Home / ইসলাম / অপবিত্র বস্তসমূহ পবিত্র করার পদ্ধতি
অপবিত্র বস্তসমূহ পবিত্র করার পদ্ধতি

অপবিত্র বস্তসমূহ পবিত্র করার পদ্ধতি

নাপাক বস্তু বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। সেগুলো পাক হওয়ার পদ্ধতিও বিভিন্ন। যেমন কিছু জিনিস স্থির থাকে। কিছু হালকা ও বয়ে যায়। কিছু আর্দ্রতায় শুকিয়ে যায়। কিছু শুকায় না অথবা অল্প মাত্রায় শুকায়। আর কিছু ময়লা নিঃশেষ হয়ে যায়। নিম্নে এগুলোর বিধান নিয়ে আলোচনা করা হলো।

মাটি প্রভৃতি পাক করার নিয়ম

► মাটি নাপাক হলে—অল্প কিংবা তরল মলমূত্র দ্বারা হোক অথবা ঘন গাঢ় মলমূত্র দ্বারা, উভয় অবস্থায়ই শুকিয়ে গেলে তা পবিত্র হয়ে যাবে। কিন্তু এমন মাটিতে তায়াম্মুম করা যাবে না।

► নাপাক মাটি শুকানোর আগে তাতে ভালো করে পানি ঢেলে দিতে হবে, যেন পানি বয়ে যায়। অথবা পানি ঢেলে দিয়ে তা কোনো কাপড় বা অন্য কিছু দিয়ে চুষিয়ে নিতে হবে যেন মলমূত্রের কোনো চিহ্ন বা গন্ধ না থাকে। এতেও মাটি পবিত্র হয়ে যাবে। এভাবে তিনবার মাটি পবিত্র করতে হবে।

► মাটি, ঢিল, বালু, পাথর প্রভৃতি শুকিয়ে গেলে পবিত্র হয়ে যায়। যে পাথর মসৃণ নয় এবং তরল বস্তু চুষে নেয়, তা শুকিয়ে গেলে পবিত্র হয়ে যায়।

► মাটি থেকে উদ্গত ঘাস, শস্য, গাছের চারা নাপাক হওয়ার পর শুকিয়ে গেলে পাক হয়ে যায়।

► মাটিতে যেসব জিনিস সুদৃঢ় হয়ে থাকে, যেমন—দেয়াল, স্তম্ভ, বেড়া, চৌকাঠ প্রভৃতি—এসব শুকিয়ে গেলে পাক হয়ে যায়।

► নাপাক মাটি ওলটপালট করে দিলেও তা পাক হয়ে যায়।

► চুলা যদি মল দ্বারা নাপাক হয়ে যায়, তাহলে আগুন জ্বালিয়ে ময়লার চিহ্ন মিটিয়ে দিলে পাক হয়ে যায়।

► নাপাক জমিনের ওপর মাটি ঢেলে দিয়ে মল এভাবে ঢেকে দিতে হবে যেন মলের গন্ধ না আসে, তাহলে তা পাক হয়ে যায়। অবশ্য তাতে তায়াম্মুম করা যাবে না।

► নাপাক মাটি থেকে তৈরি পাত্র যতক্ষণ কাঁচা থাকে, ততক্ষণ নাপাক। তা শুকিয়ে পাকা হয়ে গেলে পবিত্র হয়ে যায়।

► গোবর মাখা মাটি নাপাক। তার ওপর কোনো কিছু বিছিয়ে না নিলে নামাজ পড়া যাবে না।

নাপাক শোষণ করতে পারে না এমন বস্তু পবিত্র করার নিয়ম

► ধাতু নির্মিত জিনিস, যেমন—তলোয়ার, ছুরি, চাকু, আয়না, সোনা, চাঁদি ও অন্যান্য ধাতুর গয়না অথবা তামা, পিতল, অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের বাসন-বাটি প্রভৃতি নাপাক হয়ে গেলে মাটি দিয়ে ঘষে মেজে নিলে অথবা ভিজা কাপড় দিয়ে ভালো করে মুছে ফেললে পাক হয়ে যাবে। এমনভাবে ঘষে মেজে নিতে হবে বা মুছে ফেলতে হবে যেন নাপাকির কোনো চিহ্ন বা গন্ধ না থাকে। অবশ্য জিনিসগুলো যেন নকশি করা না হয়।

► চিনা মাটি, কাচ অথবা মসৃণ পাথরের থালা, বাটি অথবা পুরনো বা ব্যবহৃত থালা, বাটি, পাতিল—যা নাপাকি চুষে নিতে পারে না, মাটি দিয়ে ঘষে মেজে নিলে অথবা ভিজা কাপড় দিয়ে মুছে ফেললে পাক হয়। এমনভাবে তা করতে হবে যেন নাপাকির কোনো চিহ্ন না থাকে। অবশ্য যদি তা নকশি করা না হয়।

