Home / সম্পাদকীয় / চাঁদপুরের স্যানিটেশন উন্নয়নে সাধুবাদ
Editorial

চাঁদপুরের স্যানিটেশন উন্নয়নে সাধুবাদ

জাতীয় স্যানিটেশন মাস ও বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস ২০১৬ উদযাপিত হয়। চলতি বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ি’। স্যানিটেশন মাস ও বিশ্ব হাতধোয়া দিবসে ১৮ অক্টোবর চাঁদপুরে র‌্যালি ও আলোচনা সভা হয় । সকাল ৯টায় হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে দিবসের বর্ণাঢ্য র‌্যালির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল।

র‌্যালির পূর্বে শিক্ষার্থীদের হাত ধুয়ে হাত ধোয়া দিবসের উদ্বোধন করা হয়। পরবর্তীতে স্যানিটেশন মাস ও বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসের র‌্যালিটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে ইলিশ চত্ত্বর গিয়ে শেষ হয়। ১০ টায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে স্যানিটেশন মাস ও বিশ্ব হাতধোয়া দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর চাঁদপুরের ডিস্ট্রিক হাইডিল কর্মকর্তা আইরিন সুলতানার পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল।

জেলা প্রশাসক আব্দুল সবুর মন্ডল বলেন, ‘হাত ধোয়ার সাথে স্যানিটেশনের পরস্পর সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে টয়লেটে বদনা ও টেপের ব্যবহার করা হয় না। তারা টয়লেট টিস্যু ব্যবহার করে। কিন্তু আমাদের দেশে বদনা এবং টেপ ব্যবহার করা হয়। সাবানের পাশাপাশি লিকুয়েট স্যুপ ব্যবহার করা হয়। ১৫ বছর আগেও আমাদের দেশে স্যানিটেশন ব্যবহার তেমন একটা করা হতো না। আমরা এখন অনেক সচেতন হয়েছি। যার কারণে আমাদের অনেক পরিবর্তন হয়েছে।চরাঞ্চলের যে সব বাড়িতে স্যানিটেরি লেট্রিন নেই, তাদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়িতে উন্নত টয়লেট তৈরি করতে হবে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য হাত ধোয়ার টেপের ব্যবস্থা করা হবে।’

প্রসঙ্গত, উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে আগামী প্রজন্মের মারাত্মক সব সংক্রামক রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহার করে এবং খাবার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পর সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার অভ্যাস করে তা হলে পানিবাহিত নানা ধরনের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে পারব।

প্রাত্যহিক জীবনে এর গুরত্ব বুঝে তা’মেনে চলা উচিত। হাত ধোয়ার সুফল পেতে হলে সঠিক সময়ে যেমন খাবার আগে ও টয়লেটের পর হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়তে হবে।

সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস রোগ প্রতিরোধ সবচেয়ে সহজ, কার্যকর ও সাশ্রয়ী উপায় হিসেবে বিবেচিত। বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস হচ্ছে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সকলের মাঝে সচেতনতা তৈরির প্রচারণার একটি দিন।

দেশে ভূগর্ভস্থ পানি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছি। ব্যবহৃত পানির মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ ভূ-গর্ভস্থ ও ২০ ভাগ পানি ভূ-উপরিস্থ। ভূ-গর্ভস্থ পানির বেশি ব্যবহার হলে পানির স্তর নিচে নেমে যাবে। এর প্রেক্ষিতে জমিতে শুষ্কতা ও উর্বতা শক্তি কমে যায়

চাঁদপুরের সব উপজেলাগুলোর স্যানিটেশন গড় অর্জন ৯৬ ভাগ । এর মধ্যে পিছিয়ে রয়েছে হাইমচর উপজেলা। ২০০৩ সালের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সারা দেশব্যাপি জরিপের রিপোর্ট মতে, চাঁদপুরের ৮ টি উপজেলার ৭৯ টি ইউনিয়নের পরিবারের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২০ টি। তখন স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারকারী সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ৮ শ’৭৬ টি পরিবার ।

চাঁদপুরে স্যানিটেশন অর্জনের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে কচুয়া পৌরসভা এবং সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে চাঁদপুর পৌরসভা । বিশেষ করে পৌরসভার শহরতলি বা পল্লী এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারের পরিস্থিতি সর্বদাই নাজুক পরিস্থিতিতে বিরাজ করছে । এ ছাড়াও যৌথ পরিবারগুলো পারিবারিক কারণে একান্নভুক্ত পরিবারে পরিণত হওয়ায় স্যানিটেশন পরিসংখ্যানের পরিবর্তনও হচ্ছে ।

২০১১ সালের জাতীয় আদমশুমারি অনুযায়ী চাঁদপুরের সব উপজেলার পরিবারের সংখ্যা আগস্ট ২০১৬ পর্যন্ত দাঁড়ায় ৪ লাখ ৩২হাজার ২ শ’ ৬০ টি। ২০১১ সাল থেকে ডিপিএইচ ই, স্ব স্ব ইউনিয়নের ২০% উন্নয়ন কাজের তহবিল কর্তৃক,এনজিও, পারিবারিক বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও কমিউনিটি কর্তৃক স্থাপিত বা নির্মিত স¦াস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭ বছরে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭ শ’২০ টি বৃদ্ধি পেয়ে পরিবারের সংখ্যা দাড়াঁয় ৪ লাখ ১৮ হাজার ৫ শ’ ৯৬ টি।

সুতরাং আমরা আশা করি , স্যানিটেশনে এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় । দেশে এখন উন্মুক্ত স্থানে মল-মূত্র ত্যাগ করার মত বদ অভ্যাস বন্ধ হয়েছে । চাঁদপুর জেলা খুব শীঘ্রই কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে। ব্যাপক সচেতনতাই আমাদের হাত ধোয়ার সুফলেই সঠিক সময়ে যেমন খাবার আগে ও টয়লেটের পর হাত ধোয়ার অভ্যাসও তৈরি হচ্ছে ।

সম্পাদকীয় ।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ৭:০২ পিএম, ১৯ অক্টোবর ২০১৬, বুধবার
এইউ

Leave a Reply