Home / শিল্প-সাহিত্য / বেশি কিছু আশা করা ভুল
বেশি কিছু আশা করা ভুল, মানুষের জীবন

বেশি কিছু আশা করা ভুল

এক.মানুষের জীবন পৃথিবীর চলমান প্রক্রিয়ার একটা অংশ মাত্র। নদীর উত্তাল ঢেউ, সাগরের জলরাশি তীরের বুকে আছড়ে পড়ার শব্দ, সময়ের অবিরাম ঘূর্ণন- কোনোকিছুই থেমে থাকে না, চলতে থাকে অবিরাম। পৃথিবীতে কেউ হঠাৎ করে থেমে গেলে অন্যরা থেমে থাকে না, চলতে থাকে। চলতা-ই জীবনের ধর্ম, আর যে থেমে যাবে সে-ই হারিয়ে যাবে অন্ধকার অতলের মাঝে।

আমার জীবনেও এমন অনেক মুহূর্ত ছিলো, যখন আমি সাময়িক থেমে গিয়েছিলাম। আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম মুহূর্তের জন্যে অন্ধকারের বিশাল আবর্তে। সেই অন্ধকারের বুক থেকে আবার ভেসেও উঠেছি কিছুটা সময় অতিবাহিত করে। মাঝপথে থেকে গেছে জীবনের কিছু চাওয়া-পাওয়া ও না বলা কথামালার হিসেব-নিকেশ। আজ সেই কাহিনীই বলবো :

দুই. একমাত্র সন্তান মৌমিতাসহ গতকাল আমার স্ত্রী রুবা তার নানার বাড়ি কুমিল্লা কোর্টবাড়ি বেড়াতে গিয়েছে। সে জানিয়েছে সেখানে দিনকয়েক থাকবে। তার মামাদের সাথে আনন্দে কাটাবে কোর্টবাড়ির অপূর্ব দৃশ্যাবলী দু’নয়নে অবলোকন করে। আমাকেও যেতে বলেছিলো, কিন্তু আমি অফিসের কাজের প্রচণ্ড চাপে তার সাথে সারথী হতে পারিনি।

বরষার এক ক্লান্ত বিকেল। বাসায় আজ আমি একা। বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। বাতায়ন খুলে রেখে অঝোর বৃষ্টির ফোঁটাগুলোর পতন দেখছি। সেই সাথে বৃষ্টির গুনগুন সংগীতধ্বনি আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করে হৃদয়কে অজানা এক আবেশে-ভালোবাসায় ভরিয়ে তুললো।

মনে পড়ে, ছোটকালে যখন স্কুলে পড়তাম, তখন শ্রাবণের এই অঝোর ধারাপাত- বৃষ্টির দিনে বন্ধুরা মিলে বাইরে বের হতাম। ভিজতাম অপূর্ব সুখে। এরপর হতো জ্বর। মা বকুনি দিতেন। কিছুই গ্রাহ্য করতাম না।

আজ সেই অপূর্ব স্মৃতি বিজড়িত বন্ধুরা কেউই আর গাঁয়ে নেই। সবাই জীবন ও জীবিকার তাগিদে কোথায় যেনো চলে গেছে অজানার ভীড়ে।

হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেলো কলেজ জীবনের চমৎকার সব স্মৃতি কথা। মনে পড়ে গেলো, কলেজ বন্ধুদের কথা। ভাবনার রাজ্যে একের পর এক দৃশ্যপট পরিবর্তিত হতে লাগলো সেলুলয়েডের রঙিন দৃশ্যাবলীর মতো। আমি চোখ বন্ধ করে জেগে জেগেই দেখতে লাগলাম সেই পুরোনো স্বপ্নগুলো।

হঠাৎ করেই আমার সামনে আবির্ভূত হলো কলেজ জীবনের বন্ধু সুমন আহমেদ, ইরফান, নয়ন, মামুন, সুরুজ, মুজিব, পল্লব, আব্বাস, নিজাম, তুহিন, শাকিল, সূর্যসেনসহ স্মৃতিভাণ্ডারে সঞ্চিত বন্ধুদের হাসি-খুশিমাখা সবুজ স্মৃতিগুলো।

