Home / জাতীয় / রাজনীতি / বিএনপিতে গভীর রাত ঘুমাও , ঘুম ভেঙ্গে জেলে যাও!
bnp

বিএনপিতে গভীর রাত ঘুমাও , ঘুম ভেঙ্গে জেলে যাও!

বিএনপিতে এখন গভীর রাত। এ রাত কবি ফররুখ আহমেদের পাঞ্জেরী কবিতার রাতের চেয়ে দীর্ঘ। গাঢ় এ রাত পোহানো অনিশ্চিত। অন্ধকার ঘিরে আছে সবখানে। ছেয়ে যাচ্ছে দিগন্তের এপাশ ওপাশ সারা আকাশ। এ রাত, এ অন্ধকার ঘুমানোর জন্য নয়। কিন্ত অবিশ্বাস্যভাবে রাতের গভীরতার সাথে পাল্লা দিয়ে ঘুমিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ঘুমাতে ঘুমাতে স্থবির হয়ে যাচ্ছে দেহ। অসাড় শরীরে তাই বুঝি ঘুম ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। বিএনপি হয়ত ধরেই নিয়েছে এ রাত তারা পার করতে পারবে না। তাই ঘুমই শ্রেয়। ’হোয়েন রেপ ইজ ইমিনেন্ট, ইট’জ বেটার টু এনজয়’। তাই দুঃস্বপ্নের রাতেও হয়ত ঘুমই উপভোগ করে চলেছে বিএনপি!

কিন্ত ইতিহাস কি বিএনপিকে ক্ষমা করবে? পাল্টা প্রশ্ন আসতে পারে বিএনপির কি দোষ? তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল থাকলে, সুষ্টু নির্বাচন হলে, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে বিএনপিকেতো আজ এ অবস্থায় পড়তে হতো না। সঠিক। সেক্ষেত্রে আজ হয়ত আওয়ামী লীগ নয়, দেশ শাসন করত বিএনপি সরকার। কিন্ত সে পরিস্থিতিতো নেই। পাল্টানো এ দৃশ্যপটে বিএনপির রাজনীতি কোথায়? পরিবর্তিত এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে তবেইতো বিএনপিকে টিকে থেকে অগ্রসর হতে হবে। কিন্ত পরিস্থিতি মোকাবেলা করা দুরে থাক বিএনপিতো এ বিরুপ পরিস্থিতিতে নিজের সৃষ্টি করা দুরাবস্থা থেকেও বের হতে পারছে না। যে মুহূর্তে দরকার সঠিক সিদ্ধান্ত, দিক নির্দেশনা ও সুদূরপ্রসারি কর্মসূচি, সেখানে ভর করেছে সিদ্ধান্তহীনতা, দীর্ঘসূত্রতা ও জড়তা।

আওয়ামী লীগের দোষ ধরা কিংবা সমালোচনা এখন অর্থহীন। আওয়ামী লীগ কোনো কিছুই গোপনে করছে না। পথ বাঁকা হলেও তাদের ছকে ও রোডম্যাপে এখন কোনো গোপন ষড়যন্ত্র নেই। যাত্রাপথ কিংবা অগ্রযাত্রার নিশানা ও ঠিকানা দিবালোকের মতই স্পষ্ট। সংসদে, সিটি কর্পোরেশনে, উপজেলায়, পৌরসভায় এবং ইউনিয়ন পরিষদে যে প্রক্রিয়ায় সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে আওয়ামী লীগ আজ নিজস্ব জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেশ শাসন করছে এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। এ প্রক্রিয়ার ভিত্তি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেয়া। প্রথমে সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ ছিল। তাই তখন ভিশন ছিল ২০২১ পর্যন্ত। কিন্ত বিগত দুই বছরে পরিকল্পনামাফিক সবগুলো নির্বাচন ও গেমপ্লান আশাতীতভাবে সফল হওয়ায় ভিশন এখন ২০৪১।

