Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / জমিদার ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী ফরিদগঞ্জ লোহাগড় মঠ
লোহাগড় মঠ

জমিদার ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী ফরিদগঞ্জ লোহাগড় মঠ

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার চান্দ্রা বাজার থেকে সড়ক পথে দেড় কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ঐতিহাসিক জমিদার গ্রামের লোহাগড় মঠ । এই গ্রামের মঠটি কিংবদন্তির স্বাক্ষী হিসেবে এখনও দ-ায়মান।

স্থানীয় বয়োজেষ্ঠ্য কয়েকজনের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, পরম প্রতাপশালী জমিদার পরিবারের সন্তান এ দু’ভাই ‘লোহ’ ও ‘গহড়’। এ দু’সহোদরের নামানুসারে গ্রামটির নাম করণ করা হয় লোহাগড়। প্রভাবশালী জমিদার সন্তান হিসেবে এ দু’ভাইয়ের মধ্যে সখ্যতা ছিল চোখে পড়ার মত। এরা যখন যা ইচ্ছা তাই করতে আনন্দ অনুভব করত। জনৈক বৃটিশ কর্তাব্যক্তি লোহাগড় গ্রাম পরিদর্শনে আসলে তাদের ঐতিহ্য দেখে মুগ্ধ হন। কথিত আছে, ঐ কর্তাব্যক্তির জন্য নদীর কুল হতে জমিবাড়ী পর্যন্ত সিকি ও আধুলী মুদ্রা দিয়ে রাস্তা তৈরি করে। যার প্রস্ত ২ হাত ও উচ্চতা ১ হাত দৈর্ঘ্য ২০০।

সাধারণ মানুষ এদের বাড়ির সামনে দিয়ে ভয়ে চলাফেরা পর্যন্ত করত না। বাড়ির সামনে দিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে নৌকা চলাচল করতো নিঃশব্দে। ডাকাতিয়া নদীর কুলে (বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা বোরোপিট খাল) তাদের বাড়ীর অবস্থানের নির্দেশিকা স্বরূপ সুউচ্চ মঠটি নির্মাণ করেন। তাদের আর্থিক প্রতিপত্তির নিদর্শন স্বরূপ মঠের শিখরে একটি স্বর্ণদন্ড স্থাপন করেন। এই স্বর্ণদন্ডের লোভে মঠের শিখরে উঠার অপচেষ্টায় অনেকেই গুরুতর আহত হয়।

লোহাগড় মঠ

ঐতিহাসিক লোহাগড় মঠ

আবার কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে বলেও স্থানীয়দের মুখে শুনা যায়। এই বৃহৎ স্বর্ণ দন্ডটি পরবর্তীকালে প্রাকৃতিক দূর্যোগে মঠের শিখর থেকে বিছিন্ন হয়ে নদীতে পড়ে। পরবর্তীতে নদীতীরে ফসলী জমিতে চাষ করার সময় এক কৃষক সেই স্বর্ণদন্ডটি পেয়েছে বলে স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে। এ নিয়ে অনেক কৌতূহলও রয়েছে।

দর্শনার্থী মনিরুল ইসলাম জানান, ‘ লোহগড় মঠ এর ভেতর উপরের দিকে তাকালেই দেখা যায় কিছু বাঁশ দিয়ে পাটাতনের মত তৈরি করা। আশ্চর্যজনক হলেও ব্যাপারটি সত্যি সেই সময়ে তৈরি করা পাটাতনের বাঁশগুলো এখনও নতুনের মত চকচকে। নিজের চোখে না দেখে বিশ্বাস করা অসম্ভব। ঘুরে বেড়ানোর মত অনন্য এক স্থান ফরিদগঞ্জের এই লোহাগড় মঠ।

লোহাগড়ের জমিদার পরিবারের এই দুই সহোদরের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ এখনও বিদ্যমান। সেইসাথে ঐতিহ্যের স্মৃতি নিয়ে দু’ভাইয়ের দুর্দান্ত প্রতাপের নীরব সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে মঠটি। তবে প্রাচীন স্থাপনাটি প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের সংরক্ষণ করা জরুরি মনে করছেন স্থানীয় সচেতনমহল।

প্রতিবেদক- দেলোয়ার হোসাইন, ৫ মে ২০১৫