শুনেছি সুমন এখন ঢাকায় থাকে। একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে ডিজাইনার হিসেবে চাকুরি করে। বিয়ে করেছে। সবমিলে ভালোই আছে। ইরফান সরকারি চাকুরি করে। সুরুজ আছে কি সব লেখালেখি নিয়ে, ব্যবসাও আছে কয়েকটি। শাকিল থাকে দেশের বাইরে, বাহরাইন। সূর্যসেন একটু পাগলা কিসিমের। এখনও নাকি মাঝে মাঝে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে দু’চার দিন ঘুমের ঘোরে পড়ে থাকে। মুজিব প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। পল্লব একজন নামকরা লেখক, তার লেখা বাজারে ছাড়ার আগেই বই বিক্রির তালিকা পড়ে যায়। ভাবছি …. ভাবছি ….।

এরপর হঠাৎ করেই ভাবনার দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়ে গেলো। মস্তিস্কের একটি অন্ধকার প্রকোষ্ঠ। সেখানে ধুলো-বালি বিস্তর। আমি খুঁজতে থাকলাম আরো কিছু স্মৃতিভাণ্ডার। সেই স্মৃতিভাণ্ডারে উদয় হলো আমার এক ক্লাসমেট, যাকে আমি বোন বলে ডেকেছিলাম। সেও আমাকে মায়ের পেটের ভাইয়ের মতোই স্নেহ করতো। তার নাম সেলিনা খান। খান পরিবারের মেয়ে। সবাই তাকে ভালো জানতো।

সেলিনা আপু, আমাকে সব সময় যেনো আগলে রাখতেন বোনের মতো। যদিও একই ক্লাসে পড়তাম কিন্তু তিনি আমাদের সিনিয়র ছিলেন এক সময়। বয়সে এক বছরের বড়। তাই তিনি সবসময় আমাকে শাসন-স্নেহ করতেন। আমি তার শাসন-বারণে কান দেইনি। ফলে যা হবার তা-ই হলো। আমি বেলাশেষের রক্তিম আভায় অজানা মায়া ও মোহের ফাঁদে পড়ে জীবনের সব লেনদেন সম্পর্কে সরেজমিনে অবগত হলাম। জীবনের এই অধ্যায়ে এসে আমি যেনো অথৈ সাগরের মাঝে হাবুডুবু খেতে লাগলাম।

মারিয়ার সেই হাসিমাখা মুখখানা আজও আমার চোখে ভাসে। হাসলে তার গালে মৃদু টোল পড়তো। সাদা বকের পালকের মতো রঙের দাঁত ছিলো তার। মেকি কোনো সাজসজ্জ্বা করতে হতো না তাকে, কারণ বিধাতা তাকে উজাড় করেই সর্বাঙ্গে রূপ-লাবণ্য ঢেলে দিয়েছিলেন- বেহিসাবিভাবে! আর সেটাই হলো আমার জন্যে পতনের কারণ। কারণ কথায় আছে না, ‘পতঙ্গের পাখা গজায় মরিবার তরে।’

তবে আমি স্বপ্নের পাখায় ভর করে সসীমের পানে ছুটতে গিয়ে মরতে মরতেও বেঁচে গিয়েছিলাম। সেই কাহিনীই আজ গল্প-কবিতার বন্ধুদের বলবো ধীরে ধীরে। হয়তো আপনারা কাহিনীর শুরুতেই কেউ কেউ আমার বালখিল্যতার জন্যে হেসে কুটিকুটি হবেন, কিন্তু বন্ধু! দেখুনই না, জীবনের পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে কি ঘটেছিলো আমার জীবনে!

তিন. আজকের এ দিনটিতে সূর্যের আলো পৃথিবীর জমিনে তার প্রখরতা বিস্তার করতে পারেনি আকাশের মেঘমালাগুলোর জন্যে। কারণ, কালো মেঘে ছেয়ে আছে সারা আকাশ। মাঝে মাঝে গুমগুম শব্দ হয়। এরপর আকাশের বুক চিরে দেখা যায় বিজলীর আলো। মনে হয় এখনই বৃষ্টি নামবে পৃথিবীর বুকে।

শুক্রবার। ছুটির দিন। এ পবিত্র দিনটিতে সকালবেলা আমি খুব দেরি করে ঘুম থেকে উঠি। আজও তাই ঘুমুচ্ছি। কিন্তু কলিংবেলের তীব্র শব্দে ঘুম টুটে গেল। আমি শয্যা ত্যাগ করে ঘুমজড়ানো চোখে উঠে আস্তে আস্তে দরজা খুললাম। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে খুব স্বাস্থ্যবতী একজন মহিলা। পরনে কালো বোরকা। তার চোখ দুটি আমাকে অবলোকন করছে নিবিড়ভাবে।

তার সাথে সাত-আট বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে। মহিলার মায়াময় চোখ দুটি কেনো যেনো চেনা চেনা মনে হচ্ছে। হয়তো যেনো কোথাও দেখেছি। আমি জিজ্ঞাসু নেত্রে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম তার চোখের সীমানায়। তারপর স্মৃতির গহীনে কোনোকিছু হাতড়ে না পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কাকে চান আপনি?’

