Home / শীর্ষ সংবাদ / ‘চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুতের দায়ে’ বিলম্ব হচ্ছে মতলব সেতুর কাজ
‘চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুতের দায়ে’ বিলম্ব হচ্ছে মতলব সেতুর কাজ

‘চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুতের দায়ে’ বিলম্ব হচ্ছে মতলব সেতুর কাজ

চাঁদপুরের মতলব সেতুর কাজ চাঁদপুর পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের দায়ে বিলম্বিত হচ্ছে। কাজ শুরু থেকেই সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেতুর উভয় পাশের সংযোগ সড়ক নির্মাণে পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে বার বার তাগিদ দেয়া সত্বেও অন্তত: ২০টি বৈদ্যুত্যিক খুঁটি না সরানোর কারণেই সেতুর কাজ যথাসময়ে সম্পন্œ করতে বিলম্বিত হচ্ছে বলে চাঁদপুর টাইমসকে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

মতলব উত্তর ও দক্ষিণ তথা চাঁদপুরের সাথে ঢাকার দূরত্ব কমানো ও সময় বাচাঁতে এবং মতলববাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মতলব বাজার সংলগ্ন পূর্ব দিকে মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর মতলব সেতু নির্মাণের একটি বড় রকমের প্রকল্প হাতে নেয় চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

এর নির্মাণ কাজ ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশনা রয়েছে। সেতুর উত্তরপ্রান্ত বাইশপুরে এবং দক্ষিণ প্রান্ত বাবুরহাট-মতলব- পেন্নাই সড়কের ভাঙ্গার পাড়ে মিলবে।

এদিকে বর্ষা মৌসুম চলে আসায় ও প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণেও মাটি কাটার কাজ করা যাচ্ছে না। অথচ সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুমতি ব্যতীত পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ওই সবখুঁটি বিদ্যুৎ লাইন সংযোজনের সময় বসিয়ে ছিল।

বর্তমানে খুঁটিগুলো সেতুর উভয় পাশের সংযোগ সড়ক নির্মাণে সম-দূরত্ব বজায় রেখে সরানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে ।

এ ক্ষেত্রে চাঁদপুর পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ওইসব খুঁটিগুলো সরাতে প্রতিটির জন্য আলাদা আলাদাভাবে বড় অংকের টাকা দাবি করে আসছে বলে জানিয়েছে চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে ।

চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্তব্যরত একজন কর্মকর্তা চাঁদপুর টাইমসকে জানান, মতলববাসীর দাবির ফলে ও বর্তমান ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার আন্তরিক প্রচেষ্ঠায় ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মতলব সেতু নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেয়।

সেতুর দু’পাশের সংযোগ সড়ক ও এবার্টমেন্ট নির্মাণে এ বিভাগকে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে এবং এ খাতে প্রকল্পের ২৮ কোটি টাকা ভূমি অধিগ্রহণ বাবত প্রদান করতে হয়েছে। যথাসময়েই কাজ শেষ করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রকল্পটি নিয়মিত মনিটরিং করছে। কিন্তু পল্লীবিদ্যুৎ বিভাগের একধরনের উদাসীনতায় ও বিষয়টি গুরুত্ব না দেয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে।

তিনি আরোও বলেন, সম্প্রতি চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের বাবুরহাট থেকে ওয়্যারল্যাচ পর্যন্ত চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুমতি ব্যতীত পল্লীবিদ্যুৎ বিভাগের সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে নতুনভাবে খুঁটি বসানোর কাজে বাধা দিলে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বললে চাঁদপুর পল্লীবিদ্যুৎ বিভাগ খুঁটি বসানোর কাজ গুটিয়ে রাখে।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো.মনিরুল ইসলাম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে আমরা খুঁটিগুলো সরানোর উদ্যোগে নিয়েছি। সোমবার (২০ মার্চ) সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে আমাদের ডিমান্ড নোটের বিপরীতে চেক হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎও সরকারি একটি বিভাগ। আগে যখন পল্লী বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ করেছে, তখন রাস্তা এতো চওড়া ছিলো না, কেউ আমদেরকে তখন বলেনি, তাই ফাঁকা পেয়ে খুঁটি বসানো হয়েছিলো। এখন যেহেতু সংযোগ সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, সেহতু আমরা খুুঁটিগুলো দ্রুত সরানোর ব্যবস্থা করছি।’

প্রসঙ্গত, চাঁদপুর জেলায় অবস্থিত ধনাগোদা মেঘনার একটি শাখা নদী। এটি মতলব শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহমান। ১৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত উত্তর মতলব উপজেলা ওই নদীটির কারণে জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। অনুন্নত সড়ক যোগাযোগের কারণে খাদ্যশস্য এবং শিল্পজাত পণ্য স্বল্পসময়ে দেশের অন্যত্র পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। সেতুটি নির্মাণ হলে মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার ৭ লক্ষাধিক মানুষের যোগাযোগের সেতুবন্ধন তৈরি হবে সেতুটি । লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীসহ এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাও সহজতর হবে।

যদিও বর্তমানে উক্ত স্থানে একটি ফেরি চালু রয়েছে কিন্তু যাত্রী সাধারণ ও মালামাল পরিবহনের জন্য তা’খুবই অপ্রতুল এবং অধিক সময় ব্যয় হয়। এ প্রেক্ষাপটে সড়ক বিভাগ বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই সড়কে ৩শ’৪. ৫১ মিটার দীর্ঘ আরসিসি সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করে।

প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১২ সালের ৫ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ৯ জুন ২০১৩ সালে পুনরায় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেয়ার সুপারিশ করা হয়।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে ৩শ’৪ দশমিক ৫১ মিটার আরসিসি সেতু নির্মাণ, অ্যাপ্রোচ সড়কের ওপর ৩০. ৫০ মিটার একটি সেতু নির্মাণ, ১২ মিটার দ’ুটি আরসিসি কার্লভাট নির্মাণ, ১০ মিটার দ’ুটি আরসিসি আন্ডারপাশ নির্মাণ, ১. ৮৬ কি.মি. সার্ফেসিং এবং নতুন পেভমেন্ট তৈরি, ৯ দশমিক ৩৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ৩.২৩ লাখ ঘনমিটার সড়ক বাধ নির্মাণ, জিও টেক্সটাইল, টো-ওয়াল, সার্ফেস ড্রেন, দু’টি ইন্টারসেকশন আইল্যান্ড এবং সাইন, সিগন্যাল, ইউটিলিটি সিফটিংসহ আনুসাঙ্গিক কাজ করার কথা রয়েছে।

এছাড়াও ১০. ২৫ মিটার প্রস্থের সেতুতে ৭টি স্প্যান থাকবে। সেতুর দু’পাশে অ্যাপ্রোজ সড়ক থাকবে ১. ৮৬ কি.মি।

প্রতিবেদক-আবদুল গনি
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৯ : ২৭ পিএম, ২০ মার্চ ২০১৭, সোমবার
এইউ

Leave a Reply