Home / ইসলাম / যাকাতের গুরুত্ব ও যারা প্রাপ্য
যাকাতের গুরুত্ব ও যারা প্রাপ্য
সম্পদের ২.৫% যাকাত ফরজ (প্রতীকী ছবি)

যাকাতের গুরুত্ব ও যারা প্রাপ্য

‘যাকাত’ আরবি শব্দ। অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া, পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধতা। যাকাতের আরেক অর্থ পরিবর্ধন। ইসলামী বিশ্বকোষে যাকাতের অর্থ লেখা আছে, যাকাত অর্থ পবিত্রতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবী (সা.)! আপনি তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহণ করুন যাতে আপনি এর মাধ্যমে সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং বরকতময় পরিশুদ্ধ করতে পারেন। (সূরা তাওবাহ, আয়াত ১০৩)।

ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়, বনি হাশেম আওলাদে রসুল (সা.) ব্যতীত জীবনযাত্রার অপরিহার্য প্রয়োজন পূরণের পর সম্পদ পূর্ণ এক বছরকাল অতিক্রম করলে ওই সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট অংশ আল্লাহর নির্ধারিত খাতে ব্যয় করাকে যাকাত বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, নিজের অর্থ সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ অভাবী মিসকিনদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়াকে যাকাত বলে।

এটাকে যাকাত বলার কারণ হলো এভাবে যাকাতদাতার অর্থ সম্পদ এবং তার নিজের আত্মা পবিত্র-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। প্রিয় রসুল (সা.) ইরশাদ করেন : যাকাত ইসলামে ধনী গরিবের সেতুবন্ধ। (মুসলিম)।

প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ মস্তিস্কসম্পন্ন সব ‘সাহেবে নিসাব’ সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্যের মালিক মুসলিম নর-নারীর ওপর যাকাত প্রদান করা ফরজ। কোনো ব্যক্তি মৌলিক প্রয়োজনীয় উপকরণাদি ব্যতীত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পর চাঁদের হিসাবে পরিপূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হলে তার ওপর পূর্ববর্তী বছরের যাকাত প্রদান করা ফরজ।

অবশ্য যদি কোনো ব্যক্তি যাকাতের নিসাবের মালিক হওয়ার পাশাপাশি ঋণগ্রস্ত হয় তবে ঋণ বাদ দিয়ে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার ওপর যাকাত ফরজ হবে। যাকাত ফরজ হওয়ার পর যদি কোনো ব্যক্তি যাকাত প্রদান না করে টাকা খরচ করে ফেলে তাহলেও তাকে তার পূর্বের যাকাত দিতে হবে।

যাকাত বণ্টনের ব্যাপারে আল কোরআনের স্পষ্ট ঘোষণা হচ্ছে নিশ্চয়ই সাদকাহ (যাকাত) তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও যাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য। এটাই আল্লাহর বিধান। (সূরা তাওবাহ : ৬০)। মহাগ্রন্থ আল কোরআনের আলোকে যাকাত ব্যয়ের খাত ৮টি। যার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো।

১. নিঃস্ব ফকির : ফকির বলা হয় যার কোনো সম্পদ নেই, নেই তার উপযোগী হালাল উপার্জন, যাদ্বারা তার প্রয়োজন পূরণ হতে পারে। যার খাওয়া-পরা ও থাকার স্থান নেই। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই। আবার কেউ বলেছেন, ফকির সে যার সামান্য সম্পদ আছে। তবে জীবনধারণের জন্য অপরের ওপর নির্ভর করে।

২. অভাবগ্রস্ত মিসকিন : মিসকিন বলা হয় যার এমন পরিমাণ সম্পদ আছে যাদ্বারা তার ওপর নির্ভরশীল লোকদের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট নয়। মিসকিন সে-ই যার কোনো কিছুই নেই। আবার কারও মতে, মিসকিন সেই ব্যক্তি যার কিছু সম্পদ আছে কিন্তু লজ্জা সম্মানের ভয়ে কারও কাছে হাত পাতেন না যারা। তারা জীবন-জীবিকার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা করার পরও প্রয়োজন মতো উপার্জন করতে পারেন না। এতকিছুর পরও নিজের কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারেন না। মিসকিন এমন ব্যক্তিকে বলা হয় যার কিছুই নেই, যিনি মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়ান এবং খোরাক-পোশাকের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হন।

