Home / ফিচার / হামলাকারী জঙ্গিরা আইএস না জেএমবি?
হামলাকারী জঙ্গিরা আইএস না জেএমবি?..
প্রতীকী ছবি (আইএস)

হামলাকারী জঙ্গিরা আইএস না জেএমবি?

সারা বিশ্ব এখন জঙ্গি আতঙ্কে আতঙ্কিত ।বিশ্বের মানবতা ও শান্তি জঙ্গিদের আক্রমনের ভয়ঙ্কর থাবায় আজ বিধ্বস্ত ও শ্বাসরোদ্ধ । জঙ্গিরা ধর্মের নামে, জিহাদের নামে আত্বঘাতী হয়ে ধর্মের আদর্শ ও নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গী দেখাচ্ছে ।

আর বিশ্বের যে জাতি জঙ্গি তৈরীতে সর্বদিক দিয়া জঙ্গিদের সহযোগীতা করতেছেন তারা কি আজ তৃপ্তি পাচ্ছেননা ? যে দেশ জঙ্গিদের লালন পালন করে তারাই আজ নিধনের নামে বড় বড় নীতি বাক্য শুনাচ্ছেন ।

মার্কিন সেনারা ২০০১ সালে আফগানিস্হান থেকে আল কায়দা ও তালেবান গোষ্ঠীসহ সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের দোহাই দিয়ে দেশটিকে দখল করে নেয়। তারপর হামলা করে ইরাকে ।

আমেরিকানরা জেনে শুনে জঙ্গিদের মৌচাকে ঢিল ছুড়ে, যাতে জঙ্গিরা বিশ্বময় ছড়িয়ে যেতে পারে। জঙ্গি সৃষ্টিতে আমেরিকার মদদ দিতে যেমন আগ্রহ আছে, আবার ওদেরকে কুকুরের মতো মারার আগ্রহেরও ঘাটতি নেই।

বিশ্বের যেসব দেশ জঙ্গিবাদ মদদ দিচ্ছে অথবা জঙ্গিদের অর্থের যোগান দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে হবে। জঙ্গিবাদের কালা জ্বরে আজসারা বিশ্ব শীতার্ত।

এরপর থেকে এশিয়া তথা বিশ্বময় জঙ্গিরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় । অন্যের ক্ষতি করতে গিয়ে মুরব্বী দেশ গুলো আজ নিজেরাই দিশেহারা । দিনে দিনে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করতে বাধ্য হচ্ছে ।

কেউ না বুঝে ধর্মের উন্মাদনায় নাচে আবার কেউ অর্থের গরমে ধর্মান্ধদের নাচায়। শুধু ইসলাম ধর্ম না, পৃথিবী সকল ধর্মই মানুষ হত্যাকে মহাপাপ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সকল ধর্মই সৃষ্টি জগতের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি হয়েছে । ধর্মের নীতি ও আদর্শই একমাত্র মানুষকে অন্য ধর্ম গ্রহণ বা বর্জন করাতে পারে । যার যার ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এটাই বিদায় হজ্জে বলেছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ।

ইসলাম ধর্মে কিছু সর্বজনপ্রিয় শব্দ আছে, যে শব্দ গুলো ধর্মের সাথে ভালোভাবে জড়িত । যেমন ধর্মপরায়ণ, ধর্মভীরু, ধর্মান্ধতা ।
ধর্মপরায়ণ : যাঁরা ধর্মের নিয়ম – নীতি মেনে চলেন।
ধর্মভীরু : যাঁরা ধর্মকে ভয় ও শ্রদ্ধা করেন ।
ধর্মান্ধ : যারা ধর্মের মহত্ত্ব ও সৌন্দর্যকে বাদ দিয়ে শুধু বাইরের আচার-আচারণকেই বেশি প্রাধান্য এবং ভুল ব্যাখা করেন।

ধর্মভীরু ও ধর্মপরায়ণ হলে ধর্ম ও সমাজের জন্য মঙ্গল । কিন্তু ধর্মান্ধতা ধর্ম ও মানব জাতির জন্য অমঙ্গল বয়ে আনে।

এ ধর্মান্ধতাই জঙ্গিদের উপর শয়তান রূপে ভর করেছে। আবার কাল ভেদে ভিন্ন রূপ ধারণ করতে পারে। তাদের এখন এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ওপর কুনজর পড়েছে । উচ্চ শিক্ষিত মেধাবী তরুণ সমাজকে তাদের দীক্ষায় দীক্ষিত করতেছে ।

জঙ্গিরা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে তাদের বিষাক্ত বীজ বপন করতেছে তা নয় । স্কুল, কলেজেও তারা বীজ বপনের পায়তারা করছে।

এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ডকে ভেঙ্গে দেওয়ার মহা পরিকল্পনায় তারা লিপ্ত । তাই বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন দিতে হবে। তরুণ ও ছাত্রদেরকে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়াতে হবে। খেলাধূলা, নাটক, বিতর্ক এই সব সৃজনশীল কর্মকান্ডে তরুণ ও ছাত্রদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

বর্তমান সরকার বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কেউ আইএস আছে বলে স্বীকার করছেন না । কেন দাদার ভয়ে? জঙ্গিদের কাছ থেকে আইএস এর পতাকা এবং পোষাক পাচ্ছেন । আইএস প্রতিটি হামলার দ্বায় স্বীকার করছে। তারপরও আইন-শৃঙ্খলা আইএস এর কথা অস্বীকার করতেছেন ।