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আগন্তুক। তারপর বললো, ‘মি. সবুজ সিদ্দিকী, তুমি আমাকে চিনতে পারছ না? আমি মারিয়া।’ আস্তে আস্তে নেকাব খুললো সে।

‘তুমি মারিয়া!’ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। ‘এতো বছর পরে! কী মনে করে? আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না।’

মারিয়াকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসালাম। মারিয়া এতোদিনে খুব মোটা হয়েছে। আগের সে হাল্কা-পাতলা মারিয়া আর বর্তমানের মারিয়ার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। অবয়বে বয়সের ছাপ, চুলগুলো এলোমেলো। কেমন যেনো মহিলা মহিলা ভাব তার।

আমার স্ত্রী রুবা এলো এ সময়। সে মারিয়া’র দিকে তাকিয়ে আমাকে বললো, ‘কে উনি?’ ‘ওর নাম মারিয়া।’ আমি নিরুদ্বেগে উত্তর দিলাম।

মারিয়া হাসলো। সে রুবার দিকে তাকিয়ে আমাকে বললো, ‘তুমি রুবাকেই বিয়ে করছো?’

‘হ্যাঁ।’ শীতল কণ্ঠে উত্তর দিলাম। রুবা এ সময় বললো, ‘তোমরা কথা বলো, আমি বরং নাস্তা নিয়ে আসি।’ চলে গেল সে।
‘কেমন চলছে তোমাদের জীবন? নিশ্চয়ই ভালো।’ মারিয়ার কণ্ঠে যেন বিষাদের সুর।

‘রুবার মতো মানুষই হয় না। খুব ভালো মেয়ে সে। ও যেদিন আমার ঘরে এলো, সেদিন থেকে আমার ঘরটি সৌভাগ্য ও ভালোবাসায় ভরপুর হয়ে গেছে। আমি না বুঝে একদিন উত্তেজিত হয়ে ওকে একটা চড় মেরেছিলাম। ও জবাবে কী বলেছিলো জানো?’
‘কী বলেছিলো?’ নিরুত্তাপ কণ্ঠে বললো মারিয়া।

‘বলেছিলো, আমি যেখানে থাপ্পড় মেরেছি, সে জায়গাটা নাকি বেহেস্তে যাবে।’

অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো মারিয়া। মুখ বাঁকিয়ে সে বললো, ‘আমি কোনোদিন আমার স্বামীর সাথে কথা কাটাকাটি হলে একমাসও তার সাথে কথা বলতাম না। হাতে-পায়ে ধরে তারপর আমার সাথে কথা বলতো!’

মারিয়ার এ কথাটা যেন আমাকে চপেটাঘাত করলো। কারণ, নিয়তির খেলায় আমিও মারিয়ার স্বামী হতে পারতাম। আর মারিয়ার স্বামী হতে পারিনি বা তাকে পাইনি বলেই তো আমি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েছিলাম। অথচ আজ জীবনের মধ্যপ্রান্তে এসে মারিয়ার আসল রূপ আমার সামনে উন্মেচিত হয়ে গেলো। ‘ভালোবাসার ঠুনকো আবেগী জীবন’ আর ‘বাস্তবতায় মেশানো সুখÑদুঃখে গড়া বিবাহিত সংসার জীবন’-এ দুটো যে এক নয়- তা’ আমার সামনে মারিয়া আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

আজ আমি বুঝতে পেরেছি যে, স্রষ্টা মানুষের মঙ্গলের জন্যে অনেক কিছু করে, অজ্ঞতাসূলভ আমরা হয়তো তা’ অপছন্দ করি। কিন্তু এর মধ্যেই যে মঙ্গল নিহিত থাকতে পারে, আমরা সাধারণ জ্ঞানে তা’ বুঝতে পারি না। আমি এটা শিওর যে, মারিয়াকে বিয়ে করলে, সে আমার জীবনটা ভাজা ভাজা করে দিতো। কারণ, মারিয়া আমার ভালোবাসাকে যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি।