আওয়ামী লীগের এ কাজগুলো গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশের সাথে যায় কিনা আওয়ামী লীগ সে জ্ঞানবর্জিত নয়। সুতরাং বিএনপি এ সরকারের সকল কর্মকান্ড নিয়ে নেতিবাচক ও দার্শনিক যত কথাই বলুক না কেন আওয়ামী লীগ তার এই বর্তমান রাজনীতি থেকে সরে আসবে না। চলমান এ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াই আওয়ামী লীগের টিকে থাকার একমাত্র পথ। তা সে পরিণতিতে যেদিকেই যাক না কেন। এ প্রক্রিয়ায় রাজনীতিতে দৃশ্যমান থাকবে শুধু আওয়ামী লীগ। বিএনপি কিংবা অন্য কোনো দলের কোনো কার্যকর রাজনীতি থাকবে না। আওয়ামী লীগের চোখে জনগণ এখন একটা বিগ নাথিং। সুতরাং বিএনপি যদি মনে করে যে আওয়ামী লীগ জনগণের রাজনীতি করছেনা এবং বিএনপিকে রাজনীতি করতে দিচ্ছে না তাই তাদের কিছু করার নেই তাহলে বিএনপির উচিৎ হবে আজীবন ঘুমিয়ে থাকার প্রস্ততি নেয়া।

আওয়ামী লীগতো সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে বিএনপিকে আর রাজনীতি না করতে দেয়ার জন্য। তা সে যে ভাবেই হোক না কেন। দেশে কোনো রাজনীতিই থাকবে না একমাত্র আওয়ামী লীগের ’কর্মকান্ড’ ছাড়া। আর এটাই এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি, অস্তিত্ব ও ভবিষ্যৎ। বিগত দুই বছরে তা এখন স্পষ্ট। কিন্ত পরিবর্তিত এ পরিস্থিতিতে বিএনপির রাজনীতি কি? বিএনপির বর্তমান অসাড়তা যদি হয়ে থাকে মামলা ও অন্যান্য ভয় তাহলেতো আওয়ামী লীগের ভিশন সম্প্রসারিত হবে ২০৭১ পর্যন্ত। আর বিএনপি যদি দুই বছর আগে মোদির ক্ষমতাসীন হওয়ার ব্যর্থ প্রতীক্ষার মত এখন আগামী নভেম্বরে হিলারির প্রেসিডেন্ট হওয়ার ভরসায় সুদিনের অপেক্ষায় ঘুমাতে থাকে তাহলে নিরুপায় ঘুমের দুঃস্বপ্নই হয়ে যেতে পারে বিএনপির চিরসঙ্গী।

প্রকৃতপক্ষে ইতিহাসের বিচারে আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও বিএনপি তার সঠিক রাজনীতি করতে পারছে না। বিএনপি আপেক্ষিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে এই কারণে যে আওয়ামী লীগ এখন ’আসল’ রাজনীতির ট্র্যাকের বাইরে চলে গেছে নির্বাচন থেকে জনগণকে মাইনাস করার মাধ্যমে। বিএনপির হতাশ হওয়ার কি আছে? যে বাঁকা পথের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ আজ মসনদে, এর খেসারতে দলটিকে হয়ত আরও কয়েকগুন বেশি সময় মসনদের বাইরে থাকতে হবে। সঠিক রাজনীতি করলে বিএনপি এখন যা হারাচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি ফিরে পাবে। একটা জাতির জীবনে কয়েক বছর কিছুই নয়। কিন্ত একটা দলের জাতির আকাঙ্খার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার পরিণতি ভয়াবহ ও সুদূরপ্রসারী হয়ে থাকে। আওয়ামী লীগ এখন সেই ঝুঁকিতে।

বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিন পর্যন্ত বিএনপির রাজনীতি বেঁচে ছিল। সে নির্বাচনে না যেয়ে যে বিএনপি কোনো ভুল করেনি তা ৫ জানুয়ারি পরবর্তি সকল নির্বাচনই তার প্রমাণ। তবে বিএনপি ভুল রাজনীতি শুরু করে ৬ জানুয়ারি ২০১৪ থেকে। বিএনপি জোটের যে কর্মীবাহিনী সারা বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্টার আন্দোলন করে সফলতার দ্বারপ্রান্তে তখনই হঠাৎ ঘুমিয়ে গেল বিএনপি। বিএনপির রাজনীতিতে এ যাবৎকালে এটাই সবচেয়ে বড় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আওয়ামী লীগকে ওয়াকওভার দিয়ে রাজনীতির মাঠ থেকে উঠে আসার কারণে ‘পরাজিত’ হিসেবে সারা দেশের হাজার হাজার কর্মীকে পরিণত করা হলো হামলা ও মামলার শিকারে। পরিণতিতে সবাই এখন পলাতক কিংবা জামিন পাওয়া আসামি। শেষ পরিণতি কিংবা ঠিকানা অজানা।

