Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / ফরিদগঞ্জের প্রথম স্কুল রূপসা আহম্মদিয়া উবির ইতিহাস ও ঐতিহ্য
ফরিদগঞ্জের প্রথম স্কুল রূপসা আহম্মদিয়া উবির ইতিহাস ও ঐতিহ্য
চাঁদপুরের প্রাচীনতম ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার প্রথম স্কুল রূপসা আহম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ইনসেটে প্রাচীনতম ভবন।

ফরিদগঞ্জের প্রথম স্কুল রূপসা আহম্মদিয়া উবির ইতিহাস ও ঐতিহ্য

চাঁদপুরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যে ক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাচীন এবং জেলায় শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে তারমধ্যে রূপসা আহম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় অন্যতম।

এটি কেবল চাঁদপুর জেলারই একটি প্রাচীন স্কুল নয়, ফরিদগঞ্জ উপজেলারও প্রথম স্কুল এটি। তাই এ স্কুলটির প্রতি উপজেলাবাসীর রয়েছে বিশেষ টান। ১৯১৩ সালে রূপসা বাজারের পাশে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন রূপসার জমিদার আহম্মেদ গাজী চৌধুরী।

তাঁকে স্কুল প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেছিলেন তৎকালিন সমাজসেবকবৃন্দ। হাঁটি হাঁটি পা পা করে ২০১৩ সালে স্কুলটি শতবর্ষে পা রেখেছে। এখানে পড়াশোনা করে সারা দেশে আলো ছড়াচ্ছে বিদ্যানিকেতনটির শিক্ষার্থীরা।

বর্তমানে স্কুলটির শিক্ষার্থী সংখ্যা ১ হাজার ৮৯ জন। ১৪টি শ্রেণিকক্ষে ১৮ জন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান করে থাকেন। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় স্কুলের ফলাফলও সন্তোষজনক। ২০১৬ সালে এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রধান শিক্ষক মো. বশির আহম্মদ উপজেলা পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন

স্কুল সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের জেএসসি পরীক্ষায় ৯৭.৫৬ ভাগ, ২০১৩ সালে ৯৪.৮৭ ভাগ, ২০১৪ সালে ৭৭.৫০ ভাগ, ২০১৫ সালে ৯৪.৯৪ ভাগ, ২০১৬ সালে ৯১.১৯ ভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। অন্যদিকে ২০১২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ৯৯ ভাগ, ২০১৩ সালে ৯৮.১৮ ভাগ, ২০১৪ সালে ৯৯.২৬ ভাগ, ২০১৫ সালে ৮৪.৯২ ভাগ, ২০১৬ সালে ৯২.৩১ ভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রতি বছরই এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বোর্ড পরীক্ষায় জিপিএ-৫সহ কৃতীত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করে থাকে। ২০০৯ সালে এসএসসির ফলাফলে এ প্রতিষ্ঠানটি কুমিল্লা বোর্ডে শীর্ষ দশের মধ্যে ছিলো।

রূপসা আহম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে রয়েছে ২ হাজার বই সমৃদ্ধ একটি লাইব্রেরি। সেখানে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করার সুযোগ পায়। রয়েছে ক্যান্টিন সুবিধা। এছাড়াও স্কুলের শিক্ষার্থীরা আধুনিক প্রযুক্তির নানা সুবিধা পাচ্ছে।

এ ব্যাপারে সহকারী শিক্ষক হারুনুর রশিদ বলেন, ‘স্কুলটিকে আধুনিকায়ন করার জন্যে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষক নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের স্কুলটিতে এরইমধ্যে ওয়াইফাই জোন করা হয়েছে। আমরা রুটিন মোতাবেক শিক্ষার্থীদের মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস নিচ্ছি। শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যবে ১৮টি ল্যাপটপ ও ৫টি ডেস্কটপ রয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার শিখছে। আগামি মাস থেকে স্কুলে ডিজিটাল হাজিরা কার্যক্রম শুরু করা হবে। প্রযুক্তিগত শিক্ষার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক আগ্রহ আমরা লক্ষ্য করি। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা তথ্য-প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার করে সময়ের সাথে এগিয়ে চলুক।’

আগামিতে স্কুলটিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।

ইংরেজির সহকারী শিক্ষক মোঃ মঈন উদ্দিন বলেন, পাঠদানের পাশাপাশি আমরা সহ-পাঠক্রমিক কার্যক্রমকেও গুরুত্ব দিয়ে থাকি। পহেলা বৈশাখে আমরা বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করে থাকি। জাতীয় দিবসগুলো আমরা যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করি। শিক্ষার্থীরা বিতর্ক, নৃত্য, আবৃত্তি, খেলাধুলা ও অভিনয়ের চর্চা করে থাকে। ২০১৬ সালের শিক্ষা সপ্তাহে আমাদের শিক্ষার্থীরা একক অভিনয়, আবৃত্তি, নৃত্য, জারি গান ও কেরাত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে। আমাদের প্রধান শিক্ষক উপজেলা পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন। সহ-পাঠক্রমিক কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে বলে তিনি জানান।

