Home / শীর্ষ সংবাদ / ছাত্রীদের চিকিৎসার নামে প্রতারণা : মতলবে ভণ্ড কবিরাজের কারাদণ্ড
ছাত্রীদের চিকিৎসার নামে প্রতারণা : মতলবে ভণ্ড কবিরাজের কারাদণ্ড

ছাত্রীদের চিকিৎসার নামে প্রতারণা : মতলবে ভণ্ড কবিরাজের কারাদণ্ড

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার দিঘলদী গ্রামের কাউসার (২৮) নামে এক ভন্ড কবিরাজকে এক বৎসর কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রামমাণ আদালত।

সে উত্তর দিঘলদী গ্রামে আশ্রাফ আলী প্রধানের ছেলে।

গত ৩০ এপ্রিল রাত ৮ টায় ভ্রামমাণ আদালতে এ রায় প্রদান করে করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আইরিন আক্তার।

উপজেলার ডিংগাভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের অসুস্থ্ ছাত্রীদের চিকিৎসার নাম করে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের জিম্মি ও প্রতারণা করে টাকা আদায়ের অভিযোগে তাকে এ সাজা প্রদান করা হয়।

অপর দিকে ভণ্ড কবিরাজের নিকট শিক্ষার্থীদের যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগে লেজাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ প্রদান করা হয়।

এছাড়াও স্থানীয় চেয়ারম্যান শহিদ উল্লাহ প্রধানকে ডিংগাভাঙ্গা উচ্চবিদ্যালয়সহ ইউনিয়নের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভন্ড কবিরাজদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নির্দেশ প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

জানা যায়, ডিংগাভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের অধ্যয়ণরত বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় ৪০ জন ছাত্রী বিগত এক মাসে বিভিন্ন সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা হল আকলিমা আক্তার, ফারিয়া, আঁখি, সাবিনা, মারিয়া, মুনিয়া, নবম শ্রেণির মাকসুদা, ছালমা, আছমা, খুকি, নাজমাসহ অন্যান্যরা। শিক্ষার্থীরা ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী। তন্মধ্যে ডিংগাভাঙ্গা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন তফাদারের মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী আকলিমা আক্তার বর্তমানে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অসুস্থ শিক্ষার্থী মারিয়াসহ দুজনের কাছ থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকা চিকিৎসার নামে নিয়েছে বলে ভণ্ড কবিরাজ কাউছার স্বীকারোক্তি দেয়।

এ সময় অসুস্থ শিক্ষর্থীদের দেয়া বেশ কয়েকটি তাবিজসহ আলামত উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার পর শ্রেণিকক্ষে এক এক করে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে এলাকার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের উপর জ্বীন আশ্রয় করেছে বলে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি অপপ্রচার চালায়। এ ঘটনাটির একটি স্বার্থান্বেষী মহল উত্তর দিঘলদী গ্রামের ভন্ড কবিরাজ কাউছারের মাধ্যমে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।

এ সুযোগে লেজাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাকির হোসেন, সাবেক ইউপি সদস্য সরফ উদ্দিন ওই ভণ্ড কবিরাজের সাথে আঁতাত করে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য সাত হাজার টাকা করে চুক্তি করে বলে এলাকার বেশ কয়েকজন জানান।

এদিকে মতলব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আকলিমা আক্তার জানান, গত এক মাস পূর্বে সে ও হঠাৎ শ্রেণিকক্ষে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার সহপাঠিরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেয়। ঘটনার পর কাউছার কবিরাজ তার কাছে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আমার বাড়িতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসা করতে সাত হাজার টাকা দিতে হবে বললে আমার অভিভাবক রাজি হয়নি। কয়েকদিন সুস্থ থাকার পর গত ২৬ এপ্রিল আমি আবারও অসুস্থ হয়ে নাকে-মুখে রক্ত বের হলে দ্রুত আমার বাবা-মা আমাকে মতলব হাসপাতালে নিয়ে আসে।

বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ কে এম মাহাবুবুর রহমান এ বিষয়ে কবিরাজের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নিকট অভিযোগ করলে তিনি অনেকটা কৌশলে ভন্ড কবিরাজ কাউছারকে তার কার্যালয়ে নিয়ে আসে।

পরে তার ভন্ড কবিরাজের স্বীকারোক্তিতে এ রায় প্রদান করা হয়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিবেদক- মাহফুজ মল্লিক
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১: ৫৯ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০১৭, রোববার
ডিএইচ

Leave a Reply