Home / উপজেলা সংবাদ / হাইমচরে আকস্মিক জোয়ারে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী
হাইমচরে আকস্মিক জোয়ারে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী

হাইমচরে আকস্মিক জোয়ারে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী

বিএম ইসমাইল, হাইমচর (চাঁদপুর) | আপডেট: ০৮:৪৭ অপরাহ্ণ, ৩১ আগস্ট ২০১৫, সোমবার

পাহাড়ী ঢলের ফলে হঠাৎ করে মেঘনার ফুঁসে উঠা জোয়ারের পানিতে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ফলে ওই এলাকায় পানি বন্যার আকার ধারণ করায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

উপজেলার হাইমচর, গাজীপুর, নীলকমল ও চরভৈরবীসহ ৪টি ইউনিয়নের সমগ্র এলাকা বর্তমানে পানিবন্দী হয়ে আছে। এছাড়া উপজেলার আলগী উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ বহির্ভূত এলাকাও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জোয়ারের পানিতে মানুষজনের ঘরবাড়ি পানিবন্দী হয়ে আছে। গত এক সপ্তাহের জোয়ারের পানির ফলে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মের ব্যাপক ব্যঘাত ঘটছে, কৃষি, সবজি ও পান চাষের জন্য বিখ্যাত হাইমচরের চর এলাকা ও নদী তীরবর্তী এলাকা ফসলি জমি তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। আক্রান্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে পানিবন্দী এলাকায়।

হাইমচরের মধ্যচরে অবস্থিত নীলকমল ইউপি চেয়ারম্যান হাজী ইয়াসিন আহমেদ রতন জানান, নীলকমলের মিয়ার বাজার, মাঝির বাজার, বাংলাবাজার, ঈশানবাল বাজার এলাকাসহ সমগ্র এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এই পানিবন্দী অবস্থা আরও দু’একদিন স্থায়ী হলে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দেবে। এসকল এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিক্ষা ব্যবস্থার চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

হাইমচর-2

মধ্যচরের আরেক ইউনিয়ন হাইমচর ইউপি চেয়ারম্যান ইসহাক খোকন বলেন, হাইমচর ইউনিয়নটি জোয়ারের পানিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে জনচলাচল ও স্বাভাবিক কাজকর্ম স্থবির হয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি হাইমচর ইউনিয়নে ব্যাপক নদী ভাঙ্গনও দেখা দিয়েছে।

মধ্যচরের গাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন গাজী জানান, বন্যার পানিতে মানুষজন উঁচু কেল্লায় আশ্রয় নিয়েছে। মানুষজনের জন্য খাবার পানিসহ কর্মসংকট দেখা দিয়েছে।

উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিম অংশ ঈশান বালার ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান সরদার ও খলিল মাতাব্বর জানান জোয়ারের পানিতে বন্যা আকার ধারণ করেছে ঈশাণবালা এলাকায়। একদিকে মানুষ পানিবন্দী অন্যদিকে মেঘনা নদী ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। রাস্তা ঘাট, ব্রীজ, দোকানপাট, ঘর বাড়ি মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় চরভৈরবী ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন সরদার জানান, তার এলাকার আমতলী, টমটম ব্রীজ, চরভৈরবী নতুন বাজার, পুরাণবাজার এলাকা, গাজী নগর ও জালিয়ারচরসহ সব এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এখানকার মানুষজন স্বাভাবিক জীবন যাপনে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। স্কুল ও মাদরাসায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে আক্রান্ত এলাকায়।

হাইমচর বন্যা-3

হাইমচরে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকায় বন্যা আকার ধারণ করার বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ আমিনুর রশিদ বলেন, বিষয়টি আমরা সরেজমিনে দেখছি, ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তালিকা প্রেরণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুর হোসেন পাটওয়ারী বলেন, আকস্মিক পাহাড়ী ঢলের ফলে হাইমচরের ৪টি ইউনিয়নসহ বেড়িবাঁধ বাহির এলাকা জোয়ারের পানিতে ডুবে বন্যা আকার ধারণ করেছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি জানিয়েছেন। সোমবার উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বন্যা আক্রান্ত মানুষজনের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে সরকার ও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