Home / জাতীয় / রাজনীতি / লোকদেখানো ও রুটিনওয়ার্ক

লোকদেখানো ও রুটিনওয়ার্ক

‎Sunday, ‎24 ‎May, ‎2015 01:13:49 PM

নিউজ ডেস্ক, চাঁদপুর টাইমস :

রাজপথের আন্দোলনে অংশ নিয়ে আটক, পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসাধীন, জামিনে মুক্ত, নিখোজ, গুম ও খুন হওয়া নেতাকর্মীদের তালিকা সংগ্রহ করছে বিএনপি। এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন স্বাক্ষরিত চিঠি প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা, থানা, পৌরশাখা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বরাবর ইস্যু করা হয়েছে। প্রেরিত চিঠিতে ১০ দিনের সময়ও দিয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় দফতর। কিন্তু, কেন্দ্রের এ ধরনের উদ্যোগে সাড়া দিচ্ছেন না বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা একে লোক দেখানো ও রুটিনওয়ার্ক বলে আখ্যায়িত করছেন বলে জানা গেছে।

একাধিক জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপকালে তারা চাঁদপুর টাইমসকে জানান, কেন্দ্রের এ ধরনের উদ্যোগ নতুন কিছু নয়। দল থেকে অতীতে এ ধরনের অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। অনেকবার চিঠি ইস্যু হয়েছিল। কিন্তু কোনো উদ্যোগই কাগজ-কলমের সীমানা পেরিয়ে বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। সে কারণে এবারের উদ্যোগও সফল হবে বলে মনে করছেন না তৃণমূলরা।

এ পর্যন্ত রাজপথের আন্দোলনে তৃণমূলের অবদান ছিলো সবচেয়ে বেশি। প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতে হামলা-মামলা, গ্রেফতার, গুম, খুনের শিকার হতে হয়েছে তৃণমূলদের। তাদের অভিযোগ, ইতিপূর্বে বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দিতে ‘রাজবন্দি মুক্তি পরিষদ’ গঠন করে আইনজীবীদের কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। ওই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবরও প্রকাশিত হয়েছিল। তবে আজ পর্যন্ত রাজবন্দি মুক্তি পরিষদের কোনো কার্যক্রম তৃণমূলের চোখে পড়েনি। কাজে আসেনি এই পরিষদ। তাদের প্রশ্ন- তাহলে কেন তৈরি করা হলো এ পরিষদ? তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী জমি-জমা বন্ধক রেখে, বিক্রি করে মামলা চালিয়ে যেতে হয়েছে এবং হচ্ছে। দল থেকে সহায়তা দূরে থাকুক, পরামর্শ দেয়ার লোকও পাওয়া যায় না। তৃণমূলের অনেকেরই ব্যবসা-বাণিজ্য, আয়-রোজগার বন্ধ প্রায়। গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে।

অথচ দলের স্যুট-কোর্ট পরা প্রভাবশালী আইনজীবীরা আইনি সহায়তা দেয়ার দায়িত্ব নিয়ে তা পালন করছেন না। উল্টো দলের চেয়ারপারসনকে তৃণমূলদের আইনি সহায়তা দেয়া হচ্ছে বা দেয়া হবে বলে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছেন। বাস্তব চিত্র ভিন্ন। দলীয় কোনো আইনজীবীর কাছ থেকে আইনি সহায়তা তো নয়ই, বরং পরামর্শ পর্যন্ত পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ বিএনপির জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতাদের।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ দলটির নির্বাহী কমিটিতে ৪২৫ জনের অধিক কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন। যাদের মধ্যে অধিকাংশই সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন। কেন্দ্রীয় কমিটির এই নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধেই কোনো মামলা হয়নি বা নেই, যেহেতু তারা সক্রিয়ভাবে অতীতের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেননি। যারা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তারাই বারবার মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন। বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হওয়া কেন্দ্রীয় ২০ থেকে ২৫ জন নেতা পর্যায়ক্রমে কারাগারে গিয়েছেন। এসব নেতাই বারবার জেলে গেছেন ও জামিন পেয়ে বাইরে এসেছেন।

নেত্রকোনো ছাত্রদলের একজন নেতা চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ১৫ বছর হতে চলেছে নেত্রকোনা জেলা ছাত্রদলের কমিটি হচ্ছে না। কমিটির বর্তমান সভাপতি মনিরুজ্জামান দুদু ছাত্রদলের সভাপতি থাকা অবস্থায় বেশ কয়েক মাস আগে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবের উপস্থিতিতে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তৃণমূল ঠিক আছে, তবে দলের প্রধান খালেদা জিয়াকে প্রথমে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সঠিক পথে আনতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা বিএনপির সভাপতি আশরাফ উদ্দিন খান ঝামেলা এড়াতে অনিদিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির আগে থেকেই জেলার বাইরে অবস্থান করছিলেন। সাধারণ সম্পাদক ডা. আনোয়ারুল হক মামলায় আগাম জামিন নিয়ে নিজস্ব পেশা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। এছাড়া রাজপথের আন্দোলনের ভ্যান গার্ড হিসেবে পরিচিত জেলা যুব দলের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো নেই। ৭ বছর ধরে আহবায়ক কমিটি নিয়ে চলছে যুবদলের রাজনীতি। তাই জেলায় এখন আর দলীয় কোনো কর্মসূচি পালিত হয় না, চলে ব্যক্তি কেন্দ্রিক কর্মসূচি। তবে পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক টুটন নাশকতার মামলায় দীর্ঘ ৫ মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন।

খুন, গুম, হত্যা বা নিহত তৃণমূলের নেতাকর্মীদের তালিকা চেয়ে কেন্দ্র থেকে কোনো চিঠি পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সভাপতি আশরাফ উদ্দিন খান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, চিঠি পেয়েছি। ইতিমধ্যে তথ্যও পাঠিয়েছি। কার্যকারিতা কতটুকু হবে, কেন্দ্র বলতে পারবে।

ময়মনসিংহ বিএনপির এক নেতা বলেন, কেন্দ্র যেখানে নিজেদের কোন্দল মিটাতে পারে না। সেখানে তাদের কাছে তৃণমূলের কি চাওয়া থাকতে পারে?

কেন্দ্র থেকে পাঠানো কোনো চিঠি পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনো কোনো চিঠি পাইনি।

নিখোঁজ হওয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনের ছোট ভাই ইমরান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ডাটা, তথ্য দিয়ে কি হবে। আমার ভাইকে অক্ষত অবস্থায় পরিবারের কাছে ফেরত চাই।

চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫

 

নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে লাইক দিন : www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes

চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।