Home / উপজেলা সংবাদ / মতলব উত্তর / মতলবে ইলিশ জেলেদের দুর্দিন : সহায়তার অপেক্ষায় জেলেরা
ilish Jele
ফাইল ছবি

মতলবে ইলিশ জেলেদের দুর্দিন : সহায়তার অপেক্ষায় জেলেরা

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল হতে লক্ষীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১শ কিলোমিটার মেঘনা নদীর এলাকায় দু’মাস সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে মৎস ও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর।

দেশের ইলিশ সম্পদ রক্ষায় জাটকা নিধন প্রতিরোধ কর্মসূচির আওতায় ২০০৬ সাল থেকে চাঁদপুরের মেঘনাসহ দেশের ৪টি অঞ্চলে মার্চ এপ্রিল দু’মাস ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে।

‘নদীতে ইলিশ ধরা, মজুদ, বিক্রি ও পরিবহন নিষিদ্ধ।’ এ নিষেধাজ্ঞা জারির মাইকের আওয়াজ ভাসে মতলবের মেঘনা নদী পাড় মিলনায়তনে জেলে পল্লী গ্রাম থেকে গ্রামে। মৎস্যজীবীদের জন্য আগাম সতর্কতা।

ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়, নির্দেশ অমান্যকারীর শাস্তির কথা। আর এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে মার্চ থেকে দু’ মাসের ছুটিতে মৎস্যজীবীরা। তাই জেলে পল্লী এলাকার গ্রামগুলোতে কোনো কাজ নেই। শুধু জেলে নয়, মাছ ধরার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী, শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, এমনকি ক্ষুদ্র্র চা-পান দোকানিদের জীবনেও স্থবিরতা নেমে এসেছে।

কমে গেছে নিত্যদিনের আয়-রোজগার। চাঁদপুরের মতলবের ষাটনলের জেলে পল্লী, মোহনপুরের বাহাদুরপুর, দশানী, এখলাছপুর, আমিরাবাদ, চরউমেদ,বাহেরচর,চরকাশিম বোরচর, মৎস্য ঘাট এলাকায় মানুষের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য মিলেছে।
বর্ষায় এসব অঞ্চলে কর্মজীবী মানুষের কোলাহল থাকলেও এখন প্রায় জনশূন্য। ছোট বাজার কিংবা ঘাটে বহু দোকানপাট সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। গ্রামে বেকার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে অস্বাভাবিক।
চলতি মাসের পহেলা তারিখ থেকে মেঘনাসহ উপকূলের ক’টি নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। জেলেরা এ নিষেধাজ্ঞাকে বলে ‘অবরোধ’। রাজপথের অবরোধ জেলেদের প্রভাবিত না করলেও সমুদ্র্র-নদীতে জলের অবরোধ তাদের জীবন ছুঁয়ে যায়।

এ নিষেধাজ্ঞা চলবে দু’মাস। এর আগেও কয়েক ধাপে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। ফলে মাছ ধরা পেশায় নিয়োজিত বহু মানুষের জীবনে নেমে এসেছে সংকট।
মতলবের ষাটনলের মালোপাড়া, বাহাদুরপুর, মোহনপুর,এখলাছপুর,আমিরাবাদ থেকে অনেক মানুষ কাজের সন্ধানে বাইরে চলে গেছেন বলে জানালেন স্থানীয় জেলে পরিবাররা।

ষাটনলের মালোপাড়ার কাছে চায়ের দোকানে আলাপ হয় জেলে প্রতিনিধি ইমাম হসেনের সাথে। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় তিন সদস্যের সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। এ সময়ে মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে নিয়েছেন প্রায় দশ হাজার টাকা। প্রতি হাজারে ছয় মাসে সুদ গুণতে হচ্ছে ১শ’টাকা।
এখলাছপুরের হাশিমপুর মাছ ঘাটের জেলে মো. রহিম বেপারী বলেন, ৩-৪ মাস ধরে কাজ নেই। ঘরের ৪ সদস্যের মুখে ভাত তুলে দেয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। কর্মহীন এ সময়ে মহাজন আর এনজিওর কাছে দেনা করেছেন প্রায় ২০ হাজার টাকা। ‘মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এবার সরকার থেকে এখনো কোনো ধরনের সহায়তা পাইনি।

গতবার পেয়েছি ৩০ কেজি চাল।’ মতলবের মোহনপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর খালের কিনারে তুলে রাখা বেশ ক’টি মাছ ধরা ট্রুলার। কিছু মানুষ জাল-নৌকা মেরামতের কাজ করছে। নদীতে দু’একটি মাছ ধরা নৌকা চোখে পড়ে। একইভাবে ঘাটের আশপাশের দোকানেও লোকজনের তেমন ভিড় চোখে পড়ল না।

অথচ এ এলাকা শত শত কর্মজীবী মানুষের কোলাহলে মুখর থাকত। এদিকে বিশেষ সময়ে নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও জেলেদের জন্য পুনর্বাসন সহায়তা একেবারেই কম বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিবছর এ সহায়তা দেয়া হলেও সব জেলের কাছে তা’পৌঁছায় না।

মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুর রহমান বলেন, ‘মেঘনায় নিষিদ্ধ সময়ে এক হাজার জেলেকে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে রিকশা, ভ্যান, হাঁস-মুরগি ও সেলাই মেশিন প্রদান করা হবে।’

খান মোহাম্মদ কামাল
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৬: ২০ পিএম, ১৪ মার্চ ২০১৭, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Leave a Reply