Home / আন্তর্জাতিক / প্রবাস / মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে দালাল-হকারের দৌরাত্ম্য
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে দালাল-হকারের দৌরাত্ম্য

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে দালাল-হকারের দৌরাত্ম্য

মালয়েশিয়া করেসপন্ডেন্ট :

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘিরে গড়ে উঠেছে দালালদের জমজমাট তদবির বাণিজ্য। এ ছাড়া ফুটপাথে চলছে হকারদের ভাত, রুটি-কলাসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার ব্যবসা। ছোট্ট একটি কাজের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় সাহায্য প্রার্থীদের।

বিদেশের মাটিতে প্রতিনিয়ত ইমেজ সঙ্কটে পড়ছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। হাইকমিশনের নাকের ডগায় এমন ঘটনা ঘটলেও এ ব্যাপারে নির্বিকার কমিশনের কর্মকর্তারা।

হাইকমিশনের সামনে গেলেই দালালরা এসে নিচু গলায় আপনাকে বলবে, ‘কী লাগবে, পাসপোর্ট, ভিসা, ট্রাভেলপাস করিয়ে দিব।’

‘পুলিশ দিয়ে মাঝে মাঝে দালালদের উচ্ছেদ করা হয়’ এক কর্মকর্তা এমন তথ্য জানালেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় দালালদের দৌরাত্ম্য। কোনো বাধাই যেন তাদের রুখতে পারছে না। তাদের পেছনে রাঘব বোয়ালরা রয়েছেন বলে অনেকের অভিযোগ।

হাইকমিশন ভবনটি যাতায়াতের জন্য পাবলিক সার্ভিস স্টেশন থেকে অনেক দূরে হওয়ায় বাংলাদেশীদের জন্য ট্যাক্সিক্যাবই ভরসা। হেঁটে যেতে চাইলে অনেক সময় পুলিশি ঝামেলাসহ নানা সমস্যায় পড়তে হয়।

হাইকমিশনের সামনের রাস্তায় অপেক্ষারত ট্যাক্সিক্যাবগুলোও বাংলাদেশীদের হয়রানি করছে। কমিশন ভবনের সামনে থেকে আম্পাং পার্ক এলআরটি (লাইট রেল ট্রানজিট) স্টেশনের ভাড়া মিটারে ৫ রিঙ্গিত হলেও সেখানে জনপ্রতি ভাড়া হাঁকছে ৫ রিঙ্গিত করে। যাতায়াতের অন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে সে ট্যাক্সিতে ভ্রমণ করতে হচ্ছে হাইকমিশনে আগতদের।

তা ছাড়া হাইকমিশনের সামনের রাস্তায় সারি বেঁধে ভাত, রুটি-কলাসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন হকার বলেন, ‘দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এখানে আসে। এখানে অনেক সময় থাকতে হয়। আশপাশে খাবারের কোনো দোকান না থাকায় আমরা এ দোকান দিয়ে বসেছি।’

হাইকমিশনে ট্রাভেল পাস নিতে আশা আহসান হাবিব বলেন, ‘সকালে এসেছি একটা ট্রাভেল পাস নিতে, দুপুর হয়ে গেলেও এখনও তা পাইনি। কখন পাব তাও জানি না।’

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশী হাইকমিশনার মোহাম্মাদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অতি শিগগিরই এ দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে শিগগিরই হাইকমিশন ভবন স্থানান্তর করা হবে।’

দ্রুত সমস্যাগুলো কাটিয়ে প্রবাসীদের কল্যাণে হাইকমিশন আরও বেশি করে কাজ করবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ হাইকমিশনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘হকারদের এ দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হলেও ক’দিন পর তারা আবার চলে আসে। বাংলাদেশী নাগরিক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। এতে স্পর্শকাতর কিছু বিষয় রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘হাইকমিশনের জন্য নতুন ভবন খোঁজা হচ্ছে, সেখানে এমনটি আশা করি হবে না। সেখানে ক্যান্টিন থাকবে।’

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা রাশেদ বাদল বলেন, ‘হাইকমিশনের মাধ্যমেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের পরিচয়। হাইকমিশন যদি স্বচ্ছ, সুন্দর ও গোছানো থাকে তাহলে প্রবাসে আমাদের ভাবমূর্তি এমনিতেই উজ্জ্বল থাকবে। সে ক্ষেত্রে দালাল এবং হকারমুক্ত করতে হবে দূতাবাসকে।’

তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়াতে পেশাজীবী, শ্রমজীবী, ব্যবসায়ী ও ছাত্র মিলিয়ে মোট ৭-৮ লাখ বাংলাদেশীর বসবাস। অথচ আমাদের দূতাবাসে যেতে অনেকেই নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। সুতরাং এমন একটি জায়গায় দুতাবাস হওয়া উচিত যেখানে সবাই সহজে যেতে পারে।’

এশিয়া আফ্রিকা ইয়ুথ গভর্নমেন্টের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মাদ মহিউদ্দিন মাহি বলেন, ‘দালালদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে, না হলে দিন দিন বিদেশের মাটিতে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি তলানিতে ঠেকবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রবাসে বাংলাদেশীদের অভিভাবক হাইকমিশন। সুখে-দুঃখে হাইকমিশনের সহযোগিতা সবাই আশা করে। কিন্তু হাইকমিশন থেকে সে সহযোগিতা না পেয়েই মানুষ দালালের শরণাপন্ন হয়। এবং অনেক ক্ষেত্রে দালালদের হয়রানির স্বীকার হয়। যা কারো কাম্য নয়। সুতরাং সেবা কার্যক্রম খুব সহজ করতে হবে। দালালদের এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে ভালো সেবা প্রদানের মাধ্যমে।’

বাইনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইয়েদ মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘দালালরা ওখানে কেন? কেন মানুষের দালালের প্রয়োজন হয়। দালাল জেনেশুনেও মানুষ কেন ওদের কাছে যায়। যে সব কারণে মানুষের দালালের প্রয়োজন হয় সে কারণগুলো হাইকমিশনের উদ্যোগে মিটানো প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ফরম ফিলআপ বা ডিরেকশনের জন্য হাইকমিশন পার্টটাইমার যোগ্য লোক নিয়োগ দিলেই সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যায়।’

আপডেট: বাংলাদেশ সময়   ০৩:৫৩  অপরাহ্ণ, ১৯ জুন ২০১৫, শুক্রবার

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস ডট কম-এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না