৩. যাকাত বিভাগের কর্মচারী : যারা যাকাত আদায়কারী, সংরক্ষণকারী, পাহারাদার, লেখক, হিসাবরক্ষক এবং যাকাতের বণ্টনকারী এদের সবাইকে যাকাতের ফান্ড থেকে বেতন দিতে হবে। তবে এমন যেন না হয় যে, আমিল কর্মচারীদের পারিশ্রমিক দিতে গিয়ে যকাতের কোনো অর্থ অবশিষ্ট না থাকে, সে ক্ষেত্রে তাদের আদায়কৃত যাকাতের অর্ধেকের বেশি দেওয়া যাবে না। এ ব্যবস্থা এ জন্য করা হয়েছে, যেন তারা যাকাতের মালের মালিকদের থেকে অন্য কিছু গ্রহণ না করেন। বরং এটা আসলে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববানের আওতায় পড়ে। রাষ্ট্রের দায়িত্ববান যাকাতের যাবতীয় ব্যবস্থাপনা, গঠন ও পরিচালনা করবেন। এসব লোককে নিয়োগও দেবেন রাষ্ট্রের দায়িত্ববান।

৪. যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য : ইসলামের জন্য যাদের মন আকর্ষণ করা প্রয়োজন কিংবা ইসলামের ওপর তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য এমন লোকদের যাকাতের খাত থেকে যাকাত প্রদান করা।

৫. দাসমুক্তির জন্য : যে ক্রীতদাস তার মালিককে অর্থ প্রদানের বিনিময়ে মুক্তিলাভের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এখানে এ পর্যায়ে মুসলিম যুদ্ধবন্দীও এ খাতের আওতায় পড়বেন।

৬. ঋণগ্রস্তদের জন্য : এমন ব্যক্তি যিনি ঋণভারাক্রান্তে জর্জরিত অবস্থায় নিপতিত, তাকে যাকাতের ফান্ড থেকে সাহায্য করা। তবে যে কোনো অসৎ কাজে বা অপব্যয়ের কারণে ঋণভারাক্রান্ত হয়েছে তওবা না করা পর্যন্ত যাকাতের ফান্ড তাকে দেওয়া যাবে না। আবার ঋণভারাক্রান্ত এর পর্যায়ে যেমন জীবিত ব্যক্তি শামিল, তেমনি মৃত্যু ব্যক্তিও এর আওতায় পড়ে, মৃত ব্যক্তি যিনি ঋণ রেখে মারা গেছেন। ইমাম কুরতুবী (রা.)ও তাই বলেছেন।

৭. আল্লাহর পথে : আল্লাহর পথ বলতে আকিদা বিশ্বাস ও কাজের দিক দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি পর্যন্ত পৌঁছে দেয় যে পথ, ফি সাবিলিল্লা এর অর্থ এমন কার্যক্রমকে বুঝায় যা খালিস নিয়ত আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তা ফরজ নফল ও বিভিন্ন ধরনের ইবাদত বন্দেগীকে বুঝায়। আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতী (রহ.) বলেন, ফি সাবিলিল্লাহ এর অর্থ যারা জিহাদের ইসলাম প্রচার প্রসারের কাজে নিয়োজিত আছেন।

৮. মুসাফিরদের জন্য : এমন ব্যক্তি যার নিজ আবাসস্থলে সম্পদ আছে । কিন্তু সফরে তিনি বিপদগ্রস্ত ও নিঃস্ব অবস্থায় আছেন, তাকে যাকাতের তহবিল থেকে সাহায্য করা। তবে তার সফর পাপের কাজের বা অনুরূপ পর্যায়ের কোনো সফর হওয়া যাবে না। আল্লামা তারাবি (রহ.) হজরত মুজাহিদ সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, যাকাতের সম্পদ ধনীর হওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের নিঃস্ব পথিকেরও একটি হক রয়েছে। যদি সে তার নিজের ধন-সম্পদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। আসুন! আমরা সবাই আল্লাহ ও তার প্রিয় রসুল (সা.)-এর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে জান্নাতের আশায় আমাদের নিকটাত্মীয় গরিব, অনাথ, এতিম, মিসকিন, অভাবীদের যাকাত প্রদান করি। ধনীর সম্পদে গরিবের যে হক রয়েছে তার সুষ্ঠুু বণ্টনের মাধ্যমে দুনিয়া আখিরাতের কামিয়াবি লাভ করি।

লেখক : মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদি,
মুফাসসিরে কোরআন, বেতার, টিভির ইসলামী উপস্থাপক,
প্রিন্সিপাল-মণিপুরবাইতুর,রওশন মাদ্রাসা, মিরপুর, ঢাকা।

ইসলামিক ডেস্ক
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ২:১৫ পিএম,২৪ জুন ২০১৭,শনিবার
এজি/ডিএইচ

Leave a Reply