Home / জাতীয় / অর্থনীতি / তীব্র মূলধন ঘাটতি : বন্ড চেয়েছে রূপালী ব্যাংক
taka Note
প্রতীকী

তীব্র মূলধন ঘাটতি : বন্ড চেয়েছে রূপালী ব্যাংক

বেসিক ব্যাংকের পর এবার রূপালী ব্যাংকও তীব্র মূলধন ঘাটতি মেটাতে সরকারের কাছে বন্ড চাইল। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই ব্যাংকটি সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড হিসেবে সরকারের কাছে ৫০০ কোটি টাকা চেয়েছে।

ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি লিখে বলা হয়েছে, এর আগে তারা দুইবার ৫০০ কোটি টাকা বন্ড চেয়েছিল, কিন্তু তা দেয়া হয়নি।

এখন আন্তর্জাতিক মূলধন মান ব্যাসেল-৩ মেটানোর জন্য অবিলম্বে এই ৫০০ কোটি টাকার বন্ড দেয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

বেসিক ব্যাংকের পক্ষ থেকে সুদবিহীন দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকার বন্ড দেয়ার জন্য ব্যাংকিং বিভাগের কাছে গত মাসে চিঠি দেয়া হয়েছিল।এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়া যায় তার জন্য এ মাসেই একটি বৈঠকের আয়োজনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

রূপালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকিং বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘২০১৫ সালের ২ জুন এবং ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ এ সংক্রান্ত দুটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, ব্যাসেল-৩ গাইডলাইন অনুসারে রূপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে টায়ার-২ তে ৫০০ কোটি টাকার ‘রূপালী ব্যাংক লিমিটেড সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড’ ইস্যু অনুমোদন প্রদানের জন্য আবেদন করা হয়। সে লক্ষ্যে আপনার নির্দেশনায় অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু অদ্যাবধি এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার উল্লেখ করে চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণে মার্চ ২০১৫ থেকে ব্যাসেল-৩ কার্যকর করেছে। মার্চ ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয়েছে ডিসেম্বর ২০১৯ সালে ব্যাসেল-৩ গাইডলাইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে। ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী ন্যূনতম মূলধন ১০ শতাংশের স্থলে পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং লেভেরাজ রেশিও ৩ শতাংশ সংরক্ষণের নির্দেশনা প্রদান করেছে। উল্লেখ্য মার্চ ২০১৬ ভিত্তিতে মূলধন সংরক্ষণের হার ১০ দশমিক ৬২৫ শতাংশের বিপরীতে রূপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ৫৪৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ’

কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছেÑ বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী রূপালী ব্যাংকের চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত মূলধন ঘাটতি ছিল এক হাজার ৫২ কোটি টাকা। আর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৩৬০ কোটি টাকা, যা গত ডিসেম্বরে ছিল ১৫৪৯ কোটি টাকা।

রূপালী ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এই বন্ড ইস্যু বিষয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের ২৭ মে অনুষ্ঠিত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার ৭ বছর মেয়াদি ফোটিং রেইট (সুদের হার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে নির্ধারিত হবে) এ রূপালী ব্যাংক লিমিটেড সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এমতাবস্থায় ব্যাসেল-৩ গাইডলাইন অনুসারে রূপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে টায়ার-২তে ৫০০ কোটি টাকার রূপালী ব্যাংক লিমিটেড সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যু করার জন্য আপনাদের সবিনয় অনুরোধ করছি।

উল্লেখ্য এর আগে গত মাসে সরকারের কাছে দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকার বন্ড চায় বেসিক ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের দুর্নীতিগ্রস্ত এই ব্যাংকটি বলেছে, তারা এখনো প্রবল আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে। এই আর্থিক সঙ্কট লাঘবের জন্য বন্ডের মাধ্যমে হলেও যেন বেসিক ব্যাংককে দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা দেয়া হয়। তবে এই বন্ড হবে সুদমুক্ত। অর্থাৎ, এই অর্থের জন্য কোনো ধরনের সুদ দিতে রাজি নয় ব্যাংকটি।
বেসিক ব্যাংক ২৬টি বন্ডের মাধ্যমে এই অর্থ দেয়ার আবেদন করেছে। প্রতিটি বন্ডের মূল্যমান হবে ১০০ কোটি টাকা। এবং পুরো বন্ডটি হবে সুদবিহীন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ছিল ১৭৭৭ কোটি টাকা। এই ঘাটতি বেড়ে চলতি বছরের জুনে মূলধন ঘাটতি গিয়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ২৮৬ কোটি টাকায়। খেলাপি ঋণ ডিসেম্বরে ছিল ৬ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা, এ বছর জুনে তা বেড়ে হয় ৬ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা।

এর আগেও বেসিক ব্যাংকের আর্থিক সঙ্কট কমানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তিন দফায় দুই হাজার ৩৯০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছিল। প্রথমবার ২০১৪ সালে দুই দফায় ৭৯০ কোটি এবং ৪০০ কোটি টাকা দেয়া হয়। গত বছর দেয়া হয়েছিল আরো ১২০০ কোটি টাকা। এ সম্পর্কিত অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘অর্থ বিভাগের ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকের মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ১২০০ কোটি টাকা বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের অনুকূলে মূলধন পুনর্ভরণ খাতে প্রদান করা হলো।

সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক ২০০৯ সাল পর্যন্ত একটি লাভজনক ব্যাংক ছিল। কিন্তু এরপর যখন রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে নিয়োগ দেয়া হয় তখন থেকেই ব্যাংকটির আর্থিক অনিয়মের সূত্রপাত ঘটে। চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যক্ষ মদদে বেসিক ব্যাংকে একে একে ঘটে যায় অনেকগুলো আর্থিক কেলেঙ্কারি।

এ কেলেঙ্কারিতে আত্মসাৎ করা হয় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা, যা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে এই চিত্র ফুটে উঠেছে। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রধান কার্যালয়ের ঋণ যাচাই কমিটি বিরোধিতা করলেও বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সেই ঋণ অনুমোদন করেছে।

৪০টি দেশীয় তফসিলি ব্যাংকের কোনোটির েেত্রই পর্ষদ কর্তৃক এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কার্যক্রম পরিলতি হয় না। পর্ষদের ১১টি সভায় ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে তিন হাজার ৪৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, যার বেশির ভাগ ঋণই গুরুতর অনিয়ম সংঘটনের মাধ্যমে করা হয়েছে।

এ ঋণ পরিশোধ বা আদায় হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেও মত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩:০০ এএম, ২৩ অক্টোবর ২০১৬, রোববার
ডিএইচ

Leave a Reply