Home / ফিচার / হত্যার সংস্কৃতি ও বৈধ করার অপতৎপরতা
হত্যার সংস্কৃতি ও বৈধ করার অপতৎপরতা

হত্যার সংস্কৃতি ও বৈধ করার অপতৎপরতা

আমার দেশ। স্বাধীন সার্বভৌম লাল-সবুজ’র বাংলাদেশ। বিশাল জনসংখার আয়তনে ছোট এই দেশটিকে নিয়ে দেশী-বিদেশী নানান ধরনের ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য- এ দেশের মাটিতে জন্ম নেয়া, এ দেশেরই আলো বাতাসে বেড়ে উঠা এবং এ দেশেরই সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করা কিছু বিশ্বাস ঘাতক নরপশু বিদেশীদের সাথে আতাঁত করে ত্রিশ লাখ শহীদ আর দুই লাখ সম্ভ্রমহানী হওয়া নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অর্জন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে নষ্ট করতে নানান ধরনের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্বর পাকিস্তানীদের খুশী করার জন্যে ধর্ষণ, হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ সহকারে যত রকমের নির্যাতন আছে তার সবটুকু প্রয়োগ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়নি। আর এই বর্বর কর্মকান্ড বৈধ করার জন্য তারা বেছে নিয়েছে ইসলাম ধর্মকে। ইসলাম রক্ষার নামে, ইসলাম ফিরিয়ে আনার নামে, ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার নামে দেশী-বিদেশীদের কাছে মিথ্যাচার-অপপ্রচারের মাধ্যমে এ সব কর্মকান্ড বৈধ করার অপতৎপরতা চালিয়ে ছিল যা আজও অব্যাহত রেখেছে।

১৯৭৫ সালে জাতির জনক’কে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার পর একশ্রেণীর ব্যক্তি বিশেষ ও মহল পরিকল্পিত ভাবে বঙ্গবন্ধ’ুর পরিবারবর্গ এমনকি স্বয়ং শেখ মুজিবুর রহমানকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টায় নানান অপকৌশল বাস্তবায়ণের লক্ষ্যে কাজ করেছে যা তার পূর্ণতা লাভের আশায় ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করে।

নামে বাংলাদেশ বা লাল-সবুজ’র পতাকা ঠিক থাকলেও দীর্ঘদিন রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছে পাকিস্তানী ভাবধারায় এবং তৈরি হয় নানান কৌশল-অপকৌশল, পরিবর্তন করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।

সিরিজ বোমা হামলার আগেও বাংলা ভাই বা জেএমবি’র ভাইদের মিডিয়ার সৃষ্টি বলে তাদের সৃষ্ট কর্মকান্ড বৈধ করার লক্ষ্যে এবং এসব ভাইদেরকে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার একটি সুকৌশল ষড়যন্ত্র হাতে নিয়েছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের মিডিয়া ও জনগণ তাদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে একটা সময় সক্ষম হয়েছে।

৭৫’র ১৫ আগস্টে যা পারেনি তা বাস্তবায়ণের লক্ষ্যে ষড়যন্ত্রকারীরা ছক তৈরি করে ২১ শে আগস্টের। নিক্ষিপ্ত গ্রেনেডের বর্বরতার দৃশ্য দেশে পুরো বিশ্ব যেখানে উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত; সেখানে এই কর্মকান্ড, হত্যাযজ্ঞকে বৈধ করার জন্যে কখনো শেখ হাসিনার ব্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড আনার গল্প আবার কখনো জজ মিয়ার নাটক তৈরিতে ছিলো নানামুখী ষড়যন্ত্র।

রাজনৈতিক মাঠে দেখা গেছে মিথ্যাচার, অপপ্রচারের মাধ্যমে হত্যাকারীদের প্রতিষ্ঠিত করার দৃশ্যমান অপতৎপরতা।

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ২০১৩ সালের ফেব্র“য়ারীর ৫ তারিখের সুত্রে ৮ তারিখের মহাসমাবেশে শাহবাগে যে নব ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তৃতীয় বিশ্বের বাঙালি তরুণ প্রজন্ম, তা শুধু বাংলাদেশই নয়, অবাক দৃষ্টি নিয়ে অবলোকন করেছে পুরো বিশ্ব। রাজনীতিবিদরা নড়েচড়ে বসেছে আর ষড়যন্ত্রকারীদের মাথায় হাত!

সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিড়ে যখন ৭১ সালেও অর্জন করেছে স্বাধীনতা আর ১৩ সালে এসে দেখেছে- রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধী, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে পুরো জাতিকে ৩ মিনিটের নিরবতা, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন আর লাল-সবুজ’র পতাকা বাংলার ঘরে ঘরে কিভাবে পৌছে দিয়েছে। বেরিয়ে এসেছে অজানা অনেক তথ্য। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে নরপশুদের বর্বতার ইতিহাস, যুদ্ধাপরাধী কর্তৃক ধর্ষিত বাংলা মা’র আর্তনাদ যখন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে চলে যাওয়া শুরু করেছে, তখন আবার শুরু হয় নতুন করে ষড়যন্ত্র…

এখানেও ইসলাম! আস্তিক-নাস্তিকের ফতোয়া জারি। ইসলাম রক্ষার নামে নাস্তিকদের হত্যা করা জায়েজ’র বাণী। মেধাবীদের তালিকা তৈরি…. অতঃপর হত্যা!

সমসাময়িক ব্লগার-লেখক-প্রকাশক হত্যা, দেশের বিশিষ্ট জনের হত্যার লিষ্ট তৈরি করা। দেশের প্রকৃত আলেমদের হত্যার হুমকি এবং গলা কেটে হত্যার পর একটি মহল পরিকল্পিতভাবে সোস্যাল মিডিয়া সহ মাঠে-ময়দানে মগ্ন থাকে অপপ্রচারে।

হত্যার সংস্কৃতিকে বৈধ করার জন্য বার বার ব্যবহার করা হয় ধর্মকে। ‘ধর্মের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে তারা খুন হয়েছে’ এই শব্দাচ্চারণ প্রায় হাট-বাজার সহ চা দোকানেও শোনা যায়।

আর এটা যে শুধু একটি ধর্মকে কেন্দ্র করে তা কিন্তু নয়। বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার পর সোস্যাল মিডিয়া জুড়ে হিন্দু ধর্মের কতিপয় ব্যক্তি বিশেষের পোস্ট করা ছবি, বিতর্কিত স্ট্যাটাসগুলো আরও স্পষ্ট করে তোলে।

একটি হত্যার মধ্য দিয়ে আরেকটি হত্যার সংস্কৃতি গড়ে উঠে যদি কিনা ওই হত্যাকারীর সুষ্ঠ বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যর্থ হয় অথবা বিলম্বিত বিচারকাজের সুযোগ পায়।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে শুধু হত্যার সংস্কৃতিই গড়ে তোলা হয়নি, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’র মাধ্যমে পরিকল্পিত ভাবে বিচারহীনতার সংস্কৃতিও একটা সময় প্রতিষ্ঠিত করার অপতৎপরতা চালিয়েছে কতিপয় ব্যক্তি ও রাজনৈতিক সংগঠন।

হত্যার সংস্কৃতি ও হত্যাকে বৈধ করার অপতৎপরতা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

মাঝে মাঝে অবাক চিত্তে তাকিয়ে ভাবি, যে রাষ্ট্রযন্ত্র হত্যার সংস্কৃতি থেকে জাতিকে মুক্তিদানে সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে, হত্যাকে বৈধ করার অপতৎপরতা রুখতে যথাযথ ভূমিকা পালন করবে, সে রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্তাব্যক্তিদের মুখে শুনতে হয়- সীমা লঙ্গন করা যাবে না ‘র বক্তব্য।

রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বায়িত্ববান কর্তা ব্যক্তিদের কাছ থেকে জাতি দ্বায়িত্ববান মন্তব্য শুনতে আগ্রহী। এই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তার আশ্বাসের বাণী শুনতে আগ্রহী।

সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ এবং অপসংস্কৃতি সৃষ্টকারীদের সুরের যে কোনো ধরনের মন্তব্য শুধু ওই দ্বায়িত্ববান ব্যক্তিকেই বিতর্কিত করে না বরং অপসংস্কৃতি রোধে তার আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস- আত্মপ্রত্যয় ও অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে বঙ্গবন্ধু’র হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজের মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে জাতিকে যেভাবে বের করে এনেছেন, ঠিক তেমনি ভাবে হত্যার সংস্কৃতি ও বৈধ করার অপতৎপরতা রোধ করে বিলম্বিত বিচারকাজের সংস্কৃতি থেকেও জাতিকে মুক্ত করবেন জাতির জনক কন্যা শেখ হাসিনা ।

লেখক পরিচিতি :

কবীর চৌধুরী তন্ময়
সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম (বোয়াফ)

kabir_tanmoy@yahoo.com

প্রয়োজনে- ০১৭১১০৭৫১৮৭, ০১৯১১৬৮২৯০০