Home / আন্তর্জাতিক / প্রবাস / মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে প্রতিনিধিদল ঢাকায়
মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে প্রতিনিধিদল ঢাকায়

মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে প্রতিনিধিদল ঢাকায়

বশির আহমদ ফারুক, মালয়েশিয়া করেসপন্ডেন্ট :
বিজনেস টু বিজনেস (বি টু বি) বা বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার বিষয়ে ৮ আগষ্ট শনিবার রাতে তিন দিনের সফরে ঢাকায় এসেছে মালয়েশিয়ার ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ওহাব বিন মোহাম্মদ ইয়াসিনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের ওই প্রতিনিধি দল ১৭ আগষ্ট পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করবে বলে বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার কন্স্যুলার মো: সায়েদুল ইসলাম মুকুল জানিয়েছেন।

এ দিকে বাংলাদেশের শ্রমিক রফতানির বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকারের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসার একদিন আগেই চলে এসেছে দেশটির ‘বিতর্কিত’ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান রিয়েল টাইমের প্রতিনিধিরা। কোম্পানির নির্বাহী চেয়ারম্যান দাতো আবদুল হাকিম হামিদির নেতৃত্বে ৫ সদস্যের দলটি শুক্রবার ০৭ আগস্ট মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছে। হামিদি ছাড়াও দলটিতে রয়েছেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত দাতো আবু হানিফ বিন মো. আবুল কাশেম, দাতিন নূর ফিরজানা, অপারেশন ম্যানেজার রসলি বিন আব ঘানি এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্বাস আলী। রিয়েল টাইম দলটি সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করছে। সরকারি পর্যায়ে আলাপের আগেই শনিবার বায়রা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন রিয়েল টাইমের নেতারা। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমিক নেয়ার প্রক্রিয়াটি এককভাবে নিতে চাইছে রিয়েল টাইম নেটওয়ার্ক এসডিএনবিএইচডি নামে মালয়েশিয়ার এক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। আর এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে বাংলাদেশের সরকারিভাবে বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের পর মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণে উভয় দেশের মধ্যে জি টু জি (সরকার টু সরকার) চুক্তি হয়। ওই চুক্তির আলোকে ২০১৩ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। তবে এ সংখ্যা খুবই কম। চুক্তির পর সদ্য সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, জি টু জি পদ্ধতিতে বছরে এক লাখ কর্মী যাবে মালয়েশিয়ায়। কিন্তু গত দুই বছরেরও বেশি সময়ে আট হাজারের মতো কর্মী গেছে দেশটিতে। জি টু জি ফ্লপ করায় বিভিন্ন মহল থেকে ক্ষোভ ও দাবি তোলা হয় জি টু জি চুক্তি বাতিল করে মালয়েশিয়ায় প¬্যান্টেশনসহ অন্যান্য খাতে লোক পাঠানোর জন্য।

এদিকে বৈধপথে সুযোগ না পাওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ সাগরপথে জীবনবাজি রেখে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে জাহাজে ভাসমান, থাইল্যাণ্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার উপকূলে হাজার হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়, যাদের মধ্যে বাংলাদেশীও রয়েছেন। এ ছাড়া থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পাচার হওয়াদের গণকবর আবিষ্কার হওয়ায় বিষয়টি নাড়া দেয় সবাইকে। এরই মধ্যে মালয়েশিয়ায় সফরে যায় ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি দল। সরকারের উচ্চপদস্থদের মালয়েশিয়া সফরের সময় দেশটিতে জি টু জির পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে (বি টু বি) বিপুলসংখ্যক শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা আসে, যা সর্বমহলে সাড়া জাগায়।

৮ আগষ্ট রাতে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব খোন্দকার ইফতেখার হায়দার টেলিফোনে আলাপ কালে এ প্রতিবেদককে জানান, বিপুলসংখ্যক কর্মী কোন পদ্ধতিতে যাবে, বাছাই প্রক্রিয়া কেমন হবে, সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিনিধি দল আমাদের সঙ্গে আলোচনা করবে।
বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রা সভাপতি আবুল বাশার বলেন, মালয়েশিয়ান প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে আসছে। কীভাবে কর্মী যাবে, কোন পদ্ধতিতে যাবে, বেতন-ভাতা বা সুযোগ-সুবিধা কি হবে এ সব বিষয় নিয়ে প্রতিনিধি দল আলোচনা করবে।’তিনি বলেন, এটুকু বলতে পারি, বাংলাদেশ থেকে যারা যাবেন তাদের সেখানে নিরাপত্তা, ইন্স্যুরেন্সসহ নানা সুবিধা থাকবে। অভ্যন্তরীণ খরচ বাদে কর্মীদের কোনো খরচ হবে না। আমরা (রিক্রুটিং এজেন্সি) মালয়েশিয়ান নিয়োগকর্তার কাছ থেকে কমিশন পাব মাত্র।’

তবে সরকারের জোরালো মনিটরিং ছাড়া বাজারটিতে আবারও দালালদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।