Home / সারাদেশ / পুত্রবধূর বিরুদ্ধে সন্তান হত্যার অভিযোগ ও মায়ের আর্তনাদ
Dead-Khun-Death

পুত্রবধূর বিরুদ্ধে সন্তান হত্যার অভিযোগ ও মায়ের আর্তনাদ

পুত্রবধূ প্রিয়াংকা ধরের বিরুদ্ধে সন্তান হত্যার অভিযোগ তুলে তার বিচার দাবি করেছেন নিজ বাসায় খুন হওয়া অঞ্জন ধরের মা সমিতা রাণী ধর। শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অঞ্জনের মা দাবি করেন অসামাজিক কার্যকালাপে বাধা দেওয়ায় তার সন্তানকে প্রিয়াংকা হত্যা করেছে এবং এই হত্যাকাণ্ডে একাধিক লোক জড়িত।

সন্তান হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে সমিতা রাণী বলেন, আমরা মনে করেছিলাম সুষ্ঠু বিচার পাব। কিন্তু কোতোয়ালী থানা আমাদের সহযোগিতা করছে না। তাদের একতরফা কর্মকাণ্ড আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।

এদিকে সন্তান হত্যার দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হলেও সন্তান হারানোর আহাজারিতে কথা বলতে পারেননি অঞ্জন ধরের মা সমিতা রাণী ধর। কেবল সন্তানের বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করে আহাজারি করতে থাকেন। পরে তার পক্ষে অঞ্জনের বোন বীনা ধর সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পরকীয়ায় বাধা, সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই অঞ্জনকে খুন করা হয়েছে। এতে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ছিল অঞ্জনের স্ত্রী। এ হত্যাকাণ্ডে প্রিয়াংকার সাবেক প্রেমিক জুয়েলও জড়িত।

দুই মেয়ে এক সন্তানের সংসারে পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে ছেলেকে ছোট বয়সে স্বর্ণের দোকানে কাজে দিয়েছেন উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অঞ্জন সংসারের হাল ধরে ছোট দুই বোনকে বিয়ে দেওয়ার পর ২০০৮ সালে বোয়ালখালী উপজেলার জৈষ্ঠ্যপুরা এলাকার যিশু ধরের মেয়ে প্রিয়াংকার সঙ্গে অঞ্জনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর পুত্রবধূকে নিয়ে শহরে ভাড়া বাসায় উঠি।

বিয়ের পর কয়েক বছর ভালভাবে চলাফেরা করে, জন্ম নেয় দুটি সন্তান। পরে প্রিয়াংকার চালচলনে অসঙ্গতি দেখা দিলে তাকে সংশোধনের চেষ্টা করি। এরই মধ্যে পুত্রবধূর নামে ৪০ লাখ টাকা ফিক্স ডিপোজিট করলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে এবং অসামাাজিক কার্যকলাপের দিকে পা বাড়ায়।

পুলিশ আত্ম স্বীকৃত খুনি বাবুল ধরকে বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দিলেও সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের একতরফা কর্মকাণ্ড তাদের ভাবিয়ে তুলেছে উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাবুলকে বিভিন্ন জায়গায় হ্যান্ডকাপ ছাড়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অঞ্জন ধরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসার চাবি থানায় জমা দিলেও পুলিশ অন্যতম সন্দেহভাজন প্রিয়াংকা ধরের হাতে দেয়। পুলিশ ১৯ অক্টোবর রাতে হত্যাকাণ্ডের আলামত নষ্ট করেছে।

প্রিয়াংকা ধর পরকীয়ায় লিপ্ত থাকার বিষয়টি উভয় পরিবারের সদস্য অবগত বলেও জানান অঞ্জনের মা। তিনি বলেন, বিষয়টি অবহিত করে কোতোয়ালী থানার ওসি আমাদের এজহার গ্রহণ করেনি। তাই সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচারের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা দরকার।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল ইসলাম হোসাইনি, অঞ্জনের বোন বীনা ধর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমন বলেন, পরিবারে ভুল বুঝাবুঝি বা তিক্ততার কারণে বিচ্ছেদ হতে পারে। পারিবারিক কলহ নিয়ে এ ধরনের ঘটনা কিভাবে হয়েছে তা উদঘাটন করে জড়িতদের সবার সামনে এনে বিচার করা দরকার।

গত ১৭ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আফিম গলিতে জনৈক নেপাল বাবুর বিল্ডিংয়ের পঞ্চম তলায় বাসার দরজা ভেঙ্গে বস্তাবন্দি মরদেহটি পায় পুলিশ। এসময় অঞ্জনের শ্যালক বাবুল ধরকে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে বাবুল স্বীকার করে তার বোনের স্বামীকে সে খুন করেছে। ওই ঘটনায় ভাইকে আসামি করে থানায় মামলা করে অঞ্জনের স্ত্রী প্রিয়াংকা।

সংবাদ সম্মেলনের পর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে প্রিয়াংকা ধর, বাবুল ধর, জুয়েল ও রানা ধরের বিচার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে এলাকাবাসী। এতে ব্যবসায়িক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পাঁচ শতাধিক লোক অংশ নেয়। এসময় তারা চারজন আসামির বিচার দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩:০০ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০১৬, শনিবার
ডিএইচ

Leave a Reply