Home / ফিচার / সজ্ঞা নয় জঙ্গি শব্দকে নিশ্চিহ্ন করুন
Ismail khondokar
লেখক- খন্দকার মোহাম্মদ ইসমাইল

সজ্ঞা নয় জঙ্গি শব্দকে নিশ্চিহ্ন করুন

জঙ্গি ফার্সি না আরবি এটা বিশ্লেষণ নয়, জঙ্গি শব্দকে নিশ্চিহ্ন করুন। সাম্প্রতিক বিশ্বে জঙ্গিবাদ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

কথিত মুসলিম নামধারী জঙ্গিবাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে ইসরাইল/পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রবেশকালে বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে মুসলিম যাত্রীদের সাথে রুঢ় আচরণ করে যা আমাদের টিএফআই সেলেও করে না।

মুসলমান নারী/পুরুষকে তল্লাশীকালে শাালীনতার ন্যূনতম মাত্রাও থাকে না।

আমাদেরকে এ পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে গেছে কারা? এ প্রসঙ্গে আসার পূর্বে আমাদের সমাজের কিছু চিত্র তুলে ধরা জরুরি মনে করি।

সমাজ বিজ্ঞানে পড়েছি, ‘মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে একে অপরের সাথে মিলে মিশে থাকবে। মানুষ একা থাকতে পারে না।’ কিন্তু এখন দেখি ভিন্নতা। পাশাপাশি থাকার পরও একে অপরকে চিনি না। কোনো ব্যাক্তি অসুস্থ কিংবা রাস্তায় নির্মম অন্যায়ের শিকার হলেও আমরা স্বাভাবিকভাবে চলে যাচ্ছি। এটাও যে নৈতিক দায়িত্ব না করলে দায়বদ্ধতা আছে তা বুঝার চেষ্টা করি না। আগামি দিন এ পরিস্থিতির শিকার আমিও হতে পারি, তখন আমার জন্যও কেউ এগিয়ে আসবে না।

একটা শিশু পরিপূর্ণতা পেতে যৌথ পরিবারের সান্নিধ্য খুবই জরুরি। এখন বিয়ের পর অনেক মেয়েরা স্বামীকে নিয়ে একা থাকার চিন্তা করে। অথচ একা থাকলে মানুষ তার চাঞ্চল্যতা, মেধা, সামাজিক সুফল, শিক্ষাসহ অনেক বিষয় থেকে বঞ্চিত হয়।

আমরা যে যেখানে আছি শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি। যদি আমরা চিন্তা করি আমার নিকট আসা সাহায্য প্রার্থী ব্যক্তিকে আমার অবস্থানে এবং সাহায্য প্রার্থীর জায়গায় নিজেকে দাঁড় করাই, তাহলে কোনো মানুষ আর ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবে না।

যে মেয়েটি স্বামীকে নিয়ে অলাদা বসবাস করে, বিপরীতে তার ভাইয়ের স্ত্রী একই কাজ করলে তার পরিবারের যেমন কষ্ট পায় ঠিক একই কষ্ট তার স্বামীর পরিবারেও পায়। এটা বুঝতে পারলে আর কাউকে কেউ জ্ঞান দেয়ার প্রয়োজন হবে না।

ব্রেইন ওয়াশ হওয়া যুবক জঙ্গিদের চিন্তা একটাই কতো দ্রুত ‘শহীদ’ হয়ে স্বপ্নময় ‘বেহেস্তে’ যাবে। অতীতে কম শিক্ষিত গরিব যুবকরা অর্থের লোভে জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হতো। কিন্তু এখন খ্যাতি সম্পন্ন কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররাও জঙ্গি দলের সদস্য।

এখন বুঝুন আমাদের শিক্ষা কারিকুলাম কি পর্যায়ে আছে? আমাদের পাঠ্যসূচিতে ধর্ম, মানবিক আচরণ, মানবসেবায় আতœনিয়োগ, সমাজের দায়িত্ব, দেশপ্রেমসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি কী অন্তর্ভুক্ত আছে?

ইসলাম কি? প্রাথমিকভাবে একে জানতে হবে। মানব সেবার চাইতে বড় আর কিছুই নয়। একজন কিশোর নিজেকে কিভাবে গড়ে তোলে মানবসেবায় উৎসর্গ করে চিরঞ্জীব হবে ও আখেরাতে শান্তিময় স্থানে অবস্থান করবে।

পাঠ্যসূচিতে এসব বিষয় বিস্তারিত অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ।

আমাদেরকে এ পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে গেছে কারা কি স্বার্থে?

আমাদেরকে এ পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে যারা গেছে, তারা হলো লেবাসধারী কথিত মুসলমান। যারা নিজেদেরকে ইসলামের ধারক ও বাহক মনে করে। ইসরাইল/পশ্চিমা দেশের নিযুক্ত গোয়েন্দারা বিশাল অংকের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে জঙ্গি তৈরি করতে এদের সাহায্য করে।

অর্থের লোভে ও নিজেকে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে জন্ম থেকে ইসলামের দুশমন ইহুদিদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গরীব মুসলিম যুবকদের অর্থ দিয়ে দলভুক্ত করে। প্রথমে ইসলাম সম্পর্কে সুন্দর সাবলীল কথা বলে একপর্যায়ে ‘ইসলাম প্রতিষ্ঠার’ নামে ধর্মযুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা করে।