ভালোবাসাকে টাকার অঙ্কে পরিমাপ করা যায় না। অথচ মারিয়া ভালোবাসে টাকা, বিত্ত্ব, প্রতিপত্তি। অর্থ, বিত্ত্ব, আর আভিজ্যাত্যের নেশায় সে আমার আকাশ পরিমাণ ভালোবাসাকে সে সময় মূল্য না দিয়ে নিষ্ঠুরের মতো আমাকে পরিত্যাগ করে বিয়ে করেছিলো আমেরিকা প্রবাসী এক ধন্যাঢ্য সুপুরুষকে। পুরোনো দিনের এসব কথা ভাবতে ভাবতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি।
‘কি ভাবছো?’ প্রশ্ন করলো মারিয়া।

‘তোমার স্বামী কোথায় মারিয়া?’ আমি তাকে প্রশ্ন করলাম।
‘আর স্বামীর কথা বলো না। কোথায় থাকে, কোথায় খায়- সেটা সে-ই জানে। মাসে হয়তো একদিন আসে বাসায়। আবার চলে যায়। বড় ব্যস্ত মানুষ সে।’

‘কেন, কী করে সে?’
‘ব্যবসা- কন্ট্রাক্টরি করে। ঢাকা-চিটাগাং বিভিন্ন জায়গায় তার কাজ। আমাকে সময় দেবার সময়ই নেই তার কাছে। টাকার পেছনে লেগে থাকে আঠার মতো। যেন টাকা ছাড়া আর কিছুই নেই চাওয়া-পাওয়ার!’

আমি বলতে চেয়েছিলাম, মারিয়া তুমিও তো তাই চাইতে। তোমার কাছে তো টাকাই ছিলো সবচেয়ে বড়। আর আমার সেটা ছিলো না বলেই তো তুমি আমাকে গোলকধাঁধায় ফেলে টাকাওয়ালাকে বেছে নিয়েছিলে।

আমি মারিয়াকে সে কথা বলতে পারিনি। পারবোও না। এটা বলার কোনো ব্যাপার নয়, উপলব্ধির ব্যাপার। অনেক কথা অনেক সময় বলা হয় না আমাদের, বুঝে নিতে হয়। আর যারা সময় মতো তা’ বুঝতে পারে না, কঠিন খেসারত দিয়ে সে ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করতে হয়।
আমি মারিয়াকে প্রশ্ন করলাম, ‘তোমার কয়টি সন্তান?’

‘এক ছেলে, এক মেয়ে।’ ‘তাহলে তো তুমি খুব সুখী। তাই না?’ ‘সুখী!’ হাসলো মারিয়া। ‘সুখ কী তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।’
‘কেন, কী হয়েছে?’ ‘হ্যাঁ, তুষার আজ তোমাকে বলা প্রয়োজন। বড় ভুল করেছিলাম জীবনে। বেশি কিছু আশা করেছিলাম আমি। আমি জানতাম না যে, বেশি কিছু আশা করা ভুল। আমি যা চেয়েছিলাম তা’ আমার স্বামীর মধ্যে ছিলো না।’

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল মারিয়া। তারপর বললো, ‘একদিন আমার সবকিছুই ছিলো, তোমার কিছুই ছিলো না। আজ তোমার সব চাওয়া-পাওয়া, সুখ-শান্তি, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা সবই আছে। আরো আছে একজন লেখক হিসেবে সুখ্যাতি। তোমাকে আজ শুধু দেশেই নয়; ইউরোপ আমেরিকাতেও মানুষ চেনে, জানে। আর একটি সিদ্ধান্তের ভুলে আজ আমার জীবনে কিছুই নেই। শূন্য, নিঃশ্ব, রিক্ত, বড় একা আমি। আমাকে কেউ চেনে না, ভালোবাসে না।’ দু’হাতে মুখ ঢেকে ঝরঝর করে কেঁেদ ফেললো মারিয়া।

আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। আমার ছোট্ট মেয়ে মৌমিতা ছুটে এলো। আমাকে জড়িয়ে ধরে প্রশ্ন করলো, ‘বাবা উনি ছোটদের মতো কান্না করছেন কেন?’

‘মানুষ অতি বড় হতে গেলে কখনো আবার অতি ছোট হয়ে যায়, মা-মণি। তোমার আন্টিও বড় না হতে পেরে ছোট হয়ে গেছে। তাই ছোট মানুষের মতোই কাঁদছে; বুঝেছ?’

