Home / শিক্ষাঙ্গন / এইচএসসি উত্তীর্ণরা ‘বুঝেশুনে’ ভর্তি হোন ৪৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে
এইচএসসি উত্তীর্ণরা বুঝেশুনে ভর্তি হোন ৪৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে

এইচএসসি উত্তীর্ণরা ‘বুঝেশুনে’ ভর্তি হোন ৪৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে

বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ৪৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এই ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮টিতেই ভর্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে।

সাফ বলে দিয়েছে, এসব ঝামেলাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কোনো শিক্ষার্থী বিপদে পড়লে এর দায় নেবে না ইউজিসি।

বর্তমানে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এইচএসসি উত্তীর্ণরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। ২৩ জুলাই এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। এখন এসব শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর জন্য নানা টোপ দেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কোনো প্রকার প্রলোভনে শিক্ষার্থীরা না পড়েন সেজন্য ইউজিসি আগেভাগেই সতর্ক থাকতে বলেছে।

ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ জানিয়েছে, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ঝামেলা রয়েছে সেগুলো হলো- ইবাইস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, কুইন্স ইউনিভার্সিটি, গণবিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি না পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, কেরানীগঞ্জের রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জের রূপায়ন এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আনোয়ার খান মডার্ন ইউনিভার্সিটি।

ইউজিসি বলেছে, আদালতের স্থগিতাদেশ, বিচারাধীন, অননুমোদিত ক্যাম্পাস এবং বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজ নিয়ে দ্ব›দ্ব নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে ১৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হওয়াকেই সবচেয়ে ভালো বলেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদন দেয়া হলেও এখনো শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেয়া হয়নি। এরফলে এই ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রমই চালাতে পারছে না। সবমিলিয়ে এই ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে শিক্ষার্থীরা ঠকে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে ইউজিসি। এ কারণে ইউজিসি সতর্কবার্তা প্রচার করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে বলেছে।

বাকি ২৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানে উপাচার্য নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীেেদর অর্জিত ডিগ্রির সার্টিফিকেটে মূল স্বাক্ষরকারী কর্তৃপক্ষ উপাচার্য। উপাচার্য না থাকলে সেই সনদে সই করবে কে? এজন্য এসব বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হতেও যাচাইবাছাইয়ের পরামর্শ দিয়েছে ইউজিসি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ইউজিসির এই সতর্কবার্তা গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রচার হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সেখানে সংক্ষেপে করণীয় বার্তা দেয়া আছে। এমনকী ভর্তির আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইটও দেখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কমিশনের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত ব্যাখা দেয়া আছে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, জনসচেতনতা তৈরির জন্য আমরা এই সতর্কবার্তা প্রচার করেছি।

ইবাইস ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে ইউজিসি বলছে, এই ইউনিভার্সিটিতে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্ব›দ্ব রয়েছে। বোর্ড অব ট্রাস্টিজ দুই ভাগে বিভক্ত। একে অপরের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে। দ্বন্দ্ব নিরসন করে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কমিশন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও একটি গ্রুপ আদালতে মামলা করে কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছে। ফলে ইবাইস ইউনিভার্সিটি বিভিন্ন ঝামেলাযুক্ত। এখানে ভর্তি হতে হলে অবশ্যই ইউজিসির সতর্কবার্তা আমলে নেয়া উচিত।

বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ২০০৬ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হয়। সরকার থেকে বন্ধ করে দেয়ার পর উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে চলছে আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ঢাকার বারিধারা-নদ্দার ৫৪/১ প্রগতি সরণি ঠিকানায় শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারবে এই এ ইউনিভার্সিটি।

কিন্তু ইউজিসি বলেছে, এই ঠিকানায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোনো আবেদন পায়নি কমিশন। অননুমোদিত ক্যাম্পাস নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, দি পিপল্স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্ব›দ্ব এবং এ নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে ৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এগুলো হচ্ছে- ইবাইস ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি।

কমিশন বলেছে, ৫টি ইউনিভার্সিটিকে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি দেয়া হয়নি এখনো। এগুলো হচ্ছে- কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, কেরানীগঞ্জের রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জের রূপায়ন এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আনোয়ার খান মডার্ন ইউনিভার্সিটি।

কুইন্স ইউনিভার্সিটির বিষয়ে ইউজিসি বলেছেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সরকার বন্ধ করার পরও বিশেষ বিবেচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে এক বছরের জন্য সাময়িকভাবে শর্তসাপেক্ষে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় শর্ত দেয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে কুইন্স ইউনিভার্সিটি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।

গণবিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, গণবিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত প্রোগ্রামগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ার জন্য গত ২৬ এপ্রিল বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে ইউজিসি। ওই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করে। ওই রিটের রায় পক্ষে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে গণবিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।

উপাচার্য প্রসঙ্গে ইউজিসি থেকে বলা হয়েছে, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৭টিতে উপাচার্য, ২৬টিতে উপ-উপাচার্য এবং ৪০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করছেন।

এ ছাড়া কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা, ক্যাম্পাস, স্টাডি সেন্টার স্থাপন কিংবা পরিচালনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা ইউজিসি অনুমোদন দেয়নি। এজন্য এসব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে প্রতারণার শিকার না হওয়ার জন্য সতর্ক করেছে ইউজিসি।

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১ : ৫৫ পিএম, ৯ আগস্ট ২০১৭, বুধবার
এইউ

Leave a Reply