Home / ফিচার / লঞ্চে অন্তঃসত্ত্বাকে হত্যা এ কেমন পৈশাচিকতা!
লঞ্চে অন্তঃসত্ত্বাকে হত্যা এ কেমন পৈশাচিকতা!
ফাইল ছবি

লঞ্চে অন্তঃসত্ত্বাকে হত্যা এ কেমন পৈশাচিকতা!

চাঁদপুর আব-এ-ঝমঝম লঞ্চে এক অন্তঃসত্ত্বাকে ধর্ষণের পর হত্যার সংবাদ প্রকাশের পর জাতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলামেইল টোয়েন্টিফোরের কান্ট্রি এডিটর নিয়ন মতিয়ুল তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করলেন।

চাঁদপুর টাইমস পাঠকদের জন্য তা হুবুহু প্রকাশ করা হলো।

মানুষ আর কতো অমানুষ হবে? আর কতো নির্মমতা দেখলে মানুষের অনুভূতি বিকল হয়ে যাবে? মানুষ কি আজ মানুষ ছাড়া আর সবকিছুই?… এসব প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হচ্ছে একটি দৃশ্য দেখে। যা দেখলে যে কারোই কেঁপে উঠতে পারে বুক।

চাঁদপুর লঞ্চঘাটে একটি লঞ্চের কেবিনে দেখা গেছে এক তরুণীকে। দেখতে সুশ্রী। চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ। বয়স কতোই বা? ২২ বা ২৩। নিথর দেহ পড়ে আছে কেবিনের বেডে। কক্ষের ভেতরে সবকিছু কেমন এলোমেলো।

রাতের কোনো এক সময় হত্যার শিকার হয়েছেন। নির্মম আর পাশবিকভাবে। না, শুধু তরুণীকে একাই নয়, একই সঙ্গে হত্যা করা হয়েছে তার অনাগত সন্তানকেও। শুধু কি তাই? মা আর তার গর্ভের সন্তানকে হত্যার আগে ধর্ষণও করা হয়েছে। মনে হয় এখানেই শেষ হয়নি, হয়তো ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে প্রথম মা হওয়ার গভীর আনন্দও!

কী পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছিল সেই তরুণী মাকে! ভাবা যায়? একদিকে গর্ভের সন্তানকে বাঁচানোর আকুতি। আরেকদিকে, নিজের সম্ভ্রম আর প্রাণ রক্ষা। না, শেষ অবধি কোনোটাই রক্ষা হয়নি। হতে দেয়নি পৈশাচিক ঘাতক।

আচ্ছা, কী এমন অপরাধ করেছিলেন ওই তরুণী মা? হয়তো প্রথম স্বামীর ঘর ছেড়েছিলেন? কারো ভালোবাসার পাতে কি ছাই দিয়েছিলেন? নাকি, শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে ঝগড়া করেছিলেন?

হয়তো কেউ মনে মনে আওড়াতেও পারেন- ঘটনা হয়তো পরকীয়া, কিংবা অবৈধ গর্ভধারণ! হ্যাঁ, মুখে কিংবা প্রকাশ্যে না হোক, মনে মনে তো এমন কথা কেউ বলতেই পারেন? কিন্তু তার জন্য কি এমন পাশবিক শাস্তি কেউ দিতে পারে? অন্তত সেই ঘাতক যতি হয় মানুষ! যদি এমনি কোনো মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হওয়ার গৌরব সেও অর্জন করে থাকে?

পুলিশ গিয়ে এমভি আব-এ-জমজম-১ এর স্টাফ কেবিন থেকে তরুণীর লাশ উদ্ধার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লঞ্চের ম্যানেজার, কেরানি, কেবিনবয়সহ ৫ জনকে আটক করে নিয়ে এসেছে থানায়।

ম্যানেজার পুলিশকে জানিয়েছেন, সোমবার (৬ জুন) রাত ৮টায় একজন পুরুষসহ ওই তরুণী লঞ্চে উঠে ১১২নং কেবিন বুকিং করেছিলেন। ঢাকায় লঞ্চটি ভিড়ার পর কেবিনবয়দের অগোচরে পুরুষটি নেমে চলে যান। তবে তরুণী থেকে গিয়েছিলেন কেবিনেই। ঢাকা থেকে লঞ্চটি আবারো চাঁদপুর চলে যায়। এরপর কেবিনে তরুণী লাশ দেখতে পায় বয়রা।

চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়ালী উল্যাহ অলির ধারনা, ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে ওই অন্তঃস্বত্ত্বা তরুণীকে।

পুলিশ তদন্তে নেমেছে। একদিন হয়তো সব রহস্য উন্মোচিত হবে। তবে, ততোদিনে হয়তো আজকের এই অনুভূতি আমরা ভুলে যাবো। সেদিন আর কৌতুহল হবে না গর্ভের সন্তানসহ তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনার কারণ জানতে। কারণ ততোদিনে হয়তো এমন আরো ঘটনার সাক্ষী হতে হবে। তখন হয়তো অনুভূতিগুলো আর এমন করে সাড়া দেবে না!

না, আর তো কিছুই ভাবা যায় না। ভাবনাগুলোর সঙ্গে যে অনুভূতির দূরত্ব বেড়েই চলছে। আমরা বোধ হয় মানবিকতার সব দরজা বন্ধ করে দিচ্ছি। অনুভূতির হাজারো জানালা লাগিয়ে দিচ্ছি একে একে। দিন দিন হয়ে পড়ছি মানুষ থেকে এমনি অমানুষ! (বাংলামেইল অবলম্বনে)

চাঁদপুরে যাত্রীবাহী লঞ্চ থেকে অজ্ঞাত গর্ভবতীর লাশ উদ্ধার (সংবাদটি পড়তে ক্লিক/টাচ)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৭:০০ এএম, ৮ জুন ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