Home / ইসলাম / ইসলামের আগমন
ইসলামের আগমন
প্রতীকী

ইসলামের আগমন

হে নবী, আপনি বলুন, আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ মাত্র, তবে পার্থক্য এই যে, আমার নিকট অহী অবতীর্ণ হয়। সূরা- কাহাফ: ১১১

আল্লাহ মানুষকে সত্য প্রদর্শকের জন্য যুগে যুগে নবী রাসূল প্রেরণ করেন। হযরত আদম (আ.) হতে আরম্ভ করে, এই পৃথিবীতে অসংখ্য নবী-রাসূল আগমন করেছেন।

আল্লাহ মানুষকে হিদায়েতের উদ্দেশ্যে নবী রাসূলের মাধ্যমে বহু কিতাব অবতীর্ণ করেন। এমন কোনো দেশ বা জাতি নেই, যেখানে আল্লাহর বার্তাবাহক আবির্ভূত হয়নি। হযরত মোহাম্মদ (সা.)- এর পূর্বে যত নবী রাসূল আবির্ভাব হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই প্রেরিত হয়েছিলেন নিদির্ষ্ট কোনো দেশ বা জাতির হিদায়েতের জন্যে।

সর্বশেষে আল্লাহ প্রেরণ করেন সৃষ্টির সেরা মহামানব বিশ্বের অনন্ত কল্যাণ মানবকূলের পরম ও চরম আর্দশ নবী রাসূলদের শিরোমণি হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে, তিনি সর্বশেষ রাসূল, তারপর আর কোনো নবীর আগমন হবে না।

কোনো নবী-রাসূলই সারা জগতের হিদায়েতের ভারপ্রাপ্ত হননি। কিন্তু হযরত মোহাম্মদ (সা.) প্রেরিত হয়েছিলেন শ্বেতকায়, কৃষ্ণকায়, আরব, তুর্কী, ইউরোপীয়, চীনা, ভারতীয় নির্বিশেষে সমগ্র জগতের হিদায়েতের জন্যে।

যে ধর্মের প্রবর্তন ও উৎকর্ষ সাধনের উদ্দেশ্যে, আল্লাহ যুগে যুগে রাসুল প্রেরণ করে আসছেন এবং সর্বশেষে সৃষ্ট সেরা মহামানব হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর হাতে যা পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়, কোরআনের মতে তাই হলো ইসলাম।

হযরত মোহাম্মদ (সা.) আপন প্রবৃত্তির তাড়নায় কিছুই বলতেন না, তিনি তা’ই বলতেন, যা আল্লাহর পক্ষ হতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি নির্দেশ হতো, আল্লাহ কর্তৃক জিব্রাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে যে বাণী অবতীর্ণ হতো তাই-ই মতলূ বা কোরআন, আর আল্লাহর তরফ হতে রাসূলল্লাহ (সা.)-এর অন্তরে যা ইলহাম হতো তাই-ই গায়রে মতলু বা হাদীস।

হিংসা-বিদ্বেষ, কাম-ক্রোধ, লোভ, পার্থিব সম্পদে আসক্তি থেকে মুক্তি, পরকাল হতে নিশ্চিন্ত থাকা, মারাত্মক, আধ্যাত্মিক, ব্যাধী হতে মানবাত্মাকে নিরাময় করা এবং সর্বপ্রকার অসচ্চরিত্রতা ও কুসংস্কার বিদূরিত করে, মানবসমাজকে সম্যকরূপে চরিত্রবান, ভদ্র ও সভ্য করাই নবী রাসূলদের কাজ।

সে সময় সমগ্র আরবে পূর্ণ অরাজকতা বিরাজমান ছিলো, সারা আরব অসভ্যতার লীলাক্ষেত্রে পরিণত হয়ে পড়েছিল। সর্বত্র ব্যভিচার, চুরি, ডাকাতি, আত্মকলহ, হত্যা, রক্তপাত অপ্রতিহতভাবে চলতে থাকত। প্রত্যেক গোত্রই অপর গোত্রের প্রতি শত্রুতাভাব পোষণ করত, প্রত্যেক সম্পদায়ই অপর সম্পদায়ের ক্ষতিসাধনের আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকতো, অতি খুটিনাটি বিষয়কে উপলক্ষ করে মহাযুদ্ধের সূত্রপাত হয়ে পড়তো। মারামারি, কাটাকাটি, রক্তপাত ছিলো তাদের দৈনন্দিন ব্যাপার। কোনো কোনো যুদ্ধ শতাব্দিকাল পর্যন্ত বংশানুক্রমে অব্যাহতভাবে চলতে থাকতো।

আরবের অনেক গোত্র লুটতরাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। লুটতরাজ দোষণীয় কাজ বলে পরিগণিত হত না। প্রত্যেক গোত্রই অপর গোত্রের ধন সম্পদ গৃহপালিত পশু এমনকি স্ত্রী কন্যা পর্যন্ত লণ্ঠন করে নিয়ে যেতো এবং বাঁদী-দাসীরূপে বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করতো। গুপ্তভাবে যিনা করাকে তারা অন্যায় মনে করতো না। তারা প্রকাশ্যে সভায় স্বীয় যিনা গুন্ডামীর লুটতরাজে কাহিনী বর্ণনা করাকে গৌরব মনে করতো। সে সময় আরবে লজ্জা বলতে কোনো বস্তু ছিলো না। সে কালে অসভ্য আরবগণ সম্পূর্ণ উলঙ্গাবস্থায় কাবার তাওয়াফ করাকে মহাপূণ্য বলে মনে করতো। তবে কুরাইশ বংশীয় লোকেরা একাজ করতো না।

তখন আরবে মদের প্রচলন ছিলো সবচাইতে বেশি। মদ্যপান না করা ছিলো এক বিস্ময়কর ব্যাপার। বন্ধুবান্ধব নিয়ে শরাবখানায় আড্ডা গেঁড়ে বসতো। সেখানে গায়িকাগণ নৃত্যাভিনয় ও গান-বাদ্য করতো এবং শরাব পান করতে থাকতো। আরবের ঘরে ঘরে জুয়া খেলা প্রচলিত ছিলো।

অতি প্রাচীনকাল হতে আরবগণ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখত, হযরত ইব্রাহীম (আ.) কর্তৃক আরবগণ একাত্ববাদের শিক্ষা পেয়েছিল। কালক্রমে তাদের মধ্যে বহুত্ববাদের উৎপত্তি হয়ে পড়ে, তারা মনে করতো যে, আল্লাহ আসমান-জমিন সৃষ্টি করে অবসরগ্রহণ করেছেন এবং যাবতীয় পার্থিব কাজ কর্মের ভার এ সমস্ত ছোট ছোট উপাস্যের হাতে ন্যস্ত করেছেন।

তারা মনে করতো মানুষের দৈনন্দিন আবশ্যক অভাব-অভিযোগ, তারাই পূর্ণ করে, সর্বশ্রেষ্ট উপাস্য সৃষ্টিকর্তার চেয়ে মানুষ এদের-ই মুখাপেক্ষী, তারা এদেরই উপাসনা করতো, এদের নামে কুরবানি দেয়া হতো, নিজেদের অভাব অভিযোগ পূরণ করে বিপদাপদ হতে মুক্তি লাভের জন্যে এদের নিকটই প্রার্থনা করতো।

পৌত্তলিকতার প্রভাবে ক্রমান্বয়ে আরব দেশে নানাপ্রকার মারাত্মক কুপ্রথার উদ্ভব হয়ে পড়লো, পৌত্তলিকগণ তাদের চরণতলে মানুষ পর্যন্ত বলি দিতে আরম্ভ করলো।

যবুর-তাওরাত-ইঞ্জিল যাবতীয় ধর্মগ্রন্থ বিকৃত ও রূপান্তরিত হয়ে পড়েছিল। একাত্ববাদের আলো লুপ্তপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। কোথাও সত্যের সন্ধান পাওয়া যেতো না। মানুষ ¯্রষ্টাকে ভুলে সৃষ্টির পদতলেই বার বার মস্তক অবনত করছিলো।

প্রতিমা পূজা, পুরোহিত পূজা, প্রকৃতি পূজা ছিলো সে কালের প্রধান ধর্ম।

সে সময় রাহমানুর রাহিম আল্লাহ প্রেরণ করেন সৃষ্ট সেরা মহামানব হযরত মোহাম্মদ (সা.)কে পৃথিবীর সমস্ত অনাচার অবিচার প্রতিকার প্রতিবিধান করার জন্যে।

আল্লাহ বলেন, তিনি আল্লাহ, যিনি তার রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন সহ পাঠিয়েছেন, যেনো তিনি তার দ্বীনকে সমস্ত বাতিল দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন। সূরা ফাতহ- ২৮

আরবের লোকেরা অতি অল্প সময়ের মধ্যেই নিজেদের স্বাধীন চিন্তাধারায় পবিত্র ইসলাম ধর্মের সত্যতা উপলব্দি করতে পেরেছে। তা সত্য বলে দৃঢ়ভাবে পালন করতে সক্ষম হয়েছে।

আরবের মানুষেরা শুধু ইসলাম গ্রহণ করেই বসে থাকেনি, তারা নিজেদের ধন-সম্পদ ইজ্জত, সম্মান বিসর্জন, আত্মীয়তার বন্ধন ত্যাগ, সত্যকে প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। ধৈর্য, অধ্যবসায়, সহনশীলতা, উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়ে ইসলামের নিয়ম-নীতি, আদেশ-নিষেধ অনুসরণ-অনুকরণ, পালন করে। তাদের ব্যক্তি জীবন পারিবারিক সামাজিক, অবস্থার পরিবর্তনের মধ্যে, নিজেদের সংগঠিত করেছিল।

ইসলাম ধর্ম আবির্ভাবের পর, মাত্র তিন দশকে পৃথিবীর মানুষ বিস্ময়কর দৃষ্টি দিয়ে উপলব্দি করেন আরব জাতির পরিবর্তন।

মো. হেলাল আহমেদ, মোবাইল ০১৫৫৮৫৬৩১৬১, facebook: mdhellalahammad

 

| আপডেট: ০৩:৫৬ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার

এমআরআর