অবিশ্বাস্য লাগে বিএনপির বিগত দুই বছরের কর্মকান্ড। বন্যায় কিংবা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেলে পিঁপড়ারাও একত্রিত হয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। অথচ আজও তারা ফিরতে পারেনি বিএনপিতে যারা এক সময় বিভিন্ন কারণে চলে গিয়েছিল। তারা ফিরতে চায় অথচ অজানা ইঙ্গিতে ’বিভাজন জিন্দাবাদ’ করে রাখা হয়েছে। আবার প্রায়ই পত্রিকায় গুলশান অফিসের আপদ ও অশুভ শক্তির বিরক্তিকর দৌরাত্মের খবর প্রকাশিত হলেও কোনো প্রতিকার নেই। প্রকৃত ত্যাগী নেতারা নিস্ক্রীয় ও অসহায় হয়ে গেলে এই দুঃসময়ে বিএনপির সামগ্রিক দৈন্যদশা দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট হয় মাত্র। কর্মীদের মনোবল থাকে না। আবার রাষ্ট্রায়ত্ব কয়েকটি ব্যাংক এর পর বাংলাদেশ ব্যাংক এর রিজার্ভ থেকে চুরির মত ভয়াবহ ঘটনাসহ অন্যান্য জাতীয় স্বার্থবিরোধী ইস্যুতেও বিএনপি প্রায় নিশ্চল-নিশ্চুপ, শুধু বিবৃতি ছাড়া।

অনেক ভুলভ্রান্তির পর সর্বশেষ ১৯ মার্চের জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপি ঘুরে দাড়ানোর প্রত্যাশা করে। বিগত দুই বছরে তৃণমুলে ‘এতিম’ হয়ে যাওয়া নেতারা আশান্বিত হয়ে ওঠে। অথচ আজও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয়নি। তৃণমুলে হঠাৎ জেগে ওঠা চাঙ্গা ভাবও সেকারণে ম্রিয়মাণ হতে শুরু করেছে। ম্যাডাম জিয়া একটা কমিটি ঘোষণা করলে তা প্রত্যাখ্যাত হবে বা দল ছিন্নভিন্ন হবে বিএনপিতে বেগম জিয়ার কমান্ড এখনও সে পর্যায়ে নামেনি। তাহলেতো বিএনপি এতদিনে কয়েক খন্ড হয়ে যেত। তারপরও কেন এই অনাকাঙ্খিত দীর্ঘসূত্রীতা? সারা দেশে সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে যেখানে সংগঠন মজবুত করার কথা সেখানে কাঠামোহীন অবস্থা দীর্ঘায়িত করে রাখা হচ্ছে।

যদি এমন হয় যে দেশের জনগণ এই সরকারের বর্তমান রাজনীতি মেনে নিয়েছে একমাত্র তাহলেই বিএনপির হতাশ হওয়ার কারণ ছিল। প্রকৃতপক্ষে বিএনপি তার ভবিষ্যৎ নিয়ে যতটা শঙ্কিত, আওয়ামী লীগ তার চেয়ে বেশি শঙ্কিত কারণ কমপক্ষে জনগণের কেড়ে নেয়া ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতেই হবে। এ অধিকার ভারত, রাশিয়া, চীন কিংবা আমেরিকার নয়। সতের কোটি বাংলাদেশির। জনগণ কখনোই তাদের সাংবিধানিক অধিকার বঞ্চিত রাজনীতি বেশি দিন মেনে নেবে না। যতই ’চিরস্থায়ী বন্দবস্তে’র মহাপরিকল্পনা করা হোক না কেন জনগণের ভোটবিহীন কোনো সরকার এখানে চিরস্থায়ী হবে না।

কিন্ত গণতন্ত্র থাকা না থাকার এই সন্ধিক্ষণে এসে অবিশ্বাস্যভাবে আওয়ামী লীগের সাথে সাথে বিএনপিও জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ যেমন জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হতে পারেনি, বিএনপিও জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিনিধি হতে পারেনি। হরতাল অবরোধ নয়, জ্বালাও পোড়াও নয়, দলীয়ভাবে একতাবদ্ধ হয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে নাগরিক, সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক কর্মসূচিবিহীন বিএনপি এভাবে ঘুমিয়ে থাকলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ আরও দীর্ঘ হবে। আর বিএনপি তখন ঘুম ভেঙ্গে জেল ছাড়া কোথায় যাবে? কারণ বিএনপি ঘুমালেও জেগে আছে মামলাগুলো।সূত্র-প্রাইম নিউজ

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৯:৪৫,পি.এম ১৮.০১.২০১৭ ইং,বুধবার
নিজস্ব প্রতিবেদক

Leave a Reply