Home / জাতীয় / রাজনীতি / জিয়ার মাজার উচ্ছেদ হলে বিএনপির পরবর্তী ভাবনা!
জিয়ার মাজার উচ্ছেদ হলে বিএনপির পরবর্তী ভাবনা!

জিয়ার মাজার উচ্ছেদ হলে বিএনপির পরবর্তী ভাবনা!

সংসদ ভবনসংলগ্ন চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজার উচ্ছেদ করা হলে বিএনপি কী করবে এমন আলোচনা ও কৌতূহল জনমনে ব্যাপক। কিন্তু আন্দোলন করে সরকারকে ওই উদ্যোগ থেকে নিরস্ত করা যাবে বলে দলটি মনে করে না।

জানা যায়, জিয়ার মাজার উচ্ছেদ হলে ওই ইস্যুতে খুব বড় ধরনের আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনাও বিএনপির নেই। বরং এ ইস্যুতে দেশ-বিদেশে জনমত গঠনের ওপরই দলটি জোর দেবে। এর বাইরে সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতিকেও চিঠি দেওয়ার কথা ভাবছেন দলটির কয়েক নেতা।

যদিও ওই ইস্যুতে করণীয় নিয়ে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা বা বৈঠক হয়নি তবে বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, জিয়ার কবর সরিয়ে নিলেও তাদের বিশেষ কিছু করার নেই। ওই ইস্যুতে বড়জোর দু-একটি বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মইনুল রোডের বাড়ির মতো ওই উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতেও আগ্রহী নয় দলটি। মইনুল রোডের বাড়ি নিয়ে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে বরং ওই উচ্ছেদকে এক ধরনের বৈধতা দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপিতে আলোচনা আছে। ফলে রাজনৈতিক ইস্যু রাজনৈতিকভাবে যেদিকে যায় যাক; বিএনপি আদালতে যাবে না বলে দলটির কিছু নেতা জানিয়েছেন।

স্থপতি লুই আই কানের করা জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশা যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আনার পর বিএনপিতে কিছুটা অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। নেতারা টেলিফোনে এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। তবে জিয়ার কবর সরিয়ে নেওয়া হলে বিএনপি যে তা ঠেকাতে পারবে না এটি দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনায় আছে। তাদের মতে, আন্দোলন করে এ পর্যন্ত কিছুই ঠেকানো যায়নি। জিয়ার কবরও ঠেকানো যাবে না। মইনুল রোডের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদের পরও কিছু না করতে পারা এ ক্ষেত্রে বিএনপি নেতাদের সামনে বড় উদাহরণ। ওই সময় বিরোধী দলে থাকা বিএনপি ঢাকায় একটি বড় মিছিলও করতে পারেনি। তবে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পর খালেদা জিয়ার ‘চোখের পানি’ দেখে নেতাকর্মীদের অনেককেই ওই সময় কাঁদতে দেখা গেছে। তা ছাড়া বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে যা করতে চায় তাই করতে পারে—এমন একটি ভাবনাও বিএনপির পাশাপাশি দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও দেশের জনগণের মধ্যেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে আন্দোলন করে কিছু অর্জন করা যাবে না বলেই মনে করে দলটি। এর বদলে দেশি-বিদেশি কূটনৈতিক মহলে ‘ব্রিফ’ করে পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি সুধীসমাজকে সম্পৃক্ত করে জনমত গঠন করলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে বলে মনে করে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ক্ষমতায় থাকলে অনেক কিছু করা সম্ভব। কিন্তু জিয়াউর রহমানের কবর সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের হীনম্মন্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বিএনপি অবশ্যই এর প্রতিবাদ জানাবে। তাঁর মতে, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দেশের জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সংসদ ভবন এলাকায় তাঁর লাশ সমাহিত করা হয়েছে। ফলে এখন তাঁর সমাধি উচ্ছেদের অর্থ জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, জিয়াউর রহমানের কবর সরিয়ে নেওয়া হলে বিএনপি তার তীব্র প্রতিবাদ জানাবে। কর্মসূচিও দেওয়া হবে। তিনি জানান, দলীয় ফোরামে আলোচনার পরই এ বিষয়ে বিএনপি করণীয় নির্ধারণ করবে। কিন্তু সরকার যে প্রক্রিয়ায় জিয়ার নাম মুছে ফেলতে চাইছে সেটি কখনই সম্ভব নয়। তাঁর মতে, মূলত জিয়াউর রহমানের ভাবমূর্তি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপির জনপ্রিয়তায় ভীত হয়েই সরকার লুই কানের নকশার দোহাই দিয়ে এসব করার পাঁয়তারা করছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তই যে চিরস্থায়ী নয়, এটিও সরকারকে মনে রাখতে হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জিয়ার কবরসংলগ্ন লেকের ওপর থেকে বেইলি ব্রিজটি সরিয়ে নেওয়া হয়। ওই সময় বিএনপি এর প্রতিবাদ জানায় এবং বলে যে ক্ষমতায় আসতে পারলে এটি তারা পুনঃস্থাপন করবে। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে বেইলি ব্রিজের জায়গায় স্থায়ীভাবে ‘ব্রিজ’ বা সেতু নির্মাণ করে বিএনপি সরকার। পাশাপাশি জিয়ার কবর কমপ্লেক্সসহ সংলগ্ন এলাকাও আধুনিকায়ন করা হয়। রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হন। জিয়াকে প্রথমে চট্টগ্রামে কবর দেওয়া হলেও পরে সেখান থেকে তুলে এনে সংসদ ভবনের পাশে চন্দ্রিমা উদ্যানে সমাহিত করে কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হয়। (উৎস- কালেরকণ্ঠ)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৭:০০ এএম, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬, শনিবার
ডিএইচ

Leave a Reply