► ধাতু নির্মিত জিনিস অথবা চিনা মাটির জিনিস তিনবার পানি দিয়ে ধুলে পাক হয়।

► এসব জিনিসপত্র যদি নকশি করা হয় যেমন—অলংকার অথবা নকশি করা থালাবাটি, তাহলে তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা ছাড়া শুধু ঘষলে অথবা ভিজা কাপড় দিয়ে মুছে ফেললে পাক হবে না।

► ধাতু নির্মিত থালা-বাটি অথবা অন্য জিনিসপত্র যেমন—চাকু, ছুরি, চিমটা প্রভৃতি আগুনে দিলে পাক হয়।

► মাটি ও পাথরের থালা-বাটি আগুনে দিলে পাক হয়ে যায়।

► চাটাই, চৌকি, টুল-বেঞ্চ অথবা এ ধরনের কোনো বস্তুর ওপর ঘন বা তরল ময়লা লেগে গেলে শুধু ভিজা কাপড় দিয়ে মুছে দিলে পাক হবে না। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

যেসব বস্তু নাপাকি চুষে নেয়, তা পবিত্র করার নিয়ম

► মোজা, জুতা অথবা চামড়ার তৈরি অন্যান্য জিনিস যদি নাপাক হয়ে যায় আর নাপাকি যদি ঘন হয় যেমন—গোবর, পায়খানা, রক্ত, বীর্য প্রভৃতি; তাহলে নাপাকি ঘষে তুলে ফেললে পাক হয়ে যায়। আর নাপাকি যদি তরল হয় এবং শুকিয়ে গেলে দেখা না যায়, তাহলে না ধুলে পাক হবে না। তা ধুয়ে ফেলার নিময় হলো, প্রত্যেকবার ধৌত করার পর এতটা বিলম্ব করতে হবে যেন পানি টপকানো বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে তিনবার ধৌত করতে হবে।

► মাটির নতুন বরতন (থালা, বাটি, বদনা) অথবা পাথরের বরতন, যা পানি চুষে নেয় অথবা কাঠের বরতন, যাতে নাপাকি মিশে যায়—এ ধরনের থালা-বাটি অথবা ব্যবহারের জিনিসপত্র যদি নাপাক হয়ে যায়, তাহলে তা পাক করার নিয়ম হলো, এগুলো তিনবার ধুতে হবে এবং প্রতিবার এতখানি শুকনো হতে হবে যেন পানি টপকানো থেমে যায়। কিন্তু প্রবাহিত পানিতে ধুতে গেলে এ শর্ত পালনের দরকার নেই। ভালো করে ধুয়ে ফেলার পর পানি সব নিংড়ে গেলেই যথেষ্ট হবে।

► খাদ্যশস্য নাপাক হলে তিনবার ধুতে হবে এবং প্রত্যেকবার শুকাতে হবে, যদি নাপাকি গাঢ় হয় এবং এক স্থানে জমা হয়ে থাকে, তাহলে তা সরিয়ে ফেললেই হবে। যেমন—শস্যের স্তূপের ওপর বিড়াল পায়খানা করেছে এবং তা শুকিয়ে জমাট হয়ে আছে, তা সরিয়ে ফেললেই চলবে। অন্য শস্যের ওপর যদি তার কোনো লেশ আছে বলে সন্দেহ হয়, তাহলে সেগুলো তিনবার ধুয়ে ফেলতে হবে।

► কাপড়ে নাপাকি লাগলে তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং প্রতিবার ভালো করে চাপ দিয়ে নিংড়াতে হবে। ভালো করে নিংড়িয়ে ধৌত করার পরও যদি দুর্গন্ধ থেকে যায় কিংবা দাগ থাকে, তাতে কোনো দোষ নেই, পাক হয়ে যাবে।

► কাপড়ে যদি বীর্য লাগে এবং শুকিয়ে যায়, তাহলে আঁচড়ে তুলে ফেললে অথবা রগড়ে মর্দন করে তুলে ফেললে পাক হয়ে যায়। আর যদি বীর্য শুকনো না হয়, তাহলে তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে কাপড় পাক হয়ে যায়। প্রস্রাব করে পানি নেওয়ার পর যদি বীর্য বের হয়, তাহলে আবার ধুয়ে ফেলতে হবে।

► পানির মতো যেসব জিনিস তরল এবং যদি তৈলাক্ত না হয়, তাহলে তা থেকে কাপড়ে লাগা নাপাকি ধৌত করলে পাক হয়ে যায়।

► প্রবাহিত পানিতে কাপড় ধোয়ার সময় নিংড়ানোর দরকার নেই। কাপড়ের এক দিক থেকে অন্য দিকে পানি চলে গেলেই যথেষ্ট।

► কাপড় যদি এমন হয় যে চাপ দিয়ে নিংড়াতে গেলে তা ফেটে যাবে, তাহলে তিনবার ধুয়ে দিতে হবে। তারপর হাত দিয়ে অথবা অন্য কিছু দিয়ে এমনভাবে চাপ দিতে হবে যেন পানি বেরিয়ে যায় এবং কাপড়ও না ফাটে।

