Home / ফিচার / যৌন সহিংসতা প্রশ্নহীন পুরুষতন্ত্র ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলাফল

যৌন সহিংসতা প্রশ্নহীন পুরুষতন্ত্র ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলাফল

‎Thursday, ‎April ‎16, ‎2015  4:09:00 PM

রেজাউল আলম সবুজ :

ঘটনা কমবেশি সবার জানা। অতীতের ধারাবাহিকতায় আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন কয়েকজন নারী। বর্ষবরণকে ঘিরে মঙ্গলবার দিনভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় ছিল বিভিন্ন অনুষ্ঠান, তাতে সারা ঢাকা থেকে অনেকে যোগ দিয়েছিলেন। সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সংঘবদ্ধ একদল যুবক কয়েকজন নারীর উপর যৌন সহিংসতা চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টিএসসি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইটে কয়েকজন নারীর ‘শ্লীলতাহানির’ চেষ্টা চালায় ৩০-৩৫ জনের ওই যুবকের দল। তারা কারও কারও শাড়ি ধরেও টান দিয়েছিল। তখন পুলিশ কয়েক দফা লাঠিপেটা করলেও ভিড়ের মধ্যে ওই যুবকদের নিবৃত্ত করতে পারেনি।

ঘটনাস্থলে ছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা লিটন নন্দী। তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে যখন সবাই বের হচ্ছিল, তখন গেইটে থাকা বহিরাগত ওই যুবকরা নারীদের উপর যৌন সহিংসতা চালায়।“ ২০-২৫ জন যুবক এক নারীর শ্লীলতাহানি ঘটানোর সময় বাঁচতে গিয়ে তিনি পড়ে যান। তাকে উদ্ধার করতে গেলে ওই যুবকরা আমার ওপর চড়াও হয়। তাদের ধাক্কাধাক্কিতে আমিও পড়ে যাই।”বলেন তিনি। পড়ে গিয়ে ডান হাত ভেঙে গেছে লিটন নন্দীর। তবে ওই নারীকে উদ্ধার করে নিজের পাঞ্জাবি জড়িয়ে দিয়েছেন লিটন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন তিনি।

দেশের প্রধানতম বিদ্যাপীঠের পরিসরে, যেখান থেকে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিরোধের সূচনা হয়েছে সেই টিএসসি-শাহবাগ-সোহরাওয়ার্দীর মতো এলাকায় কেন এমন ঘটনা বারবার ঘটে? কী করে তা প্রতিরোধ করা যায়? এইসব বিষয়ে আমরা কথা বলি বিশ্লেষকদের সঙ্গে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ফাতেমা শুভ্রা নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘বিচার বহির্ভূত-প্রশ্নাতীত-রোম্যান্টিক-আস্ফালিত-উম্ফলিত পুরুষতান্ত্রিক এবং ভয়ঙ্করী নারী বিদ্বেষী যৌন হয়রানির পাবলিক মশকারা এবং অনিরাপত্তার স্থান শাহবাগ-সোহরাওয়ার্দী টিএসসি এলাকা।’

ফাতেমা শুভ্রা মনে করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিসর পুরুষতান্ত্রিক অবদমনের ক্ষেত্রে প্রশ্নহীন নির্বিচারি অবস্থায় থাকে। প্রিয়.কমকে তিনি বলেন, ‘গণজাগরণের সময় থেকে আমি চীৎকার করে বলছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই এলাকা নারীর প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে সবচে বড় প্রশ্নের বাইরে থাকা স্থান। মিলিনিয়াম বাধন থেকে শুরু করে প্রতি বছর বিভিন্ন সময়ে যখনই পাবলিক জমায়েত হয় তখনই এখানে নারী ও শিশু নির্যাতন চলে। আর এই বিষয়ে কথা বললে “প্রতিক্রিয়াশীল” লেবেল জোটে।’

আর ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ তথা সমগ্র বিশ্বের নারী নিপীড়নের পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা আস্ফালনের বাইরের কিছু নয় এই “রোম্যান্টিক” স্থানটি। এখানে খুন হয় কারণ এখানে মিলিনিয়াম বাঁধন হয়, এখানে খুন হয় কারণ এখানে পহেলা নববর্ষে বস্ত্র হরণ হয়।’ বিচারহীনতার সংস্কৃতির বাইরে এসে ১৫ বছর আগের সেই বাঁধনের ঘটনা থেকে শুরু করে সব নিপীড়নের বিচার শুরুর পরামর্শ দেন এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।

এদিকে এই ঘটনাকে নিন্দনীয় এবং জঘন্যতম বলে উল্লেখ করে প্রায় একই ধরনের মত দিয়েছেন সংস্কৃতিকর্মী অরূপ রাহী। রাহী মনে করেন, আমাদের সংস্কৃতি এখনও নারীদের উৎসবে অংশগ্রহণকে পুরুষতান্তিক চোখের পর্দাতেই দেখে থাকেন। আর বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এই ধরনের নিপীড়ন আরও ব্যাপকতা পাচ্ছে। ‘১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে বাঁধনের সাথে যা হয়েছে তার বিচার আজও হয়নি। একারণেই এই ধরনের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।’

সাংবাদিক উদিসা ইসলাম এই ঘটনাকে দেখছেন পুরুষতান্ত্রিক দীনতার সংস্কৃতি হিসেবে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এই ধরনের ঘটনাতে আমাদের সাংস্কৃতিক দীনতা প্রকাশ পায়। প্রতিবার একই রকম ঘটনা ঘটে কিন্তু পুলিশ একেবারে নির্লিপ্ত থাকে। ঘটনার পরে বহিরাগত বলে একটা ইতি টানা হয়,কিন্তু বিচার হয় না।’

উদিসা ইসলাম মনে করেন, এর দায় আমাদের সবার। ‘আমাদের বোঝা উচিত মিডিয়ার মাধ্যমে পান্তা ইলিশ খাওয়ানোটাই আমাদের চারপাশটা পরিবর্তন করতে পারবে না। আমাদের মূল্যবোধের জায়গাগুলো পরিবর্তন করা উচিত। ’ মন্তব্য করেন তিনি।

চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/2015

নিয়মিত আপনার ফেসবুকে নিউজ পেতে লাইক দিন : https://www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes