Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / ফরিদগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের গাফলতিতে ছাগল ফিরলেও, মালিক ফিরেনি
Polli Biddot Faridganj.
ফাইল ছবি

ফরিদগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের গাফলতিতে ছাগল ফিরলেও, মালিক ফিরেনি

মাঠ থেকে ছাগল নিয়ে আসার জন্যে দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের শোল্লা গ্রামের দরিদ্র সফিকুর রহমান বেপারী। ছাগলগুলো বাড়ি ফিরে আসলেও ছাগলের মালিক আর বাড়ি ফিরে আসনেনি। অনেক খোঁজা-খুজির একদিন পর পল্লী বিদ্যুতের মেইন লাইনের আর্থিং (টানা তার) এর গোড়ায় মিলেছে তার লাশ।

নিহতের পারিবারের দাবী লাইন নির্মাণকারী ঠিকাদার ও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে সফিকুর রহমানকে জীবন দিতে হয়েছে।

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে মো. হাছান বেপারী বাদী হয়ে লাইন নির্মাণকারী ঠিকাদার ও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তবে ঠিকাদার এবং পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ দায় এড়ানোর জন্যে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন।

সরেজমিনে গেলে নিহতের পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসী এ প্রতিনিধিকে বলেন, গত বুধবার (১ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে সময় সফিকুর রহমান (৫৩) বাড়ির পাশে বিলের মধ্যে বেঁেধ রাখা ছাগল নিয়ে আসার জন্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। দুপুর গড়িয়ে বিকেল পেরিয়ে যাওয়ার পর সফিকুর রহমান বাড়ি ফিরছিলেন না।

এসময় তার বড় ছেলে মো. হাছান তার বাবাকে খুজতে বের হয়। বিভিন্ন জনের কাছে তার বাবাকে দেখেছে কিনা তা জানতে চায়। পরে তিনি শোল্লা বাজারের পশ্চিম পাশে বিলে বেঁধে রাখা ছাগল নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, তারপর রাত। নিকটাত্মীয়সহ সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে পরিবারের সবাই তার খোঁজে বের হয়। কোথাও তার সন্ধ্যান মিলছিলো না।

পরের দিন বৃহস্পতিবার ২ আগস্ট খোঁজা-খুজির এক পর্যায়ে নিহতের ছোট ছেলে বিল্লাল হোসেন সকাল সাড়ে ১১ টার সময় যে স্থানে ছাগলটি বাধা ছিলো তার একটু সামনে পানিতে পল্লী বিদ্যুতের (টানা তার) আর্থিং লাইনের সাথে সফিকুর রহমানের লাশ পড়ে থাকতে দেখে। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্যে চাঁদপুর মর্গে পাঠায়। শুক্রবার বাদ আচর জানাযা নামাজ শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

নিহতের বড় ছেলে মো. হাছান বেপারী চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, বাবার লাশ যেখানে পাওয়া গেছে ওই স্থানটি বিদ্যুতায়িত হয়েছিলো। ঘটনার দিন সকালে পাশ্ববর্তী কাদের পাটওয়ারী এই স্থানে ঘাস কাটতে গেলে তার পায়ে ঝিম ঝিম লাগে। পরে তিনি ঘাস না কেটে সেখান থেকে চলে যান। এর পূর্বে ওই স্থানটিতে মহিলারা শাক তুলতে গিয়ে ঝিম ঝিম অনুভব করেছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া বাবার মৃত্যুর পর আর্থিং লাইনের গোড়া এবং পানিতে টেস্টার দিয়ে চেক করে দেখে টেস্টারে লাল বাতি জ্বলছে।

অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ২২০ ভোল্টের মেইন লাইনের সাথে (টানা তার) আর্থিং লাইন লেগে গিয়েছিলো। যার কারণে বৃষ্টির মধ্যে লাইনটি বিদ্যুতায়িত হয়ে যায়। পল্লী বিদ্যুতের কামতা জোনের লোকজন তড়িগড়ি করে ফিলারে উঠে বিদ্যুতের লাইনটি বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েও এলাকাবাসীর বাধায় তা পারেনি। পরে পুলিশের উপস্থিতে লাইনটি অপসারণ করা হয়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, বাবার মৃতদেহে দেখা যায় হাতের তিনটি আঙ্গুল বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে জলসে গিয়েছে। এছাড়া ডান হাত ও বাম হাতে কিছু দাগ রয়েছে। এবিষয়ে আমি থানায় মামলা দায়ের দায়ের করেছি।

তবে বিদ্যুতায়িত হয়ে সফিকুর রহমানের মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কামতা জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এজিএম (ওএন্ডএম) মো. রফিকুল ইসলাম।

তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, বিদ্যুতের কারণে নয়, ভিন্ন কোন কারণে সফিকুর রহমানের মৃত্যু হতে পারে।

অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টানা তারটি (আর্থিং লাইন) ২২০ ভোল্টের এন্টিলাইনের কাছাকাছি ছিলো। আর পুরনো এই লাইনটি আপগ্রেডিং কাজ চলছে। আপগ্রেডিং শেষে হলে লাইনটি ফাইনালি চেক করা হবে। এছাড়া পুলিশের অনুমতি নিয়েই লাইনটি খোলা হয়েছে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই ফারুক এ প্রতিনিধিকে বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সফিকুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে নিহতের ছেলে হাছান বেপারী বাদী হয়ে লাইনের সাব-কন্ট্রাকটার শাকিল গং এর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন পিলারে উঠে টানা তারে লেগে থাকা মেইন লাইন অপসারণ করে।

সাব কন্ট্রাকটর শাকিল মুঠোফোনে এ চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘আমি ১১ হাজার ভোল্টের কাজ করেছি ৮ মাস পূর্বে। আন্ডার লাইনে কাজ করার এখতিয়ার আমার নেই। আমার কাজে কোন গাফিলতি ছিলো না।’

এদিকে জানা যায়, হতদরিদ্র সফিকুর রহমান কৃষি কাজের পাশাপাশি ছাগল পালন করতেন। পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্যে যে কাজ পেতেন তাই করতেন। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে কোন রকম খেয়ে পড়ে কাটছিলো তার জীবন। নিহতের স্ত্রী ব্রেন স্টোকে প্যারালাইজড হয়ে নানা জটিল রোগে ভুগছেন। একমাত্র মেয়ে রুবি দশম শ্রেণিতে পড়ে।

প্রতিবেদক- আতাউর রহমান সোহাগ

Leave a Reply