Home / ইসলাম / কুরবানির ফজিলত ও মাসআলা
কুরবানির ফজিলত ও মাসআলা

কুরবানির ফজিলত ও মাসআলা

: এমএম ইউসুফ বিন আব্দুল জলিল :


কোরবানি কী?
হযরত যায়েদ বিন আরকাম (রাযিঃ) হতে বর্ণিত একদা সাহাবায়ে কেরাম হুজুর (সঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল কোরবানী কী জিনিস? হুজুর (সঃ) ইরশাদ করলেন, কোরবানী হল তোমাদের পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর সুন্নত। (মুসনাদে আহমদ)

কোরবানির ফজিলত:

হাউজে কাউছার দান:
আল্লাহ তায়ালা সূরা কাউছারে তার হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূল্লাহ (সঃ) কে সম্বোধন করে বলেন, নিশ্চয় আমি আপনাকে নামায এবং কোরবানী করার মাধ্যমেই হাউজে কাউছার দান করবো।

প্রত্যেক পশমের পরিবর্তে একটি নেক:
সাহাবায়ে কেরাম হুজুর (সঃ) এর কাছে আরজ করলেন। কোরবানীর বিনিময়ে আমরা কী পাবো? হুজুর (সঃ) ইরশাদ করলেন, প্রত্যেক পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী পাবে। পূনরায় সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন। হে আল্লাহর রাসূল ভেড়ার পশমের বিনিময়ও কি একটি করে নেক পাবে? হুজুর (সঃ) উত্তরে বললেন হ্যাঁ তার পশমের বিনিময়ে ও এক একটি করে নেক পাবে। (মিশকাত)

পুলসিরাত অতিক্রম:
রাসূল (সঃ) ইরশাদ করেন কোরবানীর পশু তোমাদেরকে বহন করে পুলসিরাত পার করবে সতুরাং তোমরা মোটা তাজা পশু কোরবানী কর।

কোরবানীর দ্বারা গুনাহ মাফ করা হয়:
হযরত আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন হুজুর (সঃ) ইরশাদ করেন, হে ফাতেমা যাও তোমার কোরবানীতে হাজিরা দাও। কেননা কোরবানীর পশুর রক্ত যমীনে পড়ার সাথে সাথে তোমার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। তাছাড়া ঐ পশু রক্ত মাংসসহ কিয়ামতের দিন উপস্থিত করা হবে এবং তার সাওয়াব সত্তর গুন বৃদ্ধি করা হবে।

কাদের উপর কোরবানী ওয়াজিব:
যার কাছে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় খরচের পর সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা তার সম পরিমান মূল্যের টাকা থাকে তার উপর কোরবানী ওয়াজিব।

