Home / বিশেষ সংবাদ / আইএসের সঙ্গে যেভাবে কেটেছে অপহৃত দুই বাংলাদেশীর
আইএসের সঙ্গে যেভাবে কেটেছে অপহৃত দুই বাংলাদেশীর

আইএসের সঙ্গে যেভাবে কেটেছে অপহৃত দুই বাংলাদেশীর

২০১৫ এপ্রিল ০৭

চাঁদপুর টাইমস ডট কম :

লিবিয়ার আল ঘানি তেলক্ষেত্র থেকে অস্ত্রধারী আইএস’র হাতে গত ৬ই মার্চ অপহৃত হন দুই বাংলাদেশী। তাদের একজন হলেন, নোয়াখালীর আনোয়ার হোসেন আর অপর জন জামালপুরের হেলাল উদ্দিন। দীর্ঘ ১৮ দিন আটক থাকার পর আইএসের হাত থেকে মুক্তিপান তারা। মুক্তি পাওয়ার ১২ দিন পর গতকাল সোমবার নিজেদের পরিবারের কাছে ফিরেছেন এই দুই বাংলাদেশী।
গতকাল বিকেলে আমিরাত এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তারা।
আইএসের হাতে বন্দী ১৮ দিন

বন্ধী অবস্থায় দীর্ঘ ১৮ দিন তাদের সঙ্গে কারও যোগাযোগ ছিল না। অপহরণকারীরা সব সময়ই তাদের (আনোয়ার-হেলাল) বলতো, তোরা মুসলিম, তোদের কোন ক্ষতি হবে না।এতে আশ্বস্ত করতে পারেনি হেলাল ও আনোয়ারকে। তাদের ভয় ছিল- তারা যেহেতু লিবিয়ান সরকারের অধীনে কাজ করে তাই সরকার যদি ওই আইএসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অপহরণকারীদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতাও লক্ষ্য করেছেন তারা। এজন্য বারবার স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে তাদের।

আইএসের বন্ধীদশা থেকে মুক্তি পাওয়া আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ৬ই মার্চ স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে আমাদের বাংলাদেশী ২ জন, ৪ ফিলিপাইন, ২ জন অস্ট্রিয়া ও ১ জন ঘানার নাগরিককে ধরে নিয়ে যায় অস্ত্রধারীরা। ওই দিন আমাদের সাহারা মরুভূমিতে নিয়ে যায় তারা। এ সময় তারা বলেছিল তোরা মুসলমান হলে ছেড়ে দেবো। ওই দিন খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়। জনমানবহীন মরুভূমির বালুর ওপর কম্বল বিছিয়ে থাকতে দেয়া হয় আমাদের দুই বাংলাদেশীকে। আটক অন্য বিদেশীদের সার্বক্ষণিক পাহারায় তাদের গাড়িতে আটকে রাখা হয়। পরের দিন ৭ই মার্চ সকালে মরভূমির আরেক জায়গায় নিয়ে
যাওয়া হয়। সারাদিন মরভূমির বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ানো হয়। ওই দিন শুধুমাত্র জুস খেতে দেয়া হয় তাদের।

আনোয়ার জানান, সন্ধ্যার দিকে তাদেরকে একটি স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয় (তাদের ধারণা)। সেখানে দুটি ভবন ছিল। এর একটির এক কক্ষে তাদের ২ জনকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। ওই কক্ষের দরজা জানালা সব সময় বন্ধ থাকতো। এভাবে ৪-৫ দিন অন্ধকারেই কাটে তাদের। এই সময়ে তাদের সামান্য কিছু খাবার দেয়া হতো।

আনোয়ার বলেন, তারা যা খেতো আমাদেরকেও তাই দিতো। তবে ওদের দেয়া খাবার আমরা খেতে পারতাম না। ফলে না খেয়েই থাকতে হতো। ওই সময়টা সবচেয়ে বেশি কষ্টকর ছিলো তাদের জন্য। শুধুমাত্র অজু এবং প্রাকৃতিক কাজ সারতে দরজার তালা খুলে দেয়া হতো। ৪-৫ দিন পর তাদেরকে আবারও বাইরে বের করা হয়। আবারও মরুভূমির বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ঘুরানো হয়। এরপর থেকে ২৩শে মার্চ পর্যন্ত তারা কখনও এক জায়গাই স্থির হননি। সব সময় এদিক-ওদিক নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একেক দিন একেক জায়গায় রাত কেটেছে তাদের।

আনোয়ার বলেন, ওই সময় মনে হয়েছে আটককারী জঙ্গিরা বিপদে আছে। এজন্য কোন এক জায়গায় স্থির হতে পারছে না তারা। আর মরুভূমিতে যেমন ছিল খাবারের সমস্যা, তেমন ছিল পানির সংকট। পানির তেষ্টায় গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেত।

আনোয়ার আরও বলেন, ২৩ মার্চ ঘানার একজনসহ তাদের দুজনকে সিরত শহরের একটা স্কুলে রেখে আসে অপহরণকারীরা।পরে অসুস্থ অবস্থায় কয়েকজন ব্যক্তি তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এদিকে অপহৃত বাকিদের আগেই আলাদা করে ফেলেছিল জঙ্গিরা। তাই তাদের ভাগ্যে কি জুটেছে তা জানতে পারেননি আলোযার-হেলাল।

আনোয়ার হোসেন বলেন, আইএস জঙ্গিরা আসলে কি করতো তা তাদের কাছে সব সময় অস্পষ্টই রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৬ই মার্চ অপহরণ হওয়ার পর থেকে ১৮ দিন নিখোঁজ ছিল তারা। পরে ২৩শে মার্চ অজ্ঞাতস্থান থেকে পরিবারের কাছে ফোন করেন হেলাল উদ্দিন। ত্রিপোলিস্থ দূতাবাস ওই দিনই জানায়, তারা সিরতের একটি হাসপাতালে আছে। গত বৃস্পতিবার তারা যে কোম্পানিতে কাজ করতো সেই কোম্পানির তত্ত্বাবধানে ত্রিপোলিতে পৌঁছান আনোয়ার, হেলাল ও ঘানার এক মুসলিম নাগরিক। এর পর সেখান থেকে দেশে ফিরে আসেন দুই সৌভাগ্যবান বাংলাদেশী।

চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