Home / উপজেলা সংবাদ / হাজীগঞ্জ / কচুয়ায় আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে অর্ধ-শতাধিক পরিবার দিশেহারা
কচুয়ায় আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে অর্ধ-শতাধিক পরিবার দিশেহারা

কচুয়ায় আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে অর্ধ-শতাধিক পরিবার দিশেহারা

চাঁদপুরের কচুয়ায় বিল্লাল হোসেন নামে এক আদম ব্যবসায়ী গত ক’বছর জেলার বিভিন্ন উপজেলার অর্ধ-শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে বিদেশ নেয়ার নাম করে কোটি টাকার বাণিজ্য করে এখন লাপাত্তা। এ আদম ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে একাধিক ভূক্তভোগীর লিখিত ও মৌখিক অভিযোগের আলোকে সর্বশেষ কচুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাহাজাহান শিশিরের সাথেও প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, কচুয়া উপজেলার কড়ইয়া ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামের আব্দুল মমিনের ছেলে প্রতারক আদম ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন ক’বছর ধরে জেলার হাজীগঞ্জ,ফরিদগঞ্জ,শাহরাস্তি,মতলব ও কচুয়া থেকে ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যের নেয়ার কথা বলে বিভিন্ন দেশে যেতে আগ্রহী বেকার যুবকদের অসহায়ত্ব ও সরলতার সুযোগ নিয়ে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

বছরের পর বছর এসব বিদেশমুখী যুবকরা আশায় পড়ে থেকে হয়রানি আর ভোগান্তির অন্তজ্বালে বুকে বাসা বেধেছে। অনেক পরিবারের শেষ সম্বলটুকুও বিক্রি করে দিয়েছে। কেউবা ব্যাংক ও এনজিওর চড়া মুনাফা দিয়ে ঋণের গ্লানি মাথায় নিয়ে হিমসিমের মধ্যে নিজ ও নিজেদের পরিবারের সদস্যদের অসহায়ত্ব জীবন যাপন করে আসছে।

আজ হচ্ছে কাল হচ্ছে বলে প্রতারক আদম ব্যবসায়ী বিল্লাল বিভিন্ন কিস্তিতে নগদ টাকা হাতে নিয়ে ঢাকা থেকে প্রশিক্ষণের নামে অতিরিক্ত অর্থ আত্র পাঁয়তারা করা ছিল তার কৌশলের অন্যতম দিক। কাউকে আবার ভ্রমণ ভিসা দিয়ে এক দু’ মাস পর পুনরায় দেশে ফিরত আসতে দেখা যায়। একের পর এক এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসে সরেজমিনে অনুসন্ধ্যানের মাধ্যমে। বর্তমানে প্রতারক আদম ব্যবসায়ী বিল্লালের গ্রামে ও ঢাকায় দু’টি আলিশান বাড়ি ছাড়াও রয়েছে একাধিক ফ্লট আকারে সম্পত্তি।

আদম ব্যবসায়ী বিল্লালের কাছে প্রতারিত হয়েছেন কচুয়া পৌরসভার কড়ইয়া গ্রামের মৃত হাজ্বী আব্দুল গফুরের ছেলে গাজী ওমর ফারুক হোসেন ও কোয়া গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে আরিফুল ইসলাম। তাদের বক্তব্যে জানা যায়,প্রতারক বিল্লাল প্রায় তিন বছর পূর্বে জাপান ও কানাডা নেয়ার নাম করে আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ক’ দফায় ২৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে ভিসা ও টিকেট ভুয়া হওয়ায় এ নিয়ে এলাকায় বেশ ক’ দফা সালিশ বৈঠক হয়।

