Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে কন্যা শিশুর ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা চেষ্টা
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে কন্যা শিশুর ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা চেষ্টা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে কন্যা শিশুর ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা চেষ্টা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে পাঁচ বছরের কন্যাশিশুর ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন তার সৎ মা।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, রিনা বেগম নামের ওই নারী শিশুটির গোপনাঙ্গে লাঠি ও ইটের গুঁড়ো ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এতে শিশুটি মারাত্মকভাবে আহত হয়ে পড়েছে।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মানুরি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

শিশুটি এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটির গোপনাঙ্গে সংক্রমণ হয়েছে।

এদিকে শিশুটির মা অভিযোগ করেন, বাবার বাড়িতে সৎ মা দিনের পর দিন তার সন্তানের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। খবর পেয়ে শিশুটির মামা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।

অপরদিকে শিশুটির মামারা যখন মেয়েটিকে নিয়ে উৎকণ্ঠায় তখন সৎ মা রিনা উল্টো তাদেরই বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগে মামলা ঠুকে দিয়েছে। এখন শিশুটির পাশাপাশি মিথ্যা মামলায় হয়রানির উৎকণ্ঠায় স্বজনরা।

তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, একপক্ষ অভিযোগ দেওয়ায় মামলা হয়েছে। পাল্টা অভিযোগ পেলে ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে।

শিশুটির মা নাজমুন্নাহার ও মামা ফারুক হোসেন বলেন, ২০০৬ সালে বালুমুড়া এলাকার এমদাদুল্লাহর সঙ্গে নাজমুন্নাহারের বিয়ে হয়। কয়েক বছর ধরে স্বামীর নির্যাতনে নাজমুন্নাহার অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। দুই বছর আগে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তাদের দুটি কন্যাসন্তান ছিলো। পারিবারিক সালিসে সিদ্ধান্ত হয় সাত বছরের বড় মেয়েটি মায়ের কাছে এবং পাঁচ বছরের ছোট মেয়েটি থাকবে বাবার কাছে। এর ছয় মাস পরই রিনাকে বিয়ে করেন এমদাদুল্লাহ। মেয়ের ভরণ-পোষণের জন্য এমাদুল্লাহর টাকা দেয়ার কথা থাকলেও কিছুদিন পর তা বন্ধ করে দেন। এ নিয়ে নাজমুন্নাহারের ভাইদের সঙ্গে এমাদাদুল্লাহর বিরোধ শুরু হয়।

ফারুক হোসেন আরো অভিযোগ করেন, এ সময়ে সৎ মা রিনা বেগম ছোট মেয়েটির ওপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করেন। মেয়েটির যৌনাঙ্গের মুখে তালপাখার হাতল ও ইটের গুঁড়ো ঢুকিয়ে দেন তিনি। এতে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে।

এই খবর পেয়ে গত ২১ ডিসেম্বর শিশুটির মামা ফারুক, এমরান ও সোহরাবসহ কয়েকজন এমদাদুল্লাহর বাড়িতে যান। তারা শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে এমদাদুল্লাহ ও তার স্বজনরা এতো অত্যাচারের পরেও বাধা দেন।

একপর্যায়ে ২৪ ডিসেম্বর তারা জোর করে শিশুটিকে নিয়ে রামগঞ্জ স্বাস্থ কমপ্লেক্সে যান। সেখানে চিকিৎসকরা শিশুটির গোপনাঙ্গে মারাত্মক জখমের কথা জানিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসার পরামর্শ দেন।

পরে ২৬ ডিসেম্বর শিশুটিকে ঢাকা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। গত মঙ্গলবার তাকে ওসিসিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকায় হাসপাতালে বসেই শিশুটির মামারা খবর পান তাদের বিরুদ্ধে হামলা-ভাঙচুরের মামলা করেছে রিনা বেগম।

ওসিসির সমন্বয়ক ডা. বিলকিস বেগম বলেন, ”শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে মেয়েটি চিকিৎসাধীন ছিল। তার গোপনাঙ্গে ইনফেকশন হয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছি। এরপর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে এমদাল্লাহর বড় ভাই সানাউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ”এখানে বাচ্চার ওপর কোনো নির্যাতন হয়নি। ওরা জোর করে নিয়ে গেছে। এটা ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা।”

ফরিদগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রঞ্জিত কুমার দাস বলেন, ”এক পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি আমরা। তারা বলছে- হামলা চালিয়ে মেয়েটিকে নিয়ে গেছে। তবে শিশুটির ওপর নির্যাতনের কথা শোনা গেছে। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।। আপডেট : ০৮:৩০ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫, সোমবার

ডিএইচ/এমআরআর