আলোচনাকালে কোরআন হাদিসে ধর্ম যুদ্ধ বিষয়ে বর্ণিত মতবাদের সাথে নিজেদের মতবাদ মিশ্রিত করে বয়ান দেয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যখ্যা প্রদান করে। ‘আত্মঘাতি হামলার সময় ভিন্ন ধর্মালম্বীগণ ইসলামের শত্রু’ আবার মুসলমানের উপর হামলার সময় ফতুয়া দেয় যে, ‘এরা হযরত মোহাম্মদ (সঃ) তরিকাভুক্ত নয়, আত্মঘাতি হামলার মাধ্যমে এদেরকে মারতে পারলেই শহীদের মার্যাদা লাভসহ বেহেস্ত অবধারিত।’ দক্ষ প্রশিক্ষক দ্বারা এমনভাবে বয়ান দিয়ে মস্তিকে প্রবেশ করায়, তখন ভাবার বা বুঝার সক্ষমতা থাকে না।

সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে যারা ইসলাম ধর্মকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত, তারা কি জানেন? ইসলাম ধর্মের মূল বাণী হলো সকল ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান করবে। ভিন্ন ধর্মের লোকদের প্রতি অতি উত্তম আচরণ করার কথা বলা আছে।

মানুষ হত্যা, ভয় দেখিয়ে ধর্ম প্রতিষ্ঠার কথা কোরআন-হাদীসের কোথাও উল্লেখ নাই। প্রথমে মানুষ, তারপর ধর্ম। মানুষ বলতে সকল মানব জতিকেই বুঝানো হয়েছে। কোনো ধর্মের মানুষকে নির্দিষ্ট করে নহে।

আপনি আল্লাহর সকল ইবাদত যথাযথভাবে পালন করেন। রোজার দিনে নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখলেন ভিন্ন ধর্মের একজন চা পান করছে। তাকে আপনি হত্যা করবেন? এটা বুঝার জন্য হাদীস কোরআন পড়তে হয় না। রাষ্ট্র এবং ইসলামের বিধান হল একজন ব্যক্তিকে কখন হত্যা করা যাবে? কোন ব্যাক্তি কর্তৃক তাৎক্ষণিক এমন আক্রমন যাতে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু অনিবার্য।

শুধুমাত্র এ পরিস্থিেিত আক্রমনকারীকে প্রতিহত করতে গিয়ে মৃত্যু ঘটানো যায়। তবে মৃত্যু ব্যতিত অন্য উপায়ে প্রতিহত করতে পারলে সেটাই উত্তম।

জঙ্গি নেতারা অপব্যাখ্যা দিয়ে আত্মঘাতি হামলার মাধ্যমে মানুষ খুন করাকে ‘ধর্মযুদ্ধ’ বলে শিক্ষা দেয়। ধর্মযুদ্ধ বলতে ইসলাম ধর্ম প্রচারকালে প্রচারকারীরা এমনভাবে আক্রান্ত হন যা মোকাবিলা না করলে মৃত্যু নিশ্চিত, আত্মরক্ষার জন্য মোকাবেলা করে মৃত্যুবরণ করলে শহীদ হিসেবে মার্যাদা লাভ করবে।

ধর্ম যুদ্ধের বিষয়ের সাথে জঙ্গিরা নিজেদের তৈরি মতবাদ মিশ্রিত করে এমনভাবে উপস্থাপন করে যে, ‘ইসলামের বিরুদ্ধ কেউ কাজ করলেই তাকে হত্যা করা জায়েজ।’ হত্যা করতে গিয়ে কেউ মৃত্যুবরণ করলে ‘শহীদের মর্যাদা’ পেয়ে ‘বেহেস্ত নিশ্চিত’ বলে ভ্রান্ত ধারণা শিক্ষা দেয়।

ধর্মভীরু, গরিব, যুবকরা তাদের বলামতে বেহেস্তে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে কতো দ্রুত সেখানে যাবে, তার দিনক্ষণ গুনতে থাকে।

জঙ্গিদের দক্ষ প্রশিক্ষকরা এ বেহেস্তের যাওয়ার বিষয়টিকে কোরআন হাদিসের আয়াত উল্লেখ করে বয়ান দিয়ে এমন পরিবেশ তৈরি করে, (যাহা মেডিটেশন পদ্ধতিকেও হার মানায়) বেহেস্ত যেন তাদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

আত্মঘাতি জঙ্গি সদস্য আমার প্রিয় ভাইদের বলি বেহেস্ত যদি এতো সহজে পাওয়া যেতো তাহলে তারা (প্রশিক্ষকরা) কি করছে? যুক্তি হলো তারা প্রশিক্ষক তারা ‘শহীদ’ হলে ‘ইসলাম’ রক্ষা করবে কে? সবাইতো প্রশিক্ষক নয়। তাহলে তার পরিবারের সদস্যদের দিয়ে আত্মঘাতি কার্যক্রম শুরু করুক?

এমন ঘটনা আছে কি? তবে আছে সুবিধাজনক লোভনীয় স্থানে। বেহেশত এতো সহজে পাওয়া গেলে বিশে^র কোনো মুসলমান ঘরে বসে থাকতো না। সবাই জঙ্গি দলে যোগ দেয়ার জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমে পড়তো।

২য় পর্বের লেখা জঙ্গি দমনে করণীয় সম্পর্কে পড়ুন- নো জঙ্গি বাট মানি : করণীয় নয় নিজেই করুন

 লেখক- উপ-পরিদর্শক, গোয়েন্দা শাখা, চাঁদপুর।

——————
: আপডেট, বাংলাদেশ সম ১১ : ৫৯ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Leave a Reply