা চলমান চাষাবাদের খরচের সাথে ধান বিক্রয় কালে ন্যায্য মুল্য না পাওয়া। তাছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি মাঠগুলো থেকে একাধারে ইটভাটার মালিকরা মাটি উত্তোলনের কারনেও চাষাবাদে বেঘাত ঘটবে বলে জানা যায়।

এছাড়াও প্রাকৃতিকসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে দিন দিন ধান উৎপাদন কমে যাচ্ছে এ উপজেলায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মনি সূত্রধর চাঁদপুর টাইমসকে জানিয়েছেন, ‘চলতি মৌসুমে হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রায় ১০ হাজারেরও হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদ হয়েছে। সে লক্ষ্যে কৃষকরা জমি পরিচর্যার কাজ থেকে শুরু করে পোকা দমনে ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে ভাল ফলনের আশাবাদ রয়েছে। সে সাথে সরকারি বীজের প্রজেক্টগুলোতেও ভাল ফলন হয়েছে।

তিনি আরো জানান, ‘সরকারি প্রাপ্তি স্বাপেক্ষে আনুমানিক ৩০টি প্রদর্শনী হয়েছে । এই ৩০টি প্রজেক্টের মাধ্যমে আমরা পুরো উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে একেক টি ইউনিয়নে ২/৩টি করে প্রদর্শনীতে কাজ করেছি।’

প্রতিবেদক- জহিরুল ইসলাম জয়
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৯: ২৩ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০১৭, রোববার
ডিএইচ

Leave a Reply