► নাপাক তেল, ঘি বা অন্য কোনো তেল যদি কাপড়ে লাগে, তাহলে তিনবার ধুয়ে দিলে কাপড় পাক হয়, যদিও তেলের তৈলাক্ততা কাপড়ে রয়ে যায়। তেলের সঙ্গে মিশ্রিত নাপাকি তিনবার ধৌত করলে পাক হয়ে যায়।

► যদি কোনো মৃতের চর্বি দ্বারা কাপড় নাপাক হয়, তাহলে তিনবার ধৌত করলেই যথেষ্ট হবে না, তৈলাক্ততা দূর করে ফেলতে হবে।

► চাটাই, বড় শতরঞ্জি, কার্পেট বা এ ধরনের কোনো বিছানাপত্র, যা নিংড়ানো যায় না, তার ওপর যদি নাপাকি লাগে, তাহলে তা পাক করার নিয়ম হলো, তার ওপর তিনবার পানি ঢালতে হবে। প্রতিবার পানি ঢালার পর শুকাতে হবে। শুকানোর অর্থ হলো, তার ওপর কিছু রাখলে তা ভিজবে না।

► কোনো খালি শূন্যগর্ভ পাত্র যদি নাপাক হয় এবং তা নাপাকি চুষে নিয়ে থাকে, তাহলে তা পাক করার পদ্ধতি হলো, তা পানি দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। নাপাকির চিহ্ন পানির মধ্যে দেখা গেলে পানি ফেলে দিয়ে আবার ভরতে হবে। যতক্ষণ পানিতে নাপাকির লেশ পাওয়া যায়, ততক্ষণ এভাবে পানি ফেলতে হবে এবং নতুন পানি ভরতে হবে। এভাবে যখন নাপাকির রং ও দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে, তখন পাত্র পাক হয়ে যাবে।

► নাপাক রঙে রং করা কাপড় পাক করার জন্য এতবার ধুতে হবে যেন পরিষ্কার পানি আসতে থাকে। তারপর রং থাক বা না থাক কাপড় পাক হয়ে যাবে।

তরল ও তৈলাক্ত জিনিস পবিত্র করার নিয়ম

► নাপাক চর্বি অথবা তেল থেকে সাবান তৈরি করা হলে সাবান পাক হবে।

► তেল অথবা ঘি যদি নাপাক হয়, তাহলে তেল বা ঘির মধ্যে সমপরিমাণ পানি ঢেলে দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। পানি শেষ হওয়ার পর আবার ওই পরিমাণ পানি দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। এভাবে তিনবার করলে তা পাক হবে। অথবা তেল বা ঘিয়ের মধ্যে পানি দিতে হবে। পানির ওপর তেল বা ঘি এসে যাবে। তখন তা ওপর থেকে তুলে নিয়ে আবার পানি ঢালতে হবে। এভাবে তিনবার করলে তা পাক হয়ে যাবে।

► মধু, সিরাপ বা শরবত যদি নাপাক হয়, তাহলে তাতে পানি দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। পানি সরে গেলে আবার পানি দিতে হবে। এভাবে তিনবার করলে তা পাক হবে।

► যদি নাপাক তেল মাথায় বা শরীরে মালিশ করা হয়, তাহলে শুধু তিনবার ধুলেই মাথা বা শরীর পাক হবে। কোনো কিছু দিয়ে তৈলাক্ততা দূর করার প্রয়োজন নেই।

জমাট বস্তু পবিত্র করার নিয়ম

► জমাট হওয়া ঘি, চর্বি অথবা মধু যদি নাপাক হয়, তাহলে নাপাক অংশটুকু বাদ দিলেই পাক হয়ে যাবে।

► সানা আটা অথবা শুকনো আটা নাপাক হয়ে গেলে নাপাক অংশ তুলে ফেললেই বাকিটা পাক হয়ে যাবে। যেমন সানা আটার ওপর কুকুর মুখ দিয়েছে, তাহলে মুখ লাগা অংশটুকু ফেলে দিলেই পাক হয়ে যাবে অথবা শুকনো আটায় যদি মুখ দেয়, তাহলে তার মুখের লালা যতটুকুতে লেগেছে বলে মনে হবে, ততখানি আলাদা করে দিলে বাকিটুকু পাক হয়ে যাবে।

► সাবানে যদি কোনো নাপাকি লাগে, তাহলে নাপাকি লাগা অংশ কেটে ফেললেই বাকি অংশ পাক থাকবে।

► শরীরে নাপাক তেল অথবা অন্য কোনো তৈলাক্ত কিছু মালিশ করার পর শুধু তিনবার ধুয়ে ফেললেই শরীর পাক হবে। তৈলাক্ততা দূর করার প্রয়োজন নেই। (আসান ফিকাহ অবলম্বনে)

লেখক : শিক্ষক, মাদ্রাসাতুল মদিনা, নবাবপুর, ঢাকা

Leave a Reply