Home / বিশেষ সংবাদ / গোয়াল ঘর থেকে পাঠদান শুরু করেছিলেন সেই শিক্ষকের করুণ কাহিনী
গোয়াল ঘর থেকে পাঠদান শুরু করেছিলেন সেই শিক্ষকের করুণ কাহিনী

গোয়াল ঘর থেকে পাঠদান শুরু করেছিলেন সেই শিক্ষকের করুণ কাহিনী

সময়টা ১৯৭৩ সাল। মে মাসের ২১ তারিখ। সুবিধাবঞ্চিত চা শ্রমিক সন্তানদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করার শপথ নিলেন একজন। শুরু থেকেই নানান প্রতিবন্ধকতা। নানান বাঁধা। সমস্ত বাঁধা-বিপত্তি জয় করার মনোবাসনা প্রসারিত হতে থাকলো তার নিভৃত মননে।

জীবনের আকাবাঁকা পথে শিক্ষার আলো নিয়ে এগিয়ে যাওয়া এই প্রান্তিক শিক্ষকের নাম মধুবন গোয়ালা। বয়স এখন সত্তর। জাগছড়া চা বাগানের একমাত্র বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত থেকে হাজার হাজার চা জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে অবশেষে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে অবসর নেন।

কিন্তু না। বসে থাকেননি তিনি। এলাকার অপেক্ষাকৃত গরিব-মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতে থাকেন নিয়মিতভাবে। এভাবেই এলাকায় তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে। ৫ অক্টোবর (মঙ্গলবার) আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস উপলক্ষে ‘কেমন আছেন আমাদের প্রান্তিক শিক্ষক’ এই জিজ্ঞাসায় দুপুরে ডাকছড়া চা বাগানে গিয়ে দেখা পাওয়ায় যায় এই শিক্ষককের।

আন্তরিকতার কমতি নেই কোনো! চোখের দিকে তাকালেই একজন আদর্শ শিক্ষককের অবয়ব এক মুহূর্তে ফুটে ওঠে। এমন একজন প্রান্তিক শিক্ষক তখন লাখ লাখ শিক্ষকের উজ্জ্বল প্রতিনিধি হয়ে বড় আশ্চর্যভাবে দাঁড়িয়ে যান।

কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই চা বাগানের অর্ধেক জনগোষ্ঠী আমার ছাত্র। শুরুতে শিক্ষার্থী পাওয়াই অনেক কঠিন ছিলো। তেমন কোনো আসবাবপত্র ছিলো না। ঘরে ঘরে গিয়ে আমি ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহ করেছি। পড়াশোনার গুরুত্বের কথা বুঝিয়ে আমার এলাকার চা শ্রমিক সন্তানদের স্কুলে আমি নিয়ে এসেছি। বলা যায়, ভাঙা একটি গোয়াল ঘর থেকে বিদ্যালয়ের কাছ শুরু করেছিলাম।

তিনি আরো বলেন, এই ডাকছড়া বাগানে একজন ম্যাট্রিক পাস ছাত্র ছিলো না, আমি করিয়েছি। অক্ষরজ্ঞানহীনদের জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে পেরে বড় ভালো লাগে। এবার মরলেও শান্তি পাবো।

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বলেন, এতোটা বইয়ের কোনো দরকারই নেই! কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো কোমলমতি শিশুদের জন্য যে বইগুলো বাছাই করছে তা শিশুদের সত্যিকারের জ্ঞান ও মনবিকাশের পথ প্রসারিত হচ্ছে না। শিশুদের ব্যাগই ভারী হচ্ছে ক্রমশই। সেই সঙ্গে ভারী হচ্ছে এসব বই তৈরির প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের পকেট।

তিনি আরো বলেন, আগের শিক্ষার মান আর বর্তমান শিক্ষার মানে অনেক তফাৎ রয়েছে। এখন তো এমএ পাস করা শিক্ষার্থীরা একটা দরখাস্তও ঠিক মতো লিখতে পারে না, অথচ আগে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রও তা লিখতে পারতো। এখন শিক্ষিত সবাই, কিন্তু জ্ঞনের ভিত্তিটা খুব দুর্বল।

আলোচনার এক ফাঁকে অনুরোধ করলেন তার হাতে গড়া বিদ্যালয়টি একবার পরিদর্শনের। ডাকছড়া চা বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার শিক্ষিকা তাদের এ প্রতিষ্ঠাতাকে পেয়ে দারুণভাবে আনন্দিত হয়ে পড়েন।

ডাকছড়া চা বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কল্পনা রানী দাম বলেন, মধুবন গোয়ালা অত্র এলাকার জ্ঞানের বাতিওয়ালা। হাজার হাজার শিক্ষার্থী তার হাত দিয়ে তাদের অক্ষরজ্ঞান লাভ করেছেন। তিনি আমাদের গর্ব।

জাগছড়া চা বাগানের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পরেশ কালেন্দি বলেন, ‌‌অবসরগ্রহণের পরে আমাদের স্যার মধুবন গোয়ালা এখনো শিশু-কিশোরদের জ্ঞানদান করে চলেছেন। সারাজীবন গভীর সততা, নিষ্ঠা আর পরিশ্রমের সঙ্গে শিক্ষাদান করে যাচ্ছেন আমাদের প্রিয় মাস্টারমশাই। (বাংলা নিউজ)

নিউজ ডেস্ক ।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ৭:৫০ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০১৬, বুধবার
এইউ

Leave a Reply