Home / ফিচার / মমতাময়ী মা সন্তানকে হত্যা করে না!
মমতাময়ী মা সন্তানকে হত্যা করে না!

মমতাময়ী মা সন্তানকে হত্যা করে না!

পুত্রবধূর গালি সকাল বিকাল। কখনও ডাইনি, কখনও একচোখি-লেঙড়ি (খুঁড়া), বুড়ি ইত্যাদি। একমাত্র আদরের সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে সংসারে পড়ে আছে জননী মা। ছেলে না পারছে মাকে সান্ত¡না দিতে, না পারছে বউকে বুঝাতে।

বউয়ের চাপে একদিন নতুন বাসায় রওনা দেয় ছেলে, একা বাসায় মাকে ফেলে। ভ্যানে উঠার আগে ছেলের হাতে একটি ব্যাগ দিয়ে বলে, বাসায় নিয়ে খুলবি। বাসায় এসে খুলে দেখে মায়ের গয়না আর কিছু টাকা, স্লিপে লেখা কম বেতনের চাকরিৃ কি খাবি বাবা?

এগুলো বিক্রি করে যা পাবি খরচ করিস, আর যে খামটা দিলামৃ আমি না বলা পর্যন্ত খুলবি না। ছেলে চিন্তাও করে না, আমার বৃদ্ধা মা একা ওই বাসায় কেমন করে থাকবে।

সপ্তাহ পার না হতেই ছেলের মোবাইলে প্রতিবেশীর ফোন। তোমার মায়ের ঘরের দরজা ২ দিন থেকে বন্ধ। ছেলে এসে দরজা খুলতে ব্যর্থ হয়। ভেঙে ভেতরে ঢুকেই দেখে মায়ের নিথর দেহ মেঝেতে পড়ে আছে।

দাফন শেষে হতভাগা ঘরে ফিরে মায়ের দেওয়া খামটি খুলে। লেখা রয়েছেÑ ‘আমি অন্ধ বলে খোড়া বলে তোর বউ আমাকে কানি-লেঙড়ি নানা ভাষায় বকা দিত, রাত করে বাসায় ফিরে তোর সময় হয় না আমার খবর নেওয়ার, কি খেলাম কেমন আছি! আজ বলি শোন, তোর বয়স তখন তিন বছর। তুই নানার বাড়ির পাশে বড় সড়কে উঠে গিয়েছিলি, অমনি ট্রাক আসতে দেখে আমি দৌড়ে তোকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই, কিন্তু আমার ডান দিকটা চাপা পড়ে যায়। আমার ডান পা কেটে ফেলা হয় আর ডান চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তবু তো বাবা তোর কিছু হয়নি। আমি মরে গেলেই তো তুই বেঁচে যাবি বাবা।’

নিজেকে শেষ করে সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখে যে মা সে কেমন করে হত্যাকারী হয় নিজ সন্তানের?

কথায় আছে, ‘সন্তান যখন ঘরের বাইরে বিপদে পড়ে যায়, কাক-পক্ষিও না জানিতে আগে জানে মায়।’ আরও বলা হয়, ‘নারী ছেড়া ধন, করিয়া যতন বড় যে করে, তার সামনে টোকা দিতে শয়তান ও ডরে!’ চিল সহজেই মুরগি বাচ্চাকে ছোঁ মেড়ে নিয়ে যেতে পারে না। দুই পাখায় আগলে রাখে। গরু-মহিষ, সিংহ-বাঘসহ সব পশুরাই তার সন্তানকে বুকে আগলে রাখে, যেন তার সন্তান শত্রুর কবলে না পড়ে।

সৃষ্টির সেরা মানুষ তথা মমতাময়ী মা কেন তার সন্তানকে হত্যা করবে। সম্প্রতি পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী রাজধানীর বনশ্রীতে মা মাহফুজা তার নিজের দুই সন্তান অরনি ও আলভীকে হত্যা করার খবরে দেশব্যাপী তোলপার শুরু হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে ওলামা-মাশায়েখ, ছাত্র-শিক্ষক, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী আমলা সবার মধ্যে একটাই আলোচনা ঘটলটা কি? এ কিভাবে সম্ভব? চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে, চলবেও দীর্ঘদিন। কেন ঘটছে এসব?

পারিবারিক বন্ধন ভেঙে ফেলা, সামাজিক অবক্ষয়, হিংসা-বিদ্বেষ বৃদ্ধি, দয়া-মায়া-মমতা-সম্পর্ক অর্থ-স্বার্থ কেন্দ্রিক হওয়া, খোদাভীতির শিক্ষা বা চর্চা না থাকা এবং দিনে দিনে তাকে নিরুৎসাহিত করার ফল কি এগুলো?

অনেক সমাজ বিজ্ঞানী এ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। ওলামা মাশায়েখরাও তাদের সাধ্যমতো গবেষণা করে এর কারণ বের করে মসজিদের খুতবায় মানুষকে সতর্ক করতে এবং মানুষকে সামাজিক বন্ধনের গুরুত্বের ওপর ইসলামের শিক্ষা দিতে পারেন।

লেখক : আলী আবদুল মুনতাকিম, গবেষক ও প্রকৌশলী