মৌমিতা ঘাড় কাত করলো। মানে সে বুঝেছে। তারপর প্রশ্ন করল, ‘বাবা তুমি কি বড় হওনি কোনোদিন?’ ‘না বাবা, আমি বেশি বড় হতে চাইনি; তাই ছোটও হতে হয়নি, কাঁদতেও হয়নি আমাকে। তবে আমার কর্মই আমাকে বড় হতে সাহায্য করছে।’

এমন সময় রুবা এলো। মারিয়াকে কাঁদতে দেখে সে বললো, ‘আরে! কাঁদছেন কেন? আমি তো মনে করেছি এতোকাল পরে দু’বন্ধুর দেখা হয়েছে, আনন্দ-খুশিতে মেতে উঠবেন আপনারা। তা’ না, দেখি কাঁদছেন। বুড়ো মানুষদের বাচ্চা ছেলেমেয়ের মতো কাঁদতে নেই।’
রুবার কথা শুনে কান্না ভুলে হেসে উঠলো মারিয়া। সে বললো, ‘ভাবী, এখনো আমি বুড়ো হয়ে যাইনি; শুধু একটু মোটা হয়েছি এই যা।’
মৌমিতা আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠলো, তারপর বললো, ‘আন্টি জানো, বাবা না তোমার একটি ছবি বড় করে বাঁধিয়ে রেখেছেন।’
অবাক হলো মারিয়া। সে বললো, ‘আমার ছবি? কই! কোথায়?’
‘আব্বুর শোবার ঘরে।’

মারিয়া আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো। তারপর মৌমিতাকে নিয়ে শোবার ঘরে বাঁধিয়ে রাখা মারিয়ার ছবিটির পানে অপলকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। এরপর স্বপ্নভঙ্গের মতো নিজের চক্ষু রগড়াতে রগড়াতে আমাকে প্রশ্ন¬ করলো, ‘আমার এই ছবিটি তোমার কাছে এখনো আছে?’

আমি নিশ্চুপ। রুবা বললো, ‘আপনাকে এক সময় বড় বেশি ভালোবাসতো সবুজ সিদ্দিকী। একদিন আমি তার ডায়েরীতে হঠাৎ করে এই ছবিটা দেখতে পেয়ে ওর কাছে জানতে চাইলাম, কার ছবি এটা? সে বললো, এটা এখন শুধুই ছবি; তবে কার সেটা জানার প্রয়োজন নেই। আমি বললাম, যারই হোক ছবিটা দেখতে খুব সুন্দর। ঠিক যেন দেখতে মোনালিসার মতো। এই ছবিটা তুমি বাঁধিয়ে রাখো। পরে আমার অনুরোধেই সে ছবিটা বড় করে বাঁধিয়ে রাখে।’

বিস্ময়ের ঘোর এখনো কাটেনি মারিয়ার। সে রুবাকে বললো, ‘আপনি মহিয়সী মিসেস রুবা। আপনার তুলনা হয় না। সবুজ সিদ্দিকী আপনাকে বিয়ে করে ঠিকই করছে। তার সাথে আপনাকেই মানায়। আমাকে নয়।’

রুবা হাসলো। তারপর বললো, ‘হ্যাঁ, হয়তো আপনার ভাষায় আমি মহিয়সী হতে পারি। কিন্তু এটাও ঠিক যে, শুধু আপনার কারণেই আমার স্বামী…’।
রুবা কথা শেষ না করতেই বলে ওঠলো মারিয়া, ‘হ্যাঁ আমার কারণেই সবুজ সিদ্দিকীর জীবনটা আঁধারে তলিয়ে যেতে বসেছিলো, আমি জানি।’

‘প্রথমে কিছুটা তা-ই মনে হয়েছিলো। কিন্তু আসলে একটা কথা ঠিক যে, ও আপনাকে ভালোবেসেছিলো এবং প্রতিদানে চরম আঘাত পেয়েছিলো বলেই আজ সে একজন লেখক হতে পেরেছে। না হলে হয়তো এমন আগুনে পোড়া শক্ত লোহার মতো সামর্থ্যবান লেখক হতে পারতো না। তার লেখনিতেও এমন লেখার চতুর্পদী উপজীব্য থাকতো না। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ মিস্ মারিয়া। আপনার ওই সময়ের অবহেলাই মি. সবুজ সিদ্দিকী’র জন্যে আশীর্বাদ হয়েছে।’

মারিয়া কোনো কথা বললো না। সে শুধু ফ্যালফ্যাল করে রুবার পানে তাকিয়ে রইলো।

আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, মারিয়া রুবা ঠিকই বলেছে। একজন লেখকের জীবনে অমূল্য কোনোকিছু পাওয়া মানে শেষ হয়ে যাওয়া। আর না পাওয়া বা অতৃপ্তি একজন লেখককে বড় করতে সাহায্য করে। যে লেখকের মনে অতৃপ্তি থাকবে না, সত্যিকারার্থে সে কোনোদিন বড় লেখক হতে পারবে না।

