Home / ফিচার / অকালপক্ক কিশোরীরা কোন পথে?
অকালপক্ক কিশোরীরা কোন পথে?

অকালপক্ক কিশোরীরা কোন পথে?

বর্তমান সময়ের কিশোর-কিশোরিদের মনোজগৎ নিয়ে ভাবতে ভাবতে অস্থির। বাধ্য হয়ে ভাবতে হচ্ছে।

আর যত ভাবছি তাদের জন্য, বিশেষ করে কিশোরিদের জন্য আমার খুব ভয় হচ্ছে, দুঃখ হচ্ছে। শহুরে কিশোরিরা এবং এমনকি গ্রামীণ যারা তারাও বড়দের নাটক সিরিয়াল দেখতে দেখতে ‘প্রেম করা’র এক দুর্দমণীয় বাসনা নিয়ে বড় হচ্ছে। তাদের বিএফ চাই, তাদের প্রেম করা চাই। তের-চৌদ্দ না হতেই এদের ফেসবুক চাই।

নিজের ছবি আপলোড দেয়া চাই। ছবিতে ‘হট’ ‘সেক্সি’ লিখা মন্তব্য এদের কাছে কমপ্লিমেন্ট। এরা খুশিতে গদগদ হয়ে আরো আরো নানা ঢং এর ছবি দিবে, লাইক গুনবে, কমেন্ট পড়ে রাতের ঘুম হারাম করবে। ইনবক্সে জোয়ার আসবে। কেয়ার নিবে সবাই। কিছু হেডম ছাড়া পুরুষ তো আছেই এমন অল্পবয়সী কিশোরিদের পটানোর জন্য। খোঁজ খবর নিবে, বন্ধু হতে চাইবে। তারপর…….

এদের মুখে মিষ্টি মন ভুলানো বুলি থাকবে, গায়ে চটকদার হালফ্যাশনের পোশাক আর পকেটে কিছু টাকা। এরপর বাকিটা অনুমেয়। কিশোরি প্রেমিক পেল, যুবক পেল কিশোরি প্রেমিকা। দুইজনই গর্বিত।

একদিন কিশোরি স্কুল পালিয়ে রিকশায় চড়বে, সে মনে মনে রাজিই আছে। যুবক ‘ভয় নাই’ বলবে। নিতান্ত রাজি না হলে যুবকের অব্যর্থ টোপ আসবে ‘আমাকে বিশ্বাস করতে পারছো না? এই তোমার ভালবাসা? তুমি না আমার হবু বউ?’ কিশোরি লজ্জায় আর আহ্লাদে গলে যাবে প্রায়। তারপর তারা হাত ধরবে হবে আরও রঙ্গলীলা। দূরে থাকলে যেন মন ভরে কিশোরিকে দেখতে পারে তার জন্য যুবক ছবি তুলতে চাইবে। তারপর তারা অচিরেই সবকিছু করবে!

কিশোরির কাছে সবই নতুন, সে বারেবারে শিহরিত হবে, আনন্দে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকবে।

এভাবে দুইতিন মাস থেকে বছর দুয়েক যাবে সর্বোচ্চ। হয় ঘটনা জানাজানি হওয়াতে কিশোরি সরে আসবে, অথবা বিভিন্ন কারণে কিশোরি বুঝতে পারবে সে এমন প্রেম চায়নি, এমন প্রেমিক চায়নি, অথবা ফালতু যুবক নিজে সরে যাবে।

কিশোরি হয়তো আবার প্রেম আর বিএফ এর জন্য হাপিত্যেশ করছে, আবার প্রেমে জড়াচ্ছে। জীবন গঠনে মনযোগ দিচ্ছে। এইবার সে একটু সতর্ক। বুঝেছে ভুল করেছিলো সে। প্রেম কী বোঝার আগেই ‘প্রেম করেছে’!

তবে, শান্তি চাইলেই সব সময় তো হবে না। কিশোরি নিজে ব্রেক আপ করলে তার নামে যা তা বলা হবে। ফালতু মেয়ে সে। রাস্তাঘাটে টিটকারি, অপমান, অসম্মান। তাও না হয় সহ্য করা হল। কিন্তু যদি তার আগের প্রেমের প্রমাণ, স্মৃতি বিভিন্ন ছবি ভিডিও আর কন্টাক্ট নাম্বার পাওয়া যায় ডিজিটাল (…)বাজারে!

‘কচি (….), মজা লুটতে একে ফোন করুন।’

এবার কাঁদো। ভাবো। ভুল ছিল না? ভুল তো ছিলই। কেউ না কেউ বলেও ছিল এসব হতে পারে। তুমি শোনো নি। একশ আটটা ভুল না করলে তুমি কিশোরি থেকে প্রজ্ঞাবতী যুবতী হবে কিভাবে?

এদিকে না বুঝে আরেক ফালতু ধরনের কিশোরি বেড়ে উঠছে যাদের অনেক অনেক বিএফ চাই। যতজন তাদের প্রশংসা করবে তত তাদের গর্ব। যতজন কল/মেসেজ করবে তত তাদের দাম। নিজেদের এতো সস্তা চরিত্রের করে ফেলছে তারা! শুধুমাত্র না বুঝে আর বেশি বুঝে।

তারা অকালে পেকেছে, মরতে যাচ্ছে। তাদের বাঁচাবে কে? চারিদিকে হায়েনার দল।

লেখক : শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়।