Home / শীর্ষ সংবাদ / চলতি বছর ৪ লাখ মে.টন ইলিশ উৎপাদনের সম্ভাবনা

চলতি বছর ৪ লাখ মে.টন ইলিশ উৎপাদনের সম্ভাবনা

চাঁদপুর নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট এর ইলিশ গবেষক ড.আনিছুর রহমান চাঁদপুর টা্ইমসকে জানান,‘চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে দেশের সকল ইলিশ উৎস সমূহ থেকে ৪ লাখ মে.টন ইলিশ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে চাঁদপুর টাইমসকে জানান। জাটকা রক্ষা কর্মসুচি,মা মাছ সংরক্ষণে অভয়াশ্রম সুরক্ষা বিদ্যমান থাকলে এ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে তিনি আ্শাবাদী ।’

২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী ৩ লাখ ৭৫ হাজার ইলিশ উৎপন্ন হয়েছে বলে তিনি জানান। ইলিশ আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি আমাদের জাতীয় সম্পদ। অতীতকাল থেকেই আমাদের জাতীয় অর্থনীতি,কর্মসংস্থান এবং আমিষের চাহিদা পুরণে ইলিশ মাছ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইলিশের অবদান ১২%।

প্রতি বছর ইলিশ মাছ রপ্তানি করে প্রায় ৫’শ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। পৃথিবীর সব দেশেই এ মাছের চাহিদা রয়েছে। কেননা এটি একটি সুস্বাদু মাছ। সারা পৃথিবীতে যে পরিমাণ ইলিশ উৎপাদন হয়ে থাকে তার ৭০% বাংলাদেশে, ২০% ভারতে, ৫% মায়ানমারে এবং বাকি ৫% ভাগ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পাওয়া যায় । প্রাকৃতিকভাবেই আমাদের দেশের নদ-নদীগুলোতে ইলিশের বিচরণ রয়েছে।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, ইলিশ বিভিন্ন সময় স্বাদু পানি, লবণাক্ত ও আধা লবণাক্ত পরিবেশে কাটায়। তবে ডিম পাড়ার সময় হলে বঙ্গোপসাগড়ের মেঘনা মোহনায় এসে স্বাদু বা মিঠা পানিতে প্রবেশ করে। ডিম ছেড়ে পুনরায় লবণাক্ত পানিতে চলে যায়। এটি ইলিশের জীবনধারা । প্রতি বছর এক জোড়া পুর্ণাঙ্গ ইলিশ একবারে ১০-২০ লাখ ডিম ছাড়ে। এর ৯৮ ভাগই ইলিশের রেণুতে পরিণত হয়ে বেঁচে থাকার জন্যে ক্রমশ উজানে প্রবেশ করে। স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে মেঘনা নদীর নিম্নভাগ,সাহাবাজপুর,কুয়াকাটা,ঢালচর,আন্দারমানিক প্রভৃতি।

এসব স্থানকে মৎস্য বিজ্ঞানীরা ইলিশ প্রজনন মৌসুমে অভয়াশ্রম বলে থাকি। দেশের বিভিন্নস্থানে ডিম ছাড়ার পর রেণুতে পরিণত হওয়া সময়কে ইলিশের জাটকা বলা হয়। একটু বড় হলে জেলেরা স্থানীয় ভাষায় বলে থাকে টেম্পু ইলিশ। প্রতি বছর জাটকা মাছগুলো ইলিশে পরণিত হওয়ার সময় দেশেরই নদ-নদীর তীরবর্তী এক শ্রেণির জেলেরা দিন বা রাতের বেলায় এক প্রকার ছোট ব্যাসের নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল দিয়ে ঐ ইলিশের জাটকাগুলো ধরে ফেলে।

প্রতি বছর যে পরিমাণ জাটকা ওইসব জেলেদের জালে ধরা হয় তার প্রতিটির ওজন ১০ গ্রাম করে বিবেচনা করলে প্রতি বছর ১৯ হাজার মে.টন জাটকাই এসব জেলেরা ধরছে। যার সংখ্যায় যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে দাঁড়ায় ১৯৭ কোটি ৪৮ লাখ। এর ১০ থেকে ১৫ ভাগ ইলিশের জাটকা রক্ষা করা সম্ভব হলে বছরে আরও ২ লাখ মে. টন ইলিশ উৎপাদন করা সম্ভব।