ক্রীড়া শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রীড়া চর্চায়ও অনেক আগ্রহী। স্কুলে প্রয়োজনীয় ক্রীড়া উপকরণ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত আউটডোর ও ইনডোর গেমগুলো অনুশীলন করে থাকে। তারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। স্কুলে স্কাউটিং কার্যক্রমও আশানুরূপ হচ্ছে। আমাদের স্কাউটদের সুনাম জেলাব্যাপি রয়েছে।

স্কুলের অফিস সহকারী আবদুল মতিন বলেন, মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্যে স্কুলে বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্যে বেতন, ফি ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পড়ানো হয়।

স্কুলের সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, তেমনি এ প্রতিষ্ঠানটিতে সমস্যার রয়েছে অনেক। স্কুলের সমস্যার কথা জানতে চাইলে সহকারী প্রধান শিক্ষক আকরামুল হক বলেন, ‘স্কুলের মধ্য দিয়ে যাওয়া পথটি আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, স্কুলের মাঠ দিয়ে ট্রাক, রিক্সা, সাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। এতে শিক্ষা পরিবেশ চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে। স্কুলের মধ্য দিয়ে যদি রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা যেমন অটুট থাকবে, তেমনি শিক্ষা পরিবেশও সুন্দর হবে। এর বাইরে আমাদের শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে। আমাদের প্রচুর শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীদের ভালো ভাবে পড়াশোনার জন্যে কয়েকটি শাখা করা প্রয়োজন। কিন্তু শিক্ষক স্বল্পতার কারণে আমরা শাখা বাড়াতে পারছি না। এসব সমস্যার সমাধান হলে স্কুলটি আরো ভালোভাবে এগিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।’

কথা হয় স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথেও। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রেহানা পারভীন স্বর্ণা ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদেক হোসেন বলেন, শিক্ষকরা অনেক আন্তরিকতার সাথে আমাদের পাঠদান করে থাকেন। আমরাও চেষ্টা করছি ভালো করে পড়াশোনা করে ঐতিহ্যবাহী এ স্কুলটির জন্যে ভালো ফলাফল বয়ে আনতে।

তারা বলেন, আমাদের স্কুলে বিজ্ঞান ক্লাব নেই। শিক্ষা উপকরণগুলোও পুরানো। এগুলো নতুন করে আনা দরকার। আবার আমাদের স্কুলের মাঠের মধ্য দিয়ে একটি রাস্তা গেছে। এর জন্যে স্কুল মাঠে সারাক্ষণ সাধারণ মানুষের যাতায়াত ও যানবাহন থাকে। এতে আমাদের পড়াশোনা ও খেলাধুলা ব্যাহত হয়। আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়ার জন্যে অনুরোধ জানাই।

শতবর্ষী এ স্কুলের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মো. বশির আহম্মদ-এর সাথে। তিনি বলেন, রূপসার ঐতিহ্যবাহী জমিদার পরিবারের প্রচেষ্টায় স্থাপিত এ স্কুলটি চাঁদপুর জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী স্কুল। আমরা সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ফলাফল সন্তোষজনক। তবে আমরা আরো ভালো ফলাফল অর্জনের ইচ্ছে রাখি। এ জন্যে আমরা আরো ব্যাপৃতভাবে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে ইচ্ছুক। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি সহ-পাঠক্রমিক কার্যক্রমেও আগ্রহভরে অংশ নিচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করে থাকি। শিক্ষক সঙ্কটের মধ্য দিয়েও আমাদের শিক্ষকদের আন্তরিকতায় পাঠদান স্বাভাবিক রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘স্কুলের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা রয়েছে। স্কুলের মধ্য দিয়ে একটি রাস্তা রয়েছে। এটি শিক্ষা পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘিœত করছে। স্কুলটির স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্যে রাস্তাটি বন্ধ করা প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষক স্বল্পতাও রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করছি। দুঃখের বিষয়, স্কুলটি শতবর্ষ পূর্ণ হলেও এটি এখনো সরকারি হয়নি। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি, স্কুলটিকে যেনো অতিদ্রুত সরকারিকরণ করা হয়।’

করেসপন্ডেন্ট
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৪: ৩০ পিএম, ৪ এপ্রিল ২০১৭, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Leave a Reply