Home / ইসলাম / পৃথিবীর সর্বোত্তম সম্পদ নেককার স্ত্রী
পৃথিবীর সর্বোত্তম সম্পদ নেককার স্ত্রী
ছবিটি প্রতীকী

পৃথিবীর সর্বোত্তম সম্পদ নেককার স্ত্রী

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘পুরুষ নারীদের অভিভাবক, কারণ আল্লাহ তাদের একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এ কারণে যে, পুরুষরা নিজেদের অর্থসম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা অনুগত হয়ে থাকে। পুরুষের অনুপস্থিতিতে আল্লাহর হিফাজতে (তার অধিকারসমূহ) হিফাজত করে। সূরা নিসা : ৩৪

উক্ত আয়াতে নেককার নারীর প্রথমগুণ বলা হয়েছে, সতী-সাধ্বী ও দীনদার হওয়া। সালিহাত শব্দের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে জারীর তাবারি রহ. বলেছেন, দীনের সঠিক অনুসারিণী, সৎকর্মশীল নারীরা।

এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, পার্থিব জগৎটাই হলো ক্ষণিক উপভোগের বস্তু। আর পার্থিব জগতের সর্বোত্তম সম্পদ (উপভোগের বস্তু) সতী-সাধ্বী নারী। সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪৬৭; মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬৫৬৭; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪০৩১

হযরত আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো মুমিনের জন্য আল্লাহর তাকওয়া অর্জনের পর নেককার স্ত্রীর চেয়ে কল্যাণকর কিছু নেই। কারণ স্বামী তাকে আদেশ করলে সে আনুগত্য করে, তার দিকে দৃষ্টিপাত করলে সে (স্বামী) মুগ্ধ হয়। তাকে নিয়ে শপথ করলে সে তা (শপথকৃত কর্ম) পূরণ করে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজেকে (অন্যায়-অপকর্ম থেকে) এবং স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ করে। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৮৫৭

হযরত সাওবান রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সোনা-রূপা সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা কোন ধরনের মাল সঞ্চয় করব? তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেই যেন সঞ্চয় করে কৃতজ্ঞ অন্তর, যিকিরকারী মুখ এবং পরকালীন কর্মকা-ে সহায়তাকারিণী মুমিন নারী। মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৩১০১; জামে তিরমিযি, হাদিস : ৩০৯৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৮৫৬

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে, রমজান মাসের রোজা রাখবে, নিজ লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে তখন তাকে বলা হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ কর। মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৬৬১; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪১৬৩

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, নারীদের মধ্যে কোন নারী উত্তম? তিনি বললেন, স্বামী যাকে দেখলে আনন্দবোধ করে, যাকে আদেশ করলে আনুগত্য করে, স্ত্রীর বিষয়ে এবং সম্পদের ব্যাপারে স্বামী যা অপছন্দ করে তা থেকে বিরত থাকে। মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৪২১; সুনানে নাসায়ী, কুবরা, হাদিস : ৮৯৬১

নেককার নারীর তৃতীয় গুণ বলা হয়েছে, স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার ধন-সম্পদ এবং নিজের সতীত্বের হিফাজত করবে।
ইমাম ইবনে জারীর তাবারি রহ. বলেন, নারীগণ তাদের স্বামীর অবর্তমানে নিজেদের লজ্জাস্থান হিফাজত করবে এবং এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের খেয়ানত করবে না। স্বামীর ধন-সম্পদ সংরক্ষণ করবে। তাদের ওপর এ দায়িত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকেই আরোপিত।

নারীর পবিত্র ও চরিত্রবান হওয়া প্রসঙ্গে কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘পবিত্র নারীরা পবিত্র পুরুষদের উপযুক্ত এবং পবিত্র পুরুষরা পবিত্র নারীদের উপযুক্ত। এখানে মুমিন নর-নারীর জন্য মূলনীতি বলে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা মানবচরিত্রে স্বাভাবিকভাবে পরস্পরের মাঝে যোগসূত্র রেখেছেন। পবিত্র ও চরিত্রবান নারীদের আগ্রহ পবিত্র ও চরিত্রবান পুরুষদের প্রতি হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে পবিত্র ও চরিত্রবান পুরুষদের আগ্রহ পবিত্র ও চরিত্রবান নারীদের প্রতি হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ আগ্রহ অনুযায়ী জীবনসঙ্গী খোঁজ করে নেয় এবং প্রাকৃতিক বিধান অনুযায়ী সেটাই বাস্তবরূপ লাভ করে। এ জন্য জীবনসঙ্গী ও সঙ্গিনী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলাম দীনদারীকে প্রাধান্য দিতে জোর তাগিদ দিয়েছে।

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত, রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, চারটিগুণ দেখে নারীকে বিবাহ করা হয় : ধন-সম্পদের কারণে, রূপ-সৌন্দর্যের কারণে, বংশ মর্যাদা ও দীনদারীর কারণে। তুমি দীনদার ও চরিত্রবানকেই গ্রহণ কর। সহিহ বুখারি, কিতাবুন নিকাহ। বিবাহের মাধ্যমে চারিত্রিক পবিত্রতাসম্পন্ন হওয়া, গোপনে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনে লিপ্ত না হওয়া।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চারিত্রিক পবিত্রতাসম্পন্ন হবে, ব্যভিচারিণী হবে না এবং গোপনে কোনো অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনকারিণী হবে না। সুরা নিসা : ২৫

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, চারিত্রিক নিষ্কলুষতার অধিকারিণী নারীরা, যারা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ব্যভিচারিণী হবে না এবং সঙ্গোপনে অবৈধ বন্ধু গ্রহণকারিণী হবে না। তিনি বলেন, জাহিলি যুগের লোকেরা প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়াকে হারাম মনে করত, কিন্তু গোপনে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়াকে হালাল মনে করত। এই প্রেক্ষিতেই আল্লাহ তায়ালা কুরআনের আয়াত নাযিল করলেন, ‘তোমরা প্রকাশ্যে হোক, অপ্রকাশ্যে হোক কোনো রকম অশ্লীল কাজের নিকটেও যেও না। সুরা আনআম : ১৫১; তাফসীরে তাবারি, হাদিস : ৯০৯৫, ৯০৭৬, ৪/২২

বর্তমান সমাজে অবৈধ সম্পর্কের ব্যাধি মহামারিতে পরিণত হয়েছে। পর্দাহীনতা, সহশিক্ষা এবং অশ্লীল চলচিত্রের বদৌলতে একদিকে অবিবাহিত উঠতি নর-নারী তথাকথিত প্রেমের নামে ভয়ঙ্কররূপে প্রকাশ্য অশ্লীলতায় মেতে উঠছে, পরকীয়া প্রেমের কারণে ঘর ভাঙছে অসংখ্য নারীর। তাই মুসলমান নর-নারীরা যতক্ষণ আল্লাহর হুকুম ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে না চলবে ততক্ষণ পারিবারিক শান্তি ও দাম্পত্য জীবনের সুখ অধরাই রয়ে যাবে।

Leave a Reply