নদী গবেষণা কেন্দ্রের এক তথ্যে জানা গেছে, দেশের ১৫টি জেলায় ৮৫টি উপজেলায় ইলিশ উৎপদনের ভেতর অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এতে জেলের সংখ্যা প্রায় পৌনে ২ লাখ। যার গড় হার মাত্র ২ ভাগ। এ ২ ভাগ জেলে জীবন বাঁচানোর নামে আমাদের জাতীয় সম্পদ ইলিশের বংশ ধ্বংস করে দিচ্ছে। জাতীয় আয়ের বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।

এছাড়াও বছরের অক্টোবরের ১৫ দিন ইলিশ মাছের ডিম পাড়ার মৌসুম। এ সময় দেশের প্রধান প্রধান ইলিশ মাছের বিচরণগুলোতে ইলিশ ধরা সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব হলে ইলিশ উৎপাদন অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে বলে ইলিশ গবেষকরা দাবি করেছেন।

সরকার নির্দিষ্ট ব্যাসের কারেন্ট জালের উৎপাদন ব্যবহার, মজুদ ও বাজারজাত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা স্বত্ত্বেও কোন ফাঁকে বা কীভাবে পুনরায় তৃণমূল পর্যায়ে জেলেদের হাতে ওই জাল চলে আসে তা’ ভাবতে অবাক লাগে। এছাড়াও ওই জাল দিয়ে শিকার করা সেই জাটকাগুলো আবার নদী পথেই দেশের বিভিন্ন শহর, নগর, বন্দর এমনকি রাজধানী শহরে চলে যাচ্ছে। এ সব কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব হলে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ইলিশ উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধিই পাবে । ২০০২ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইলিশ উৎপাদন বাড়ছেই ।

এ বৃদ্ধির মূল কারণ হচ্ছে জাটকা রক্ষা কর্মসূচি জোরদার করা ও অভয়াশ্রমগুলোতে মা মাছ আহোরণ বন্ধ রাখা। প্রতি বছর গড়ে প্রায় আড়াই থেকে ৫শ’ কোটি টাকা ইলিশ রপ্তানি খাতে আয় হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ইলিশ প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহোরণ সম্পূর্ণ বন্ধ,জাটকা রক্ষা কর্মসূচি যথযথভাবে পালন,স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান,সদস্য ও গ্রাম পুলিশদের প্রতি কড়া নির্দেশ,কোনো অবস্থাতেই নৌ-সড়ক পথে জাটকা বাজারজাত করতে না দেয়া, কোস্টগার্ড ও সেনাবাহিনী সদস্যদের মোতায়েন করা,স্কুল,কলেজ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ধারণা প্রদান, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, ইলিশ মাছ রক্ষায় আন্তরিকতা,জেলেদের পূনর্বাসনের ক্ষেত্রে প্রকৃত জেলেদের সহায়তা,ইলিশ আহরিত এলাকায় র‌্যাবের টহল জোরদার, ইলিশ উৎপাদিত এলাকাগুলোর বিশেষ বিশেষ স্থানে সেনাবাহিনী ক্যাম্প স্থাপন,সরকারি-বেসরকারি চাকুরীজীবীরা জাটকরা ক্রয় থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি বিষয়গুলোতে নজর দিলে প্রাকৃতিক সম্পদ ইলিশ উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।‎

এদিকে চাঁদপুরের উত্তর সীমানায় মতলবের ষাটনল পর্যন্ত ঢাকার বুড়িগঙ্গা ও নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর দুর্গন্ধময়, দূষণ ও আর্বজনাযুক্ত পানি মেঘনায় প্রবেশ করা শুরু করেছে । এ বিষয়ে দেশের সকল বিশেষজ্ঞ,আনবিক শক্তি কমিশন ও মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ইলিশ সহ সকল প্রকার প্রাণিজ সম্পদ ও জীববৈচিত্রের ওপর একটি বড় ধরণের হুমকি এ দুর্গন্ধময়,দূষণ ও আর্বজনাযুক্ত পানি ।

প্রতিবেদ:আবদুল গনি
আপডেট,বাংলাদেশ সময় ১:২৫ পিএম,২৯ মে ২০১৭,সোমবার

Leave a Reply