আমার জীবনের সব অতৃপ্তিগুলোকে যখন বিন্দু বিন্দু করে সাজাতে বসি তখনই কেমন করে যেন একটি গল্পের কাঠামো, কবিতার দৃশ্যকল্প হয়ে একটি কবিতা হয়ে যায়। আর তখন আমি সত্যিই অবাক হয়ে যাই- এ কেমন করে আমার দ্বারা সম্ভব হলো। এটা তো আমি করতে চাইনি, অথচ আমার দ্বারাই তা হয়ে গেলো। তুমি শুনলে অবাক হবে মারিয়া তোমাকে নিয়ে লেখা উপন্যাসটি এবারের একুশের বইমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে এবং সে জন্যে আমি ৩ লাখ টাকা রয়্যালিটি পাচ্ছি।’

‘তাই নাকি! তাহলে তো অবশ্যই আমাকে মিষ্টি খাওয়াতে হবে।’ শত দুঃখের মাঝেও যেন উচ্ছ্বসিত হলো মারিয়া।

এমন সময় রুবা মিষ্টি-দধি নিয়ে এলো। তারপর সবাইকে বিতরণ করলো। মারিয়া একটি রসগোল্লার অর্ধেক মুখে দিয়ে খেতে খেতে প্রশ্ন করলো, ‘তোমার উপন্যাসটির নাম কী দিয়েছো?’ ‘বেশি কিছু আশা করা ভুল’। আমি উত্তর দিলাম। পুরো রসগোল্লাটা আর খাওয়া হলো না মারিয়ার। ঝাণ্ডুদার মতোই আধমিনিট থেমে রইলো সে।

টেবিলের সামনে রাখা মোমের আলো ক্ষয় হচ্ছে। এক সময় সম্বিৎ ফিরে পেয়ে মারিয়া সেই মোমের আলোর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর গালে হাত দিয়ে মোমের আলোর দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবতে লাগলো উদাসীভাবে। আমি আর কিছু বললাম না। ভুলের উত্তাপে মোমের মতোই ক্ষরণ হোক তার মনের কালিমা।

চার.
বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। পৃথিবী-মাঝে বরষার এই অপূর্ব সৃষ্টিশৈলী, নান্দনিক প্রকাশভঙ্গি আমার কাছে খুব ভালো লাগে। আমি বৃষ্টির ভক্ত। বরষার এই মোহনীয় সুর সংযোজন- বৃষ্টির জলই পারে মানুষের জীবনের সব কষ্ট, চাপা অভিমানকে ধুয়ে-মুছে দিতে।
আমি মারিয়াকে বললাম, ‘কী হয়েছে মারিয়া, মিষ্টিটা মুখে নাও।’

মারিয়া সম্বিৎ ফিরে পেয়ে রসগোল্লাটা মুখের ভেতর পুরে দিলো। তারপর বললো, ‘হ্যাঁ, তুমি এখন একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক হয়ে গেছো। এরপর আরো লিখবে, আরো বড় কিছু সৃষ্টি করবে। সমাজের বুকে আশার আলো জ্বালাবে। আর আমি? আমি কি করলাম, কিছ্ইু না। ঘোড়ার ডিম!
এমন সময় দরজায় করাঘাত, পরক্ষণেই কলিংবেলের তীব্র শব্দ। মৌমিতা গিয়ে দরজা খুলে দিলো।

আমি অবাক। ভাবতে লাগলাম আমার সিংহ রাশি কি পরিবর্তিত হয়ে কন্যা রাশিতে রূপান্তরিত হলো নাকি হে! আরো একজন মহিলা আমার দরজায়। কিন্তু তাকে কেমন যেনো চেনা চেনা লাগছে। কোথায় দেখেছি, কোথায় দেখেছি…। ভাবতে লাগলাম।

যেনো বজ্রপাত হলো। মহিলা আমার ভাবনা ছেদ করে উচ্চস্বরে বললো, ‘এই সবুজ সিদ্দিকী! চিনতে পারিসনি আমাকে?’
আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম।
‘আরে, আমি তোর সেই সেলিনা আপা।’

আমি যেনো স্বপ্ন দেখছি। সেলিনা আপু তুমি? তুমি না আমেরিকায় থাকো? কবে দেশে এসেছো? আমি তো তোমাকে চিনতেই পারছি না।’
‘চিনবি কি করে? তুই তো সারাদিন থাকিস্ কি সব গল্প-টল্প নিয়ে। আমেরিকায় থেকে একটা ওয়েব সাইটে দেখলাম তোর বইয়ের আলোচনা। তুই নাকি খুব বড় লেখক হয়ে গেছিস?’ পাশে মারিয়াকে দেখে প্রশ্ন করলো, ‘এটা কি তোর বউ?’