সালিশে এক পর্যায়ে গাজী ফারুক হোসেন ও আরিফুল ইসলামকে বিল্লাল হোসেন ৭ লাখ টাকা ফেরৎ দেয় এবং বাকী ১৯ লাখ টাকা ফেরত দিতে না পেরে তার ইচ্ছানুয়ায়ী ও সালিশীদের মধ্যস্থতায় বাড়ির ৪ শতাংশ জায়গা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহাজাহান শিশিরের নামে ফেরত দেয়ার শর্ত সাপেক্ষে রেজিস্ট্রি করে দেয়। কিন্তু তিনি টাকা না দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথেও প্রতারনা করেছেন। তাদের মতে প্রতারনার শিকার হযেছেন কচুয়া উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে মো.ইউসুফ হোসেনের কাছ থেকে মালয়শিয়ার নাম করে ৫ লাখ টাকা নেয়।

বিদেশ না যেতে পেরে ব্যাংকের লোন চালাতে পারছেনা পরিবারটি। কচুয়া পৌর এলাকার হাসানকে সিংঙ্গাপুর নেওয়ার নাম করে ৫ লাখ টাকা নেয় প্রতারক বিল্লাল। বর্তমানে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে কর্মরত মো.ফারুক হোসেন প্রতারক বিল্লালের কাছে পান ১৩ লাখ টাকা।

এদিকে জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপশা গ্রামের আ.বারেক, আজাদ হোসেন, ওমর ফারুক, একই উপজেলার গুপ্টি গ্রামের আকবর হোসেন, জাহাঙ্গীর ও আমিনের কাছ থেকে মালেশিয়ার নাম করে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা করে নেয় প্রতারক আদম ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন।

হাজিগঞ্জ উপজেলার পাতানিশ গ্রামের জহির, পৌর এলকার ইকবাল ও রান্ধুনীমুড়া গ্রামের হাসানের কাছ থেকে কুয়েত ও মালেশিয়ার নাম করে ৪-৫ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায়।

শাহরাস্তি পৌর এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মালেকের ছেলেকে মালয়শিয়া নেয়ার নাম করে নেয় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এভাবে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে আদম ব্যবসায়ী বিল্লালের এজেন্টদের মাধ্যমে বিদেশ নেয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব ভূক্তভোগীদের মধ্যে অনেকে কচুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাহাজাহান শিশির ও কড়ইয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহসান হাবিব জুয়েলের কাছে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। কিন্তু আদম ব্যবসায়ী বিল্লাল জনপ্রতিনিধিদের সাথেও প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে বলে অভিযোগ উঠে।

প্রতারক বিল্লাল হোসেনের এলাকা ডুমুরিয়া গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘কচুয়ার ফারুক ও আরিফের লিখিত অভিযোগের আলোকে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশিরকে মেনে তার নামে আদম ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন নিজ বাড়ির ৪ শতাংশ সম্পত্তি রেজিষ্ট্রি দিয়ে এখন প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে। এমনকি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাজাহান শিশিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে তাঁর মানসম্মান ক্ষুন্ন করে আসছে।

কড়াইয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহসান হাবিব জুয়েলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত আদম ব্যবসায়ী বিল্লালকে আমার দপ্তরের আসতে দেখিনি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আমার কাছে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক শাহাজাহান শিশির বলেন,‘আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অনেকে মৌখিক অভিযোগ করেছে বিল্লালের বিরুদ্ধে। কিন্তু সর্বশেষ ১০ মাস পূর্বে ফারুক ও আরিফ নামের দু’ যুবকের লিখিত বক্তব্যে কানাডা যাওয়ার লক্ষ্যে তাদের কাছ থেকে ২৬ লাখ টাকা নিয়েছে বিল্লাল হোসেন।

আমার দপ্তরে ডাকার পর বিল্লাল নিজে আমাকে বলেছে ৪ মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দিবে। তার বাড়ির ৪ শতাংশ শর্তসাপেক্ষে আমার বরাবর লিখে এখন প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে।এ বিষয়ে প্রতারক বিল্লাল হোসেনের সাথে ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রতিবেদক : জহিরুল ইসলাম জয়
আপডেট,বাংলাদেশ সময় ৫:১০ পিএম,২০ অক্টোবর ২০১৭
এজি

Leave a Reply