গর্তে ইঁদুর রেখে গর্ত বন্ধ করে লাভ কি ? আইএসই জেএমবি, জেএমবিই এই আইএস।

চট্রগ্রামে আলোচিত মিতু হত্যা পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সারা দেশে জঙ্গি ধরার জন্য সাঁড়াশী অভিযান চালায় । তাতে গ্রেফতার হয় ১৩থেকে ১৪ হাজার মানুষ । তারপরও কি ভাবে, গুলশাল ও শোলাকিয়ায় ঈদের দিনেও জঙ্গিরা হত্যাযজ্ঞ চালায়? এ অভিযান শুধু প্রশ্নবিদ্ধ তা নয় । সাঁড়াশী অথবা চিরুনি অভিযানে কোন সুফল আসবেনা, যদি চিরুনির দাঁতের ফাঁক দিয়ে জঙ্গিরা বের হয়ে যায়

বাংলাদেশের মতো দেশে জঙ্গিবাদ অর্থনীতির জন্য চরম হুমকি । জঙ্গিবাদের বিষাক্ত ছোবলে এ দেশের শিক্ষিত যুবকেরা আজ পথভ্রষ্ট ও সমাজচ্যুত ।

আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বুকে জঙ্গিরা লক্ষহীন ভাবে আঘাত করতেছে । দেশের ভূখণ্ডকে জঙ্গি মুক্ত করতে হলে, প্রথমে বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জঙ্গি মুক্ত করতে হবে।

আমরা জুলাই মাসের ১২ তারিখে পত্র-পত্রিকায় দেখেছিলাম ৫০ জন বিচারককে বদলি করা হয়েছে তাতে কোন লাভ হবেনা।

বদলির পেছনে যুক্তিসঙ্গত কোন ব্যাখ্যা সরকার দিতে পারেননি।

বিচারকরাও জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত থাকতে পারে। সাথে স্বাধীন পেশার মানুষ আইনজীবিরাও। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলো যদি জঙ্গি মুক্ত করা না যায়, তাহলে ব্যস্তে যাবে সকল উদ্যেগ ।

কারণ জনগণ যদি জঙ্গিদের বিরোদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন অথবা জঙ্গিদের ধরেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকটেই হস্তান্তর করবেন।তারপর কিছুদিন পর জঙ্গি মদদ দানকারী বিচারক এবং আইনজীবিদের সহযোগীতায় জামিনে বেরিয়ে আসবে।

জঙ্গিদের বিচারের জন্য আইনকে যুগ উপযোগী করতে হবে । জঙ্গি সম্পৃক্ত হাজার হাজার মামলা দ্রুত নিস্পত্তি করতে হবে । মোটকথা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে ।

বাংলাদেশের হাজার বছরের সংস্কৃতি ও এতিহ্য আজ জঙ্গিদের দৌরাত্ম্যে কলঙ্কিত হচ্ছে । আমরা যদি মনে করি, ” চাচা আপন প্রাণ বাঁচা ” তাহলে এই ভূলের খেসারত সমস্ত জাতিকে দিতে হবে । আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক । আমরা কেউ চাইনা, মধ্যম আয়ের দিকে ধাপিত দেশটা ইরাক, সিরিয়া, পাকিস্তান ও আফগানিস্হানের মতো অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হোক।

জঙ্গিরা ধর্ম, দেশ, জাতি ও সমাজের মরণ ব্যাধি ক্যান্সার। তাই এদেরকে সমূলে নিধনের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে । জঙ্গিরা কারোও আত্বীয় হতে পারেনা। সবাই মিলে এদের বিরোদ্ধে অপ্রতিরোধ্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জঙ্গি বিরোধী সামাজিক আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করতে হবে।

পত্র-পত্রিকায় ও বিভিন্ন মিডিয়াতে জঙ্গি বিরোধী প্রচার-প্রচারণা আরও জোরদার করতে হবে। প্রতিটি পত্র-পত্রিকা বিতরণের সময় জঙ্গি বিরোধী লিফলেট বিতরণ করা যেতে পারে। মসজিদ অথবা ইসলামী জনসভায় জঙ্গিদের বিপক্ষে জোরালো বক্তব্য দিতে হবে ।

জঙ্গি দমনে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আধুনিক ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। পিতা-মাতাকে সন্তানের চলার গতি-বিধি নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে ।

ঢালাওভাবে বিএনপিকে জঙ্গিবাদের মদদদাতা বললে আওয়ামী লীগের ভুল হবে । নিজেদের ঘর আগে ঠিক করতে হবে । আওয়ামীলীগ নেতাদের বংশধরেরা জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত আছে তা প্রমানিত।

জঙ্গি সম্পৃক্তা আছে এমন রাজনেতিক দল গুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে । এর জন্য বাংলাদেশের সকল রাজনেতিক দল গুলোকে সমঝোতার এক টেবিলে বসতে হবে। বাংলার প্রতিটি পাড়ায়-মহল্লায় কার্যকর জঙ্গি বিরোধী কমিটি করতে হবে ।
” জঙ্গিদের ঠাঁই স্বাধীন দেশে নাই ”

হামলাকারী জঙ্গিরা আইএস না জেএমবি?..

About The Author

সাইদুর রহমান সাইদুল, লেখক ও কলামিস্ট, saidurrahman2645@gmail.com

Leave a Reply