মারিয়া হেসে উঠলো। সে বললো, ‘সেলিনা আপু তুমি আমাকে চিনতে পারছো না? আমি মারিয়া।’ ‘ওহ, মারিয়া! তোমাকেও তো আমি চিনতে ভুল করলাম। আসলে মানুষ চেনা বড়ই কঠিন। ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়, আকাশের বেগ দেখে ঝড় চেনা যায়, মানুষকে …..।’

আপুর কথা শেষ না হতেই হেসে উঠলো মারিয়া। এমন সময় আমার স্ত্রী রুবা এলো। আমি বললাম, ‘আপু এই হচ্ছে আমার স্ত্রী-রুবা।’

রুবা আপুকে সালাম জানালো। তিনি তাকে আশীর্বাদ করলেন। তারপর মারিয়াকে বললেন, ‘মারিয়া সরি, অনেক বছর পর তোমাকে দেখে চিনতে পারিনি।’

‘আজ আর আমাকে কেউ-ই চিনতে পারে না সেলিনা আপু। তোমার কোনো দোষ নেই। সব আমার ভাগ্যের দোষ। আমার জীবনের অন্তিম সময়, আজ আমার সব থেকেও বড় একা আমি! বড় একা!’ প্রায় কেঁদে ফেললো মারিয়া।
সেলিনা আপু কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে মারিয়ার মাথায় হাত রাখলেন। আমি কী বলবো বা কী করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। যেনো গাধার মতো নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

পাঁচ.দীর্ঘক্ষণ কথা-বিরতি দিয়ে সেলিনা আপু রুবার হাতে একটি ব্যাগ দিয়ে বললেন, ‘এই নাও, তোমাদের জন্যে আমার কিছু উপহার।’
রুবা ব্যাগটি খুললো। প্রথমেই বেরিয়ে এলো একটি লাল টি-শার্ট। আপু বললেন, ‘সবুজ! এটা তোমার জন্যে। লাল টি-শার্ট তোমার খুবই পছন্দ, তাই না?’
রুবা হেসে উঠলো। সেই সাথে মারিয়াও। মারিয়া বললো, ‘হ্যাঁ, কলেজ জীবনে সবুজ সিদ্দিকী বেশিরভাগ সময়ই লাল টি-শার্ট পরতো। তখন তাকে হিরো হিরো লাগতো। একদম নায়কের মতো!’

‘আবারও হিরো হবে আমাদের সবুজ সিদ্দিকী। তবে এবার কলেজ অঙ্গনে নয়। সাহিত্য অঙ্গনে। মানুষের হৃদয়ে সাহিত্যের ছোঁয়া দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করবে চিরদিনের জন্যে।’

আমি হা হা করে হেসে উঠলাম। রুবা, মারিয়া এমনকি আমার ছোট্ট মেয়ে মৌমিতাও। মৌমিতা প্রশ্ন করলো, ‘আন্টি! রেড অ্যালার্ট কী?’

সেলিনা আপু মৌমিতাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। এরপর বলেন, ‘এটি একটি সতর্ক সঙ্কেত, মামণি। তুমি বড় হলে বুঝতে পারবে।’
‘না! আমি বড় হবো না। আমি আমার আব্বুর মতো মনকে বড় করবো। দেখুন না, আব্বুর মন বড় বলেই লেখালেখি করতে পারে। তাকে তাকে প্রায় সময়ই টিভিতে দেখি। কি মজা লাগে। আব্বুর মনটা অনেক বড়ো তো, তাই।’

বাইরে বৃষ্টিঝরার পানে তাকিয়ে ছিলো মারিয়া। মৌমিতার কথায় আবারও চমকে উঠলো সে। তারপর মৌমিতাকে লক্ষ্য করে বললো, ‘মামণি তোমাকে এসব কে শিখিয়েছে?’ ‘আমার মামণি’ দ্বিধাহীন কণ্ঠে জবাব দিলো মৌমিতা।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মারিয়া। তারপর আমার পানে তাকিয়ে বললো, ‘সবুজ! অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে তুমি তোমার উপযুক্ত একজন নারী পেয়েছো। এমন নারী পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার। বৃষ্টিমুখর এই মেঘলা দিনে আজ আমি উপলব্ধি করলাম- ভাগ্য আমার সাথে অনেক প্রতারণা করেছে। যা আমি তখন বুঝিনি, যখন বুঝলাম, তখন সব শেষ, কিছুই করার অবশিষ্ট নেই। তোমাদের সুখ দেখে আমি ধন্য, এতেই আমার সুখ, এটাই আমার পরম পাওয়া।’

