Home / ফিচার / মুক্তিযোদ্ধা রেনু মিয়ার ৭১’র স্মৃতি : এম মঞ্জুর আলম পাটওয়ারী

মুক্তিযোদ্ধা রেনু মিয়ার ৭১’র স্মৃতি : এম মঞ্জুর আলম পাটওয়ারী

‘বঙ্গবন্ধুকে কাঁদতে দেখেছি। সবাইকে হাত-মুখ ধুয়ে খেতে বলেছিলেন। তিনিও আমাদের সাথে খেতে বসলেন। খেতে বসেই তিনি ভাত নাড়ছেন আর কাঁদছিলেন। তখন তিনি বলছিলেন, বিভিন্ন স্থানে লঙ্গরখানা দিয়েছি। সবাইতো এখানে খাচ্ছি, দেশের মানুষজনেরা কিভাবে খাচ্ছে। তাতো জানি না। এভাবেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষদের জন্য কাঁদতেন।’
বঙ্গবন্ধুর সাথে প্রথম সাক্ষাতের স্মৃতিকথা ভুলে যাননি ৭০ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা রেনু মিয়া।

তিনি জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার ৪নং নারায়ণপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের গর্বিত সন্তান। মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি যে হারে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার- পরিজন নিয়ে ভূয়া সার্টিফিকেট আর চারদিকে দালালে বিভোর হয়ে পড়েছে তাতে দীর্ঘশ্বাস নেয়া ছাড়া কিছুই করার নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা রেণু মিয়া বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী হয়ে যুদ্ধপরাধীদের বিচার ও বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িতদের বিচারসহ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করায় আত্মা শান্তি পেয়েছে।

এ মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতা যুদ্ধের আগেই রাজধানীতে গিয়ে তাঁতী মেশিনে কাজ করতেন। কর্মাবস্থায় তাঁর পরিচয় হয় জাতীয় শ্রমিক লীগের আবদুর রহমান ও ফেডারেশনের আবদুল মান্নানের সাথে । তাঁদের ডাকে নারায়ণগঞ্জ জাতীয় শ্রমিক লীগের জনসভায় অংশ নেন। ওই জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য শুনে তারা তাজউদ্দিনের নির্বাচনে উৎসাহ পায়।
কিভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এই যোদ্ধা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাকিস্তান সরকারের কাছে আমাদের কোন মূল্যায়ন ছিল না। বঙ্গবন্ধুর ডাকে রেসকোর্স ময়দানে বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে যাই। কয়েকদিন পর শুরু হয় গোলাগুলি। তারপর আমাদের দলনেতা আবদুর রহমান ও তাজউদ্দিন সাহেব ভারতে ট্রেনিংয়ে চলে যান। তাঁরা পর্যায় ক্রমে আমাদেরকেও ট্রেনিংয়ের জন্য ভারতের উদয়পুর লেমুচোর নামক জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে দলের গ্রুপ লিডার হিসেবে আমিসহ এক’শ ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা ২১ দিন ট্রেনিং করেছি। সেখান থেকে এসে তিন নম্বর সেক্টর কমান্ডার সফিউল্লাহ স্যারের নেতৃত্বে বাঙ্গালী সেনাবাহিনীদের সাথে আমরা কয়েকজন যোগ দেই। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার বাম পা গুলিবিদ্ধ হয়। ওইসময় আমিসহ আরো কয়েকজন আহত হয়েছিল।

মতলব দক্ষিণ উপজেলায় যুদ্ধকালীণ সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এ যোদ্ধা বলেন, যুদ্ধের সময় চিঠির মাধ্যমে খবর পেলাম হিন্দুদের ওপর লুটপাট ও নির্যাতন চলছে। ওইসময় রাজাকারদের নেতৃত্বে ছিলেন কালিকাপুরের বারেক, কান্দির পাড়ের শরবত উল্লাহ ও গোবিন্দপুরের ছিডিউল্লাহ। তারপর সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি আসাদ খাঁ এর পরামর্শে রসুলপুর গ্রামের ডাক্তার বাড়ীতে ক্যাম্প করি। সেখান থেকে রবিবার দিন আমিসহ পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা নৌকায় গিয়ে প্রথমে বারেক রাজাকারকে হত্যা করি। তখন সময় দুপুর ৩ টা ১০ মিনিট। বারেক রাজাকারের মৃত্যুর খবর শুনে শরবত উল্লাহ হৃদরোগে মারা যায়। তারপর ছিডিউল্লাহ রাজাকারকে হত্যা করেছি। এভাবে আমাদের এলাকাকে রাজাকার মুক্ত করেছি।
দেশ স্বাধীন হবার পর কি করেছিলেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যুদ্ধের পরপরই সেই তাঁতীর মেশিনের চাকরীতে যোগ দিয়েছি। আমাদের দলনেতা আবদুর রহমান সাহেবের সাথে যোগাযোগ শুরু হয়। তার সাথে গণভবনে গিয়ে তোফায়েল আহমেদের অনুমতি নিয়ে কয়েকজন মিলে বঙ্গবন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম।
শেখ হাসিনার কাছে কি প্রত্যাশা করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছেলেতুল্য ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মতলবের নির্মল গোশ্বামী আহত হয়। এই গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
পারিবারিক বিষয়ে রেনু মিয়া বলেন, আমার তিন ছেলে তিন মেয়ে। পারিবারিকভাবে আমরা অনেক সুখী।
লেখক
বার্তা সম্পাদক
সাপ্তাহিক মানবসমাজ।
তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক
হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাব।