Home / জাতীয় / আবার শুরু হচ্ছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই
আবার শুরু হচ্ছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই

আবার শুরু হচ্ছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই

প্রায় দুই বছর পর আবার শুরু হচ্ছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই। আগামী ৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রতি শনিবার দেশের উপজেলা-জেলা-মহানগর পর্যায়ে এই যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলবে।

এই যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য চেয়েছে সরকার। লাল মুক্তিবার্তায় তালিকাভুক্ত কোনো মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে অভিযোগ মিললে তাঁকে যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই নির্দেশিকা এবং কোন উপজেলা-জেলা-মহানগরে কবে যাচাই-বাছাই করা হবে তার তারিখ প্রকাশ করেছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জামুকার ওয়েবসাইটে এই নির্দেশিকা ও তারিখ পাওয়া যাচ্ছে।

জামুকার মহাপরিচালক পুণ্যব্রত চৌধুরী জানান, মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যেটি ভারতীয় তালিকা হিসেবে স্বীকৃত সেটি এবং ১৯৯৬-২০০০ সময়কালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রণীত লাল মুক্তিবার্তার তালিকাকে নির্ভুল ধরে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই শুরু হচ্ছে।

তবে লাল মুক্তিবার্তায়ও ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠায় এই তালিকাভুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তা আমলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য লাল মুক্তিবার্তায় তালিকাভুক্ত কোনো মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে কারো অভিযোগ থাকলে অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা কেন স্বীকৃতি পেতে পারেন না তার কারণ উল্লেখ করে অভিযোগ জামা দিতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে জামুকা।

আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজ নিজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বা জেলা প্রশাসক বরাবর এই অভিযোগ দাখিল করতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকা অনুসারে লাল মুক্তিবার্তায় তালিকাভুক্ত কোনো মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়া গেলে যাচাই-বাছাই শুরুর কমপক্ষে দুই দিন আগে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অভিযোগের অনুলিপি সরবরাহ করা হবে।

অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁর লিখিত জবাব ইউএনও অথবা জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেবেন।

জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাঁরা আবেদন করেছেন, ভারতীয় তালিকা ও লাল মুক্তিবার্তার তালিকায় নাম নেই কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন, সাময়িক সনদ গ্রহণ করেছেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রধানমন্ত্রী প্রতিস্বাক্ষরিত সনদ গ্রহণ করেছেন তাঁদের সবাইকে এই যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হতে হবে।

যাঁদের যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হতে হবে তাঁদের ১৯টি প্রশ্নসংবলিত নির্ধারিত ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে। কোথায়, কোন কমান্ডারের অধীন, কত দিনের ট্রেনিং গ্রহণ করেছেন, কী কী অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, কোন কোন সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এসব তথ্য প্রদান করতে হবে। সাক্ষী হিসেবে ভারতীয় ও লাল মুক্তিবার্তায় তালিকাভুক্ত তিনজন মুক্তিযোদ্ধার নাম উল্লেখ করতে হবে। তথ্য-প্রমাণ ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বাছাই কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।

নির্দেশিকা অনুসারে ভারতীয় ও লাল মুক্তিবার্তায় তালিকাভুক্ত সংশ্লিষ্ট উপজেলার সব মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের সময় উপস্থিত থাকতে পারবেন। তাঁরা যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হওয়া মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে আপত্তি কিংবা মতামত দিতে পারবেন।

এ ছাড়াও যেকোনো নাগরিকও যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে প্রশ্ন করার সুযোগ পাবে। যাঁরা যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হবেন তাঁদের উত্থাপিত প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যাচাই-বাছাই শেষে কমিটি তিন ধরনের তালিকা প্রস্তুত করবে। প্রথমটি হচ্ছে—কমিটির সর্বসম্মত তালিকা, দ্বিতীয়টি—কমিটির দ্বিধাবিভক্ত তালিকা এবং তৃতীয়টি—নামঞ্জুর তালিকা।

কারো সম্পর্কে দ্বিধাবিভক্ত মতামত দেওয়া হলে যিনি পক্ষে মত দেবেন তিনি এক বাক্যে তাঁর যুক্তি দেবেন, যিনি বিপক্ষে মত দেবেন তিনিও এক বাক্যে তাঁর যুক্তি দেবেন। উভয়ই তাতে স্বাক্ষর করবেন। যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হওয়ার দিনই এই তিন ধরনের খসড়া তালিকা প্রস্তুত করে প্রকাশ করতে হবে।

একটি সাত সদস্যের কমিটি এই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করবে। কমিটির প্রধান হবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। তিনি মুক্তিযোদ্ধা না হলে একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে নিয়োগ দেবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন ইউএনও। সদস্য হিসেবে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, জেলা কমান্ডার, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রতিনিধি এবং জামুকার প্রতিনিধি থাকবেন। তবে এই তালিকা গত মঙ্গলবার পর্যন্ত চূড়ন্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই নির্দেশিকায় কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন বাহিনীর হয়ে যাঁরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তাঁদের বাহিনীভিত্তিক আলাদা গেজেট হয়েছে। এঁদেরকে এই যাচাই-বাছাইতে মুখোমুখি হতে হবে কি না তা স্পষ্ট করা হয়নি।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যাচাই-বাছাইয়ের আওতাভুক্তদের মধ্যে যাঁরা জীবিত এবং দেশে অবস্থান করছেন তাঁদের সশরীরে উপস্থিত হতে হবে। এরই মধ্যে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের সম্পর্কে অভিযোগ দেওয়া যাবে কিংবা কিভাবে তা নিষ্পত্তি হবে সে সম্পর্কে নির্দেশনা নেই। তা ছাড়া, যেসব ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ লাল মুক্তিবার্তায় তালিকাভুক্ত হওয়ার সুবাদে এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উপজেলা কিংবা জেলা কমান্ডার নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলে তাঁরা পদাধিকারবলে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য থাকতে পারবেন কি না সে সম্পর্কেও কোনো নির্দেশনা নেই।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও অনেকে লাল মুক্তিবার্তা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর স্ক্যানিং করে তৈরি জাল সনদ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে চাকরি ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও উপজেলা ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের সনদ সংগ্রহ করেছেন।

আবার অনেকে তালিকভুক্তির জন্য আবেদনও করেছেন। এ অবস্থায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করার জন্যই যাচাই-বাছাই শুরু হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সবাই প্রকৃত তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে একটি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরি সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। (কালেরকণ্ঠ)

নিউজ ডেস্ক ।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ০৮ : ৩০ এএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ শুক্রবার
ডিএইচ

Leave a Reply