বাইরে বরষার মাদল তখনও বাজছে মুষলধারে। বর্ষার এই শ্বাশত রূপ আর বর্তমান জীবনের এ ট্র্যাজেডিক অধ্যায় অপার অসীম অনন্ত জলধারার মাঝে যেনো একাকার হয়ে মিশে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। বৃষ্টির জলপতনের শব্দ নয়, যেনো হৃদয়-মাঝে মারিয়ার বুকের দীর্ঘশ্বাস- হাহাকার ভেসে ওঠে অবলীলায়। বর্ষা-বাদলের আকুল করা ছন্দে সেই হাহাকারগুলো এক সময় মিশে যায় মগ্ন নৈঃশব্দের ব্যঞ্জনা হয়ে।

এরপর একদিন বর্ষা তার অবিরল বর্ষণে মরা গাছে ফুল ফোটাবে হয়তো। পল্লবিত হবে বৃক্ষের সব শাখা, মৃত গাছেও হয়তো একদিন কচিপাতা গজাবে বৃষ্টির চির সঞ্জীবনী ছোঁয়ায়।

মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে। কেউ সফল হবে। আর কেউ প্রতারণা করে নিজকে সুখী করতে গিয়ে অন্ধকারের মাঝে হাবুডুবু খাবে- দীর্ঘশ্বাস ফেলবে অবিরত। তবুও জীবন চলমান, থেমে গেলেই হয় সব গোলমাল।

আজ বর্ষার এই স্নিগ্ধ মুহূর্তে আমার মনে হতে থাকে কবি মহাদেব সাহার অমর পঙ্ক্তিগুলো। আমি রুবা, সেলিনা আপু ও মারিয়ার সামনে উঠে গিয়ে কবির কবিতার কিছু অংশ আবৃত্তি করলাম ঃ

“বর্ষা আমার জন্মঋতু, তাকে জন্ম থেকে চিনি। তার প্রথম ফোটা কদম আমি অশ্র“ দিয়ে কিনি;/ সেই থেকে বর্ষা আমার গোপনে ভালোবাসা/মনে পড়ে মেঘলা দুপুর একলা ফিরে আসা,/ সেদিন এমন বর্ষা ঋতু এসব পাকা ধান/ সেদিনও কার চোখের জলে ভিজেছে গীতবিতান? এখন সেই বৃষ্টি ঝরে, এখনও ভেজে ধন/ দুয়ারে মেঘ শব্দ করে কাঁদে আমার মন, এই বর্ষা আমার জন্মঋতু আমি এসেছি বর্ষায়/ এখন ভাবি যাওয়ার কথা, মেঘ বলে যে, আয়।”

মারিয়া অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেলিনা ও রুবা আপু বাকরুদ্ধ। মৌমিতা কি বুঝলো জানি না। সে লাফিয়ে উঠে হাততালি দিতে লাগলো। আর মুখে উচ্চারণ করলো, ‘হুর রে!

জীবনের এমন ঘনঘোর বরষায়ও হেসে ফেললো মারিয়া। কিন্তু তার চোখে অশ্র“বিন্দু টলমল করছে। এক সময় সেই অশ্র“বিন্দু টুপটাপ করে ঝরে পড়লো তার শাড়ির মাঝে।

ঠিক সেই সময়ই বাইরে একটা কানফাটানো বজ্রপাত হলো। আমার মনে হলো এটা প্রকৃতির সৃষ্টি বজ্রপাত নয়, এটা মারিয়ার দীর্ঘশ্বাসেরই একটা ফসল। সে আমার বুকে বিশ্বাসঘাতকতার গরল ঢেলে দীর্ঘ বিশ বছরব্যাপী যে দাবানল তৈরি করেছিলো, আজ তা-ই তাকে আক্রান্ত করেছে, চরম আঘাত করেছে। সে নিজকে অর্থ-বিত্তের মায়ায় সুখী করতে গিয়ে পেয়েছে চরম লাঞ্ছনা। কিন্তু যাকে অবহেলে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো সেই সবুজ সিদ্দিকীই আজ খ্যাতি-বিত্ত-সুখ-শান্তির উচ্চশিখরে।

পরের জন্যে খাদ করলে সে খাদে নিজেকেই পড়তে হয়। মারিয়া আজ সেটাই উপলব্ধি করেছে। (গল্পটি কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। -লেখক)

মিজানুর রহমান রানা ||আপডেট: ১০:০১ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৫, সোমবার