Home / সারাদেশ / জীবিত স্বামীকে মৃত বানিয়ে বিধবা ভাতা!
জীবিত স্বামীকে মৃত বানিয়ে বিধবা ভাতা!

জীবিত স্বামীকে মৃত বানিয়ে বিধবা ভাতা!

জেলার আদিতমারী উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে , উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের হতদরিদ্র, অতিদরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ২০১৬/১৭ অর্থ বছরের বিশেষ বরাদ্দের আওতায় আনতে ৬ হাজার ৫২৬ জনকে মনোনীত করা হয়।

যার মধ্যে বয়স্ক ২ হাজার ২শ’ ৬১ জন, বিধবা ২ হাজার ৭৩ জন ও প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য ২ হাজার ১শ’ ৯২ জনকে নির্বাচন করা হয়। বয়স্ক ও বিধবারা প্রতি মাসে ৫শ’ টাকা হারে ও প্রতিবন্ধীরা প্রতি মাসে ৬শ’ টাকা হারে তিন মাস পর এ টাকা পাবেন।

ভাতাভোগী ও স্থানীয়রা জানান, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভাতাভোগীদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ৫শ’ থেকে দু’হাজার পর্যন্ত টাকা গুণতে হয়েছে। টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অনেক অতিদরিদ্র বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও বিধবা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন।

আবার টাকা বিনিময়ে জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে বিধবা ভাতা ও মৃত ব্যক্তিকেও ভাতার জন্য মনোনীত হয়েছেন। সব থেকে বেশি অনীয়ম মহিষখোচা ও কমলাবাড়ি ইউনিয়নে। মহিষখোচা ইউনিয়ন সমাজকর্মী আব্দুল ওহাব টাকার বিনিময়ে ও আত্মীয় স্বজনের মাঝে এসব ভাতাভোগীর তালিকা প্রণয়ন করেছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

ভাতাভোগীদের বই নিজ বাড়িতে টাকার বিনিময়ে বিতরণ করেন তিনি। সেক্ষেত্রে বইপ্রতি ৫শ’ থেকে দু’হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ টাকায় তিনি গ্রামে গড়ে তুলেছেন দ্বিতল ভবনের আলিশান বাড়ি।

টাকার বিনিময়ে জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে তার প্রতিবেশী চাচি রাবেয়া বেগমকে বিধবা ভাতার জন্য মনোনীত করেছেন। শুধু রাবেয়া নন, ওই ইউনিয়নের বিধবা ভাতা তালিকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের তারামিনা বেগম, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওশনা বেগম, জাহানুর বেগম, ছকিনা বেগমকে বিধবা হিসেবে বলা হলেও তারা স্বামীসহ এক ঘরেই বসবাস করছেন।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাছমা বেগম ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাচ্চা বুড়ির নামে বিধবা ভাতা এবং তাদের স্বামীর নামে রয়েছে বয়স্ক ভাতা। এতেই শেষ নয়, বেশকিছু মৃত ব্যক্তির নাম রয়েছে বয়স্ক ভাতার তালিকায়। এসব সুবিধাভোগীর তালিকা সমাজকর্মী আব্দুল ওহাব নিজেই তৈরি, যাচাই বাচাই ও বই বিতরণ করেছেন।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক মহিষখোচা ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন ভাতাভোগী জানান, টাকা ছাড়া ওহাবের সাথে কথা বলাও যায় না। বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীকে চাহিদামতো টাকা দিয়ে নিতে হয়েছে বই। টাকার বিষয় কাউকে বললে নাম কেটে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তারা।

আত্মীয়তা ও টাকা গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করে মহিষখোচা ইউনিয়ন সমাজকর্মী আব্দুল ওহাব জানান, অফিসারের সঙ্গে কথা বলে বাড়িতে কিছু বই বিতরণ করা হয়েছে। যাদের স্বামী জীবিত রয়েছে তাদের নাম বাদ যাবে।

মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুল হামিজ বলেন, “জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় না করে ওহাব নিজেই এসব তালিকা করেছেন।”

একই অবস্থা কমলাবাড়ি ইউনিয়নের ভাতাভোগীদের। তাদের কাছে প্রকাশ্যে নেয়া হচ্ছে বইপ্রতি ৫শ’ টাকা। যার সিংহভাগ পাচ্ছেন ওই ইউনিয়ন সমাজকর্মীর দায়িত্বে কারিগরি প্রশিক্ষক ধীরেন্দ্র নাথ রায়।

তবে তিনিও অস্বীকার করে বলেন, “টাকা নেয়ার প্রশ্নেই উঠে না। বইগুলো ইউপি মাঠেই বিতরণ করা হয়েছে।”

আদিতমারী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, বাড়িতে বই বিতরণের কোনো নিয়ম নেই। ওই ইউনিয়নের বিষয়ে অনেকে অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি প্রশিক্ষণে ঢাকায় অবস্থান করছেন। ফিরে এসে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, “সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রমের কোনো অনিয়ম দুর্নীতি মেনে নেয়া হবে না। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ০৯ : ০০ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সোমবার
এইউ

Leave a Reply