Home / শীর্ষ সংবাদ / হাজীগঞ্জে ৪ মাসে প্রেম-পরকীয়ায় ৪০ নারী ঘর ছাড়া
হাজীগঞ্জে ৪ মাসে প্রেম-পরকীয়ায় ৪০ নারী ঘর ছাড়া
প্রতীকী ছবি

হাজীগঞ্জে ৪ মাসে প্রেম-পরকীয়ায় ৪০ নারী ঘর ছাড়া

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ৪ মাসে প্রেম-পরকিয়ার টানে প্রেমিকের হাত ধরে  ৪০ নারী ঘর ছাড়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। যার মধ্যে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের ডায়েরিতে রয়েছে প্রায় ৩০টি অভিযোগ। এর বেশির ভাগই দেখা যায় প্রবাসীর স্ত্রী ও অবাধ্য পরিবারের মেয়েরা।

এ সব নারীরা স্বাধীনভাবে জীবন যাপনের জন্যে যৌথ পরিবার ছেড়ে গ্রাম থেকে ছুটে এসে বিলাসিতা জীবন-যাপনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে শহর কেন্দ্রিক হচ্ছে।

আর এতে করে বাড়ছে পরিবারে অশান্তি ও দুর্ভোগের কালো ছায়া। যা কোনোভাবেই যেন এদেরকে রুখা সম্ভব হয়ে উঠছে না। যে কারণে অনেক প্রবাসী  বউয়ের টানে বেশি দিন প্রবাস জীবনে ইচ্ছে করেও  থাকতে পারছে না।

হাজীগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি চাঁদপুর সদরের কল্যান্দী এলাকার রবিউল আলমের স্ত্রী জান্নাত আক্তার (২০) পরকিয়ায় পড়ে প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যায়। যার মামলা নং ১২৭। পরে সে হাজীগঞ্জে বাসা ভাড়া করে থাকা অবস্থায় জনৈক ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক করে পালিয়ে যায় ।

৮ জানুয়ারি উপজেলার পৌর এলাকার বলাখাল দাই বাড়ির শাহীন আক্তার (২১) একই ভাবে পালিয়ে যায়। যার মামলা নং ৩৯৭।

১৩ জানুয়ারি এক সন্তানের জননী উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন দেশগাঁও গ্রামের খাদিজা বেগম (২৭) নিখোঁজ হয় । যার মামলা নং ৮।

১৯ জানুয়ারি সদর ইউনিয়নের দোয়ালিয়া গ্রামের তাহমিনা বেগম (৩২) সন্তানসহ পালিয়ে যায়। যার মামলা নং ১০৮।

২৪ জানুয়ারি বড়কূল পশ্চিম ইউনিয়নের নাটেহারা গ্রামের সখিনা আক্তার (২০) উধাও হয়ে যায়। যার ডায়েরি নং-১১৩৯।

২৯ জানুয়ারি এক তরুণী প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যাওয়ায়কে কেন্দ্র করে  পরিবারের পক্ষ থেকে অপহরণ মামলা দায়েরের পর অবশেষে পুলিশ উদ্ধার করে পরিবারের হাতে  তুলে দেন।

ফেব্রয়ারি মাসের ২ তারিখে পৌর এলাকার মকিমাবাদ থেকে মর্জিনা আক্তার নামে এক ষোড়শি পালিয়ে যায় । যার ডায়েরি নং ৭৫।

এ উপজেলার বড়কূল  ইউনিয়নের দিগছাইল গ্রামের শাহানাজ আক্তার (১৯) পালিয়ে যায় । যার মামলা নং ২৬৩।

৭ ফেব্রয়ারি এমন আরেকটি হারানো মামলা হয় যা পরে ঐ তরণীকে উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দেয় পুলিশ।

১১ ফেব্রয়ারি উপজেলার কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের সন্তানের জননী শিরিনা বেগম (৩০) পালিয়ে যায় । যার মামলা নং ৫৭২।

একই তারিখে ফরিদগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা পৌর এলাকার টোরাগড় গ্রামে ছোট সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকত। সেও পরকিয়া প্রেমিকের হাত ধরে  অবশেষে পালিয়ে যায়। তবে পরে পরিবারের পক্ষ হারানো ডায়েরি করা হয় । যার নং ৫৭৭।

১২ ফেব্রয়ারি এমন অভিযোগে আরেকটি নারীর ডায়েরি করা হয় যার মামলা নং ৬২৮। পরে অবশ্য ঐ নারীকে পুলিশ উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দেয়।
উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের হোটনী গ্রামের সন্তানের জননী খোদেজা বেগম (৩০) হারিয়ে যায়। যার মামলা নং ১৩৩০।

১৮ ফেব্রয়ারি এমন অভিযোগে আরেক নারীর ডায়েরি করা হয় । পরে পুলিশ উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দেয়।

৪ মার্চ শাহারাস্তি উপজেলার ধোপল্লা গ্রামের ফাতেমা আক্তার (১৫) হারিয়ে যায়। যার মামলা নং ১৬১।

৭ মার্চ উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের মরিয়ম বেগম (২৫) হারিয়ে যায়। যার মামলা নং ৩১৫।

একই তারিখে পৌর এলাকার রান্ধনীমুড়া গ্রামের ঝরনা আক্তার (১৭) ও আফছানা আক্তার (১৫) হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যার মামলা নং ৩০৫ ও ৬।

একই তারিখে পৌর এলাকার ধেররা গ্রামের দিলরুবা আক্তার (২৯) হারিয়ে যায । যার মামলা নং ৩১৯।

৮ মার্চ উপজেলার কালচোঁ গ্রামের নাছিমা বেগম (২৮) হারিয়ে যায়। যার মামলা নং ৩৫১। ৯ মার্চ এমন অভিযোগ পড়লে সে নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ।

১১ মার্চ উপজেলার দেশগাঁও গ্রামের রোকসানা আক্তার (২২) হারিয়ে যায়।যার মামলা নং ৫১৬। একই তারিখে আরো একজন হারিয়ে যায় । যার মামলা নং ৫১৫।

১২ মার্চ উপজেলার বেলঘর এলাকার ইসরাত জাহান (১৭) হারিয়ে যায় । যার মামলা নং ৫২০।

১৪ মার্চ উপজেলার মাড়ামুড়া গ্রামের শিল্পী বেগম (২৮) হারিয়ে যায় । যার মামলা নং ৬৮৩।

২৯ মার্চ বড়কূল পশ্চিম ইউনিয়নের নাটেহারা গ্রামের সুমি বেগম (২৫) হারিয়ে যায়। যার মামলা নং ১৪২১।

১১ এপ্রিল উপজেলার বড়কূল পশ্চিম ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের আয়েশা বেগম (২২) হারিয়ে যায়। যার মামলা নং ৫২৯।

২৩ এপ্রিল মতলব দক্ষিণ উপজেলার শিল্পী রাণী (২৭) হাজীগঞ্জ থেকে হারিয়ে যায়। যার মামলা নং ১১২ ।

সর্বশেষ  ২ মে পৌর এলাকার বলাখাল গ্রামের সন্তানের জননী নুরুন্নাহার নিলা (৩০) হারিয়ে যায় । যার মামলা নং ৬১।

হাজীগঞ্জে ৪ মাসে থানায়  ৩০ নারী অভিযোগ দায়ের হলেও আরো ১০ জন নারী প্রেম-পরকিয়ার টানে প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে গেছে বলে জানা যায়। এ ভাবে চলতে থাকলে সমাজে আরো অসামাজিকতা বাড়বে ভেবে অনেক পরিবারের গৃহকর্তাগণ স্ব -স্ব  মেয়েদের নিয়ে পরিবারগুলো চিন্তিত রয়েছে।

এ সব প্রেম-পরকিয়া বৃদ্ধির প্রধান কারণ যত্রতত্র মোবাইল বা টার্চ ফোনের অপব্যবহার, অবাধে যেখানে সেখানে চলাফেরা ও যাতে রয়েছে ফেইসবুক, বাইভার, ইমু, পর্ণ ছবি ও ভিডিও , টুইটারসহ নানা যোগাযোগ মাধ্যম।

তাছাড়া গ্রাম গঞ্জের অনেক প্রবাসীর নারীরা সন্তানের ভালো পড়াশুনার নাম করে শহরে রংগিন রংগিন ভবনে বাসা ভাড়া  ব নিয়ে একাকিত্ব জীবনযাবনে উদাসীন হয়ে পড়েছে।

তাই এখানকার সচেতন মহল মনে করেন, পরিবারের পাশাপাশি সামাজিক ভাবে এর প্রতিরোধ এখন থেকে বিকল্প কোনো উদ্যোগ না নেয়া হলে দিন দিন এ সব অসামাজিকতা বৃদ্ধি পাবে।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো.জাবেদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছে তা’বলে পরিবারের লোকজন থানায় জিডি করে না বরং হারিয়ে গেছে বলে পুলিশকে হয়রানি করে।’

তিনি আরো বলেন, আমরা নারী টিমের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নারীদের ধর্মীয়ভাবে বুঝানোর উদ্যোগ নিয়েছি এবং প্রবাসী স্বামীদের সাথে কথা বলে দেশে স্ত্রীকে সময় দেয়ার জন্যে অবহিত করার চেষ্টা করছি।

আসলে সত্যিকার অর্থে এসব ব্যভিচার বেড়ে গেছে ধর্মীয় অনুশাসন মনের ভেতর লালন না করায়। এসব রুখতে স্ব স্ব পরিবারগুলোকে আরো বেশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেয়া উচিত বলে মনে করি।’

প্রতিবেদক : জহিরুল ইসলাম জয়
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৯ : ১৫ পিএম, ৮ মে ২০১৭, সোমবার
এজি

Leave a Reply