Home / খেলাধুলা / সৌম্য-মুস্তাফিজের এলাকায় কাঁকড়া চাষ করছেন সাকিব
সৌম্য-মুস্তাফিজের এলাকায় কাঁকড়া চাষ করছেন সাকিব

সৌম্য-মুস্তাফিজের এলাকায় কাঁকড়া চাষ করছেন সাকিব

দেশের দুই তারকা ক্রিকেটার সৌম্য-মুস্তাফিজের এলাকায় সাতক্ষীরার বুড়িগোয়ালীতে সাকিব এগ্রো ফার্ম লি. নামে প্রতিষ্ঠানও খুলে ফেলেছেন মি. অলরাউন্ডার।

নতুন এই প্রজেক্টের ৮০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। সাড়ে ৩ লাখ বাক্সে পরীক্ষামূলকভাবে ৩২ হাজার বাক্সে কাঁকড়ার চাষ শুরু হয়েছে।

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ব্যাটে, বলে এবং ফিল্ডিংয়ের পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যেও বেশ পারদর্শী। খেলাধুলার পাশাপাশি সাকিব যে ব্যবসায় জড়িত এটা এখন কারো অজানা নেই। এবার নতুন আরেক ব্যবসা খুলেছেন সাকিব, শুরু করেছেন কাঁকড়ার চাষ।

চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষ নাগাদ সেটির উদ্বোধন করা হবে জানা গেছে। সাকিবের ফার্মের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন আরেক ক্রিকেটার সগীর হোসেন পাভেল।

সরেজমিনের গিয়ে দেখা গেছে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনীর পোড়াকটলা দাতিনাখালী এলাকায় ৫০ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে সাকিবের কাকড়া ফার্মটি। শ্রমিকেদের থাকার জন্য ও কাকড়া প্রসেসিং করার ফ্রিজিং রুমও প্রস্তুত করতে বেশ কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক কাজ করছেন।

ঘেরে ভাসমান প্লাস্টিকের খাঁচা পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ করা হবে। এজন্য ঘেড়ের ভেতরে বসানো হবে সাড়ে ৩ লাখ প্লাস্টিকের খাচা। যার বেশির ভাগেই ইতোমধ্যে বসানো হয়েছে।

সাকিব এগ্রো ফার্মের ব্যবস্থপনা পরিচালক গাজী ইমদাদুল হক জানান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও আরেক ক্রিকেটার সগীর হোসেন পাভেল সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী এলাকায় এই প্রজেক্টটি গড়ে তুলছেন।

এর মাধ্যমে প্রায় ১৫০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এই প্রজেক্টের শুরু থেকে সব বিষয়ে দেখাশুনা করছেন ক্রিকেটার সগীর হোসেন পাভেল।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে কাজ শুরু হলেও নোনা পানি নিয়ে জটিলতা ছিল। তাই কাজ শেষ হতে একটু দেরি হয়ে গেছে।

তিনি আরোও বলেন, ‘এই অঞ্চলে ভাসমান প্লাস্টিকের খাঁচা পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ করছে চাষীরা। বেশ সাফল্যও দেখা গেছে। এখন অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে প্রজেক্ট গড়ে তুলছেন। প্লাস্টিকের খাঁচায় একটি করে কাঁকড়া রেখে পরিবর্তন করা হয় কাঁকড়ার খোলস।

এতে কাঁকড়ার ৮০ ভাগ ওজন বৃদ্ধি পায়। চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর কাকড়াঁ প্যাকেটজাতকরণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে কাঁকড়ার খোলস নরম থাকে।

তাই আগের তুলনায় এর চাহিদাও বেড়েছে। এই প্রজেক্টের পাশাপাশি সাকিব আল হাসানের একটি ৩০ বিঘা জমির একটি চিংড়ি ঘেড়ও গড়ে উঠেছে। সাকিব তার প্রজেক্টটি পরিদর্শন করতে খুব শিগগিরই সাতক্ষীরায় আসবেন বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালীগঞ্চে চিংড়ি চাষের জন্য বিখ্যাত এলাকা হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে চিংড়ি চাষের পাশাপশি চাষীরা কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষ করে সাবলম্বী হচ্ছেন। জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উন্নত প্রযুক্তিতে বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষ।

লাভজনক হওয়ায় চিংড়ি চাষ বন্ধ করে চাষীরা ঝুঁকছেন কাঁকড়া চাষের দিকে। এই প্রক্রিয়ায় ওজন বাড়িয়ে সাতক্ষীরার কাঁকড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রির পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার মেট্টিকটন।

সাকিব আল হাসানের প্রজেক্টের পাশেই ২০১৪ সাল থেকে গড়ে ওঠা ফরিদ নাইন স্টার এগ্রো বিডি লিমিটেডের ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘কাঁকড়া অল্প জায়গায় অনেক বেশি চাষ করা যায়। আমরা স্থানীয় চাষী বা বাজার থেকে ন্যায্যমূলে কাকড়া কিনে আনি। তারপর প্লাস্টিকের খাঁচায় একটি করে কাঁকড়া রেখে দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরিচর্যার পর কাঁকড়ার খোলস পরিবর্তন করা হয়। এতে কাঁকড়ার ৮০ ভাগ ওজন বৃদ্ধি পায়। চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর কাঁকড়া প্যাকেটজাতকরণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে কাঁকড়ার খোলস নরম থাকে। এর চাহিদাও বেড়েছে। দামও পাওয়া যায় ভাল। ১শ টাকা কেজি কিনে চাষ করে চার থেকে পাঁচশ টাকা বিক্রি করা যায়।’

কম খরচে বেশি লাভে মাছের সাথেই করা যায় কাঁকড়া চাষ। চিংড়িসহ অন্যান্য মাছের ঘেরে ভাইরাসজনিত রোগের কারণে সব সময়ই চিন্তিত থাকতে হয়। কাঁকড়া চাষে এ চিন্তা নেই বললেই চলে। তাই দক্ষিণাঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কাঁকড়া চাষ। এজন্য প্রতি বছর বাড়ছে খামারের সংখ্যাও।

সাতক্ষীরার জেলা মৎস কর্মকর্তা আব্দুল ওদুদ বলেন, ‘আমাদের জেলায় ৩৭০টি কাঁকড়ার খামার রয়েছে। সেখানে কাঁকড়া ওজন বাড়িয়ে রপ্তানি করার কাজ হচ্ছে। এরই মধ্যে কাঁকড়ার ওজন বৃদ্ধির সরকারিভাবে ১০৪টি ও বে-সরকারিভাবে ২৬৬টি প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এছাড়া নতুন করে বেশ কয়েকটি কাঁকড়া খামার তৈরি কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘গত ২০১৫ সালে জেলার ৩৭০টি খামারে প্রায় ২ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন কাঁকড়া উৎপাদিত হয়। এতে ১১ হাজার মানুষ কাঁকড়া উৎপাদন ও আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। গত বছর জেলার প্রায় ২৪ হেক্টর জমিতে কাকড়া মোটাতাজাকরণ করা হয়েছিল। চলতি বছরে গত বছরের তুলনায় এ বছর ৫০ হেক্টর বেশি জমিতে কাঁকড়া মোটাতাজা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’(বাংলামেইল)

নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট ০৭:২৪ পিএম,৪ আগষ্ট ২০১৬,বৃহস্পতিবার
এইউ

Leave a Reply