মাসা’আলা:
০১। যে পশুর কান আছে কিন্তু ছোট, সে পশু দিয়ে কোরবানী করতে কোন অসুবিধা নেই। (হিন্দিয়া)
০২। যে পশুর জন্মগত শিং নেই, সে পশু দ্বারা কোরবানী করা যায়েজ আছে।
০৩। কোন পশুর যদি আসল শিংটির তিন ভাগের একভাগ অথবা তার থেকে বেশি ভেঙ্গে যায়, তাহলে তা দ্বারা কোরবানী দেওয়া যায়েজ হবে না।
০৪। যে পশু খুব অসুস্থ্য অথবা এমন লেংড়া যে জবাই করার স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে পারে না, এরূপ পশু দ্বারা কোরবানী বৈধ না।
০৫। যে পশু জন্মগত ভাবেই এক অন্ডকোষ বিশিষ্ট সেই পশু দ্বারা কোরবানী জায়েজ।
০৬। যে পশুর অধিকাংশ দাঁত না থাকার কারনে ঘাস ইত্যাদি চাবিয়ে খেতে পারে না। তা দ্বারা কোরবানী জায়েজ নেই। (ফতুয়ায়ে আলমগীরি)
০৭। যে গরুর দুধের দুইটি বাট নেই তা দ্বারা কোরবানী জায়েজ নেই।
০৮। বাজাঁ পশু দ্বারা কোরবানী জায়েজ।
০৯। একটি গরু মহিষের মধ্যে এক থেকে সাত জন পর্যন্ত শরীক হয়ে কোরবানী দিতে পারবে।
১০। ছাগল ভেড়া দুম্বার কোরবানীর মধ্যে একাধিক ব্যক্তি শরীক হতে পারবে না।
১১। যদি কোরবানীর নিয়্যাত ছাড়া পশু ক্রয় করে এবং পরবর্তীতে তাদ্বারা কোরবানী করে তাহলে কোরবানী হয়ে যাবে।
১২। সুদ খোরের সাথে কোরবানী দেওয়া উচিৎ নয়। (কোফায়াতুল মুফতি)
১৩। গর্ভবতী জন্তুর কোরবানী জায়েজ, কিন্তু বাচ্ছা হওয়ার সময় যদি নিকট বর্তী হয় তাহলে কোরবানী মাকরূহ হবে। (আলমগীরি)
১৪। যবেহ করার পূর্বে যদি কোরবানী জন্তুর জীবিত বাচ্ছা হয় তাহলে বাচ্ছাটি ছদকা করা ওয়াজিব। যদি বাচ্ছাটি ও যবেহ করা হয় তাহলেও তার গোস্ত ছদকা করা ওয়াজিব। আর যদি বাচ্ছাটি জীবিত রেখে দেয় তাহলেও তা ছদকা করতে হবে। (ফওযায়ে শামী)
১৫। এক অংশ কোরবানী করেও সকল মুসলমান মৃতের উপর সাওয়াব পৌছানো যায়।
১৬। যদি কোন ব্যক্তি জবাই করার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে বিছমিল্লাহি আল্লাহু আকবর না বলে জবাই করে তাহলে তার গোস্ত খাওয়া হারাম হবে। (ফতওয়ে শামী)
১৭। যদি কোন মুসলমান অনিচ্ছাকৃত বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর না বলে কোরবানীর পশু জবাই করে ফেলে তাহলে তার গোস্ত খাওয়া হালাল।
১৮। প্রতিটি পশুর গলায় চারটি বড় রগ থাকে। জাবাই করার সময় চারটির যে কোন তিনটি রগ কাটা যেতে হবে। না হয় কোরবানী হবে না।
১৯। জবাই করার সময় কোরবানীর পশুর মাথা একেবারে পৃথক করা মাকরূহ।
২০। কাজের মজুরী হিসাবে শ্রমিককে কোরবানীর গোস্ত, চামড়া কিংবা পশুর কোন অংশ দেয়া জায়েজ নেই।
২১। যে সকল পশু দ্বারা কোরবানী হয় না সে সকল পশু কোরবানীর নিয়্যাতে কোরবানীর দিনগুলোতে জবাই করা মাকরূহ। যেমন হাঁস, মুরগী। (ফতুয়ায়ে আলমগীরি)
২২। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে বয়স ১ বৎসর হতে হবে, গরুর বা মহিষ এর বয়স কমপক্ষে ২ বৎসর হতে হবে এবং উট কমপক্ষে ৫ বছর হতে হবে।
২৩। কোরবানীর চামড়া মূল্য দিয়ে পুল, ব্রিজ, কালবার্ট, রাস্তা, মসজিদ, মাদরাসা, হাসপাতাল ইত্যাদি নির্মান করা জায়েজ নেই।
২৪। কোরবানীর চামড়া মূল্য দিয়ে ইমাম মোয়াজ্জিনের বেতন দেয়া জায়েজ নেই।
২৫। কোরবানীর জন্তুর মধ্যে আকিকা করা জায়েজ। যেমন একটি গরুর পাঁচ ভাগের দ্বারা কোরবানী এবং দুই ভাগের দ্বারা আকিকা করা যেতে পারে।
২৬। আকিকার গোস্তের এক তৃতীয়াংশ গরীব মিসকীনদের মাঝে বন্টন করা উত্তম এবং অবশিষ্ট দুই তৃতীয়াংশ আত্মীয় স্বজন এবং নিজেরা খেতে পারবে।
২৭। আকীকার চামড়ার হুকুম কোরবানীর চামড়ার হুকুমের মত। অর্থাৎ বিক্রি করলে মূল্য ছদকা করে দিতে হবে।

ঈদুল আজহার নামাজ পড়ার নিয়ম:
ঈদুল আযহার দুই রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব। এই দুই রাকাতে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর বলা ওয়াজিব।

বাংলা নিয়ত:
ঈদুল আযহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামায অতিরিক্ত ৬টি তাকবীর সহ এই ইমামের পিছনে আদায় করিতেছি।

তারপর আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বাধা হবে, তারপর ছানা পড়া হবে, তারপর নামাযের তাকবীরে তাহহীমার ন্যায় কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলতে হবে এবং হাত ছেড়ে দিতে হবে। তাপর অনুরূপ হাত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলতে হবে এবং হাত ছেড়ে দিতে হবে আবার অনুরূপ হাত উঠিয়ে আল্লাহ বলে হাত বেধে নিতে হবে এবং আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লা সহ সূরা ফাতিহা ও কেরাত ইত্যাদি সহকারে প্রথম রাকাত শেষ করে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠতে হবে দ্বিতীয় রাকাতের প্রথম সূরা ফাতিহা পড়ে তার সাথে সূরা কেরাত মিলিয়ে তারপর প্রথম রাকাতের ন্যায় অতিরিক্ত তিন তাকবীর বলতে হবে। এখানে তৃতীয় তাকবীরের পরও হাত ছাড়া অবস্থায় থাকবে। তারপর রুকুর তাকবীর বলে রুকুতে যাবে এবং যথা নিয়মে এই রাকাত শেষ করবে। এইভাবে করে দুই রাকাত নামাজ সমাপ্ত করবে।

আপডেট: ০১:০১ অপরাহ্ন, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫,  বুধবার

 চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