Home / সম্পাদকীয় / আধুনিক বর্বরতার চরম নিদর্শন শিশু ধর্ষণ

আধুনিক বর্বরতার চরম নিদর্শন শিশু ধর্ষণ

‎Thursday, ‎April ‎02, ‎2015  03:16:39 PM

সম্প্রতি দেশে শিশু ধর্ষণের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। পাঁচ বছর বয়সী শিশু থেকে বিভিন্ন বয়সীরা এ বর্বরতার শিকার হচ্ছে। এই পাশবিকতার শিকার প্রতিবন্ধী শিশুরাও। আরও পৈশাচিক ব্যাপার হচ্ছে- ধর্ষিত শিশুদের অনেককে ধর্ষকরা ধর্ষণের পর হত্যা করছে।

গত মঙ্গলবার বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মৌভোগ ইউনিয়নের গাজীপাড়ায় এক শিশুকে ধর্ষণ করে এক যুবক। স্থানীয়রা তাকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে।

বাংলাদেশ শিশু ফোরামের তথ্যমতে, ২০১২ সালে সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয় মোট ৯০টি শিশু। ২০১৩-১৪ সালে যে সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। গত পাঁচ বছরে সারাদেশে যত ধর্ষণ হয়েছে তার মধ্যে ৬০ শতাংশ-ই শিশু। ধর্ষণপরবর্তী হত্যার ঘটনাও সাম্প্রতিককালে বেড়েছে। ঘরে-বাইরে নিকটজন থেকে অপরিচিতদের কুপ্রবৃত্তির শিকার হচ্ছে কোমলমতি নিষ্পাপ শিশুরা। প্রকৃতিগতভাবে মানুষের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ থাকবে এটা হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু শিশু নারী-পুরুষ পরিচয়ে প্রকট হওয়ার আগেই সে যদি বিকৃত যৌনাচারের শিকার হয় তাহলে তাকে বিকৃত, অসুস্থ মানসিকতা ছাড়া আর কিছুই বলা যাবে না।

এ পরিস্থিতির জন্য প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অনেকগুলো বিষয় দায়ী। মানুষের নৈতিক অবক্ষয় ও মানবিকতার বিপর্যয় এর মূল কারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। এ পাপাচার মানুষের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাবের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে। বিশ্বায়নের এই যুগে আকাশ সংস্কৃতির দৌরাত্ম্য ও প্রযুক্তির বাহনে সহজলভ্য বিকৃত যৌনাচারের দৃশ্য বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বিকৃত প্রভাব ফেলছে, অসম কুপ্রবৃত্তিকে উস্কে দিচ্ছে। দাম্পত্য অসঙ্গতিও বড় কারণ। এ ছাড়া সমাজে এ ধরনের পৈশাচিক অপকর্মের উত্তরোত্তর বৃদ্ধির অন্যতম কারণ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করা।

উদ্বেগজনক এ পরিস্থিতি শিশুর অভিভাবকমণ্ডলীকে দিন দিন আতঙ্কগ্রস্ত করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের পথ জটিল হবে। শিশুর মানস গঠনে সাহায্যকারী নানামুখী সম্পর্কের ভেতরেও অবিশ্বাস ঘনীভূত হবে। সমাজের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে।

এটা স্পষ্ট যে, বরাবর-ই এ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের শতকরা ৯০ ভাগ-ই শাস্তি পায় না। কখনো আইনের চোখে ধোঁয়া দিয়ে বেঁচে যায়। কখনো বাদীপক্ষের সঙ্গে আপস করে মীমাংসা করে নেয়। এ ছাড়া ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ার রেহাই পেয়ে যায়। গুরু পাপে লঘু দণ্ড পর্যন্ত তাদের হয় না। উল্টো ন্যায়বিচারের বদলে আক্রান্ত শিশু ও তার পরিবার হয়রানির শিকার হয়। এ পরিস্থিতিকে রুখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। আইনের সঠিক প্রয়োগের কোন বিকল্প নেই। সমাজে শিশু ধর্ষণ ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য সরকারকে সর্বোমুখী ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে।

এনজিওগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে। নারী, শিশু ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে আরও সক্রিয়ভাবে এর বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে, ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকার আদায়ে সব সময় তাদের পাশে থাকতে হবে। সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে ধর্ষককে সামাজিকভাবে বয়কট করাসহ কঠোরহস্তে দমন করতে হবে। অপসংস্কৃতির আগ্রাসন রুখতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। যার যার জায়গা থেকে নিজের প্রবৃত্তির মুখেও লাগাম দিতে হবে। সর্বোপরি সবাইকে আইনের অনুশাসনের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে নিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তবেই এ অন্যায় অনেকাংশে কমবে বলে